কেয়া গাছের উপকারিতা জেনে অবাক হবেন!

কেয়া গাছের উপকারিতা জেনে অবাক হবেন!

কেয়া গাছ এমন একটি উদ্ভিদ যা শুধুমাত্র তার সুন্দর ফুলের জন্য নয়, বরং তার বহুবিধ ঔষধি উপকারিতা এবং অন্যান্য ব্যবহারের জন্যও পরিচিত। এই ব্লগ পোস্টে, আমরা কেয়া গাছের বিভিন্ন দিকগুলি অন্বেষণ করব, যা এর পরিচয়, পুষ্টিগুণ, ঔষধি উপকারিতা, ঔষধ হিসাবে ব্যবহার, অন্যান্য ব্যবহার এবং রোপণ ও চাষের পদ্ধতিগুলি অন্তর্ভুক্ত করে। এই পোস্টের মাধ্যমে, আপনি এই বহুমুখী গাছটি সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান লাভ করবেন এবং আপনার স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রায় এর সম্ভাব্য সুবিধাগুলি সম্পর্কেও জানতে পারবেন।

কেয়া গাছের পরিচয়

কেয়া গাছ আমাদের দেশের খুব পরিচিত একটি ফলদ গাছ। সাধারণত গ্রামাঞ্চলে দেখা যায়। কেয়ার গাছ অন্যান্য ফলের গাছের তুলনায় তুলনামূলকভাবে ছোট। পুরনো গাছের উচ্চতা ৪-৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। কেয়ার গাছের পাতা লম্বাটে এবং তুলনামূলকভাবে চওড়া। পাতার কিনারা আলোকবর্জিত। ফুল হয় শীতকালে। ফুলের রং সাদা। কেয়ার ফল দেখতে অনেকটা কিম্বের মত। এটি ডিম্বাকার বা লম্বাটে আকৃতির হয়। ফলের রং সবুজ। পাকলে ফলটি হলুদ বা লালচে হলুদ হয়ে যায়। ভেতরে বেশ কিছু ছোট কালো বীজ থাকে। কেয়া ফল গরমে খাওয়ার জন্য একটি সুস্বাদু ফল। এই ফলের স্বাদ খানিকটা টক মিষ্টি। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ফলটি স্কারভি রোগ প্রতিরোধে কার্যকর। তাছাড়াও কেয়া ফল ডায়রিয়া, পেটের গোলযোগসহ হজম সংক্রান্ত সমস্যা দূর করতেও সহায়ক।

কেয়া গাছের পুষ্টিগুণ

এই কেয়া গাছ এমনই একটি গাছ, যা এর পুষ্টিগুণের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত। এই গাছের পাতা, ফুল এবং বাকল, সবকিছুই বিভিন্ন উপকারী উপাদানে ভরপুর। কেয়া গাছের পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও পাতায় আছে ভিটামিন এ, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কেয়ার ফুলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে ফ্রি রেডিক্যালের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও ফুলে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, কেয়ার বাকলে রয়েছে ট্যানিন, যা হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। তাইতো বলা যায়, কেয়া গাছের নানা অংশের পুষ্টিগুণ স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

See also  খালাতো বোনকে বিয়ে করার সুবিধা-অসুবিধা: জানুন আগেই

কেয়া গাছের ঔষধি উপকারিতা

কেয়া, একটি চিরসবুজ গাছ যা দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়। এই গাছটির বিভিন্ন অংশ, যেমন পাতা, ফুল, বাকল এবং শিকড়, বহু শতাব্দী ধরে আয়ুর্বেদিক এবং লোক ওষুধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কেয়া গাছের প্রধান ঔষধি উপকারিতাগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য: কেয়া গাছের পাতা এবং ফুলে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যৌগ রয়েছে যা গাঁটের ব্যথা, সোজা এবং ফোলা কমানোতে সাহায্য করতে পারে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য: কেয়া গাছের বাকলে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়।
  • অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য: কেয়া গাছের পাতা এবং বাকলে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল যৌগ রয়েছে যা ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং ভাইরাসের বৃদ্ধি বাধা দিতে সাহায্য করতে পারে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে।
  • হজমে উন্নতি: কেয়া গাছের পাতা হজমে উন্নতি করতে এবং পেটের সমস্যা, যেমন অম্বল এবং ডায়রিয়া, উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: কেয়া গাছের ফুলের নির্যাসে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমানোর বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

কেয়া গাছের ব্যবহার ওষুধ হিসেবে

কেয়া গাছ তুত গাছেরই একটি প্রজাতি। এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম মোরাস ইন্ডিকা। আমাদের দেশসহ ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মিয়ানমার সহ বিভিন্ন দেশে কেয়া গাছের চাষ হয়। এর পাতা, ফুল ও ফল খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে কেয়া গাছের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় এর ওষুধি গুণের জন্য।

এই কেয়া গাছের পাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান। যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। কেয়া গাছের পাতা ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, ক্যান্সার এবং আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। এছাড়াও কেয়া গাছের পাতা ওজন কমাতে, হজমশক্তি উন্নত করতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সহায়ক।

See also  বাংলাদেশে 5G কবে আসছে? 5G নেটওয়ার্কের সুবিধা সমূহ সম্পর্কে জানুন

কেয়া গাছের অন্যান্য ব্যবহার

এই কেয়া গাছের ফল, পাতা ছাড়াও এর অন্যান্য অংশও নানাবিধ ভাবে ব্যবহার করা হয়। কেয়া গাছের ছাল থেকে পাওয়া যায় রাবার এবং রজন, যা নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়। কেয়া গাছের শিকড় থেকে পাওয়া যায় ঔষধ, যা নানাবিধ রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। কেয়া গাছের কাঠ অত্যন্ত শক্ত এবং টেকসই, যা নানাবিধ কাঠের কাজে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও কেয়া গাছের ফুল ব্যবহার করা হয় সজ্জার কাজে এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে।

কেয়া গাছ রোপণ ও চাষ

কেয়া গাছ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী গাছ যা প্রায় সারা ভারতজুড়ে জন্মে। এটি একটি বহুবর্ষজীবি সপুষ্পক উদ্ভিদ যা মেলিয়াসি পরিবারের অন্তর্গত। এটি একটি পর্ণমোচী গাছ যা 15-20 মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কেয়া গাছের পাতা তালিকাসজ্জাযুক্ত এবং গাঢ় সবুজ রঙের হয়। এর ফুল গুল্মাকারে জন্মায় এবং মஞ்ச রঙের হয়। কেয়া গাছের ফলটি একটি বৃত্তাকার ক্যাপসুল যা ভিতরে বীজ ধারণ করে।

এই সহজেই বীজ থেকে চাষ করা যায়। বীজগুলো বসন্ত বা শরতে রোপণ করা যেতে পারে। বীজ রোপণের জন্য ভালোভাবে নিষ্কাশিত এবং সামান্য অম্লীয় মাটি প্রয়োজন। বীজগুলো প্রায় 1 সেন্টিমিটার গভীরতায় এবং প্রায় 30 সেন্টিমিটার দূরত্বে রোপণ করা উচিত। বীজ রোপণের পরে, মাটিকে স্যাঁতসেঁতে রাখতে হবে কিন্তু অতিরিক্ত জল দেওয়া যাবে না।

কেয়া গাছ খুব কম রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন। এটি একটি খরা সহিষ্ণু গাছ যা শুষ্ক পরিস্থিতিতেও বেঁচে থাকতে পারে। তবে, এটি সর্বোত্তমভাবে আংশিক ছায়ায় এবং ভালোভাবে নিষ্কাশিত মাটিতে জন্মায়। কেয়া গাছকে বছরে একবার সার দিতে হবে। সার হিসাবে, সুষম এনপিকে সার ব্যবহার করা যেতে পারে।

গাছের অনেকগুলি ঔষধি গুণ রয়েছে। এর ছাল, পাতা এবং ফুল রক্তশুদ্ধিকরণ, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের জন্য ব্যবহৃত হয়। কেয়া গাছের ছালে মেলিয়াজেনিন নামক একটি যৌগ রয়েছে যা ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। কেয়া গাছের পাতা রক্তচাপ কমাতে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। কেয়া গাছের ফুল অ্যালার্জির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

See also  কেশরের গুণাগুণ: স্বাস্থ্য ও ত্বকের যাদুকরী উপাদান

কেয়া গাছ একটি মূল্যবান গাছ যা ঔষধ, কাঠ এবং শোভার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি কম রক্ষণাবেক্ষণের গাছ যা যে কোনও বাগানে বা ল্যান্ডস্কেপে চাষ করা সহজ। কেয়া গাছের অনেকগুলি ঔষধি গুণ রয়েছে এবং এটি রক্তশুদ্ধি, প্রদাহ হ্রাস এবং ব্যাকটেরিয়া মারার জন্য ব্যবহৃত হয়।

Shadnan Avatar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *