কে প্রথম নিউট্রন আবিষ্কার করেন? জানুন অদৃশ্য এই কণার গল্প

কে প্রথম নিউট্রন আবিষ্কার করেন? জানুন অদৃশ্য এই কণার গল্প

নিউট্রন আবিষ্কারের গল্প শুরু হয় ১৯৩২ সালে। তখন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত পদার্থবিদ জেমস চ্যাডউইক পরমাণুর নিউক্লিয়াস নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তিনি আলফা কণা দিয়ে বেরিলিয়াম নামক একটি মৌলের নিউক্লিয়াসকে আক্রমণ করছিলেন এবং পর্যবেক্ষণ করছিলেন ফলাফল। তিনি আশা করেছিলেন কিছু প্রোটন নির্গত হবে, কিন্তু এর পরিবর্তে তিনি একটি নতুন কণা দেখতে পেলেন যা ভরের দিক দিয়ে প্রোটনের প্রায় সমান কিন্তু চার্জহীন।

চ্যাডউইক এই নতুন কণাকে নিউট্রন নাম দেন, যার অর্থ “চার্জহীন”। তিনি বুঝতে পারলেন যে নিউট্রন নিউক্লিয়াসের অংশ এবং এটি পরমাণুর ভরের জন্য দায়ী। এই আবিষ্কার পরমাণুর গঠন সম্পর্কে আমাদের বোঝার জন্য একটি বড় অগ্রগতি ছিল এবং এর জন্য চ্যাডউইক ১৯৩৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।

নিউট্রনের আবিষ্কার পরমাণু বিদ্যুৎ এবং পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নের মতো ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি বর্তমানে চিকিৎসা, শিল্প এবং গবেষণার কাজেও ব্যবহৃত হয়।

জেমস চ্যাডউইক: নিউট্রনের আবিষ্কর্তা

বিশ শতকের পদার্থবিদ্যার ইতিহাসে নিউট্রনের আবিষ্কার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল। এবং এই আবিষ্কারের পেছনে ছিলেন বিখ্যাত ইংরেজ পদার্থবিদ জেমস চ্যাডউইক।

আমি, একজন পদার্থবিদ হিসেবে, নিউট্রনের আবিষ্কারের গল্পটি বহুবার পড়েছি এবং প্রতিবারই আমার মধ্যে আশ্চর্যের সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৩২ সালে বিখ্যাত আলফা কণা বিক্ষেপণ পরীক্ষার সময় চ্যাডউইক এই মৌলিক কণাটি আবিষ্কার করেন। তাঁর পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, যখন আলফা কণা বেরিলিয়াম নিউক্লিয়াসের সঙ্গে সংঘর্ষ করে, তখন এক ধরনের নিউক্লিয় প্রতিক্রিয়া ঘটে, যার ফলে একটি নতুন কণা নির্গত হয়। এই কণাটির ভর প্রায় প্রোটনের সমান ছিল, কিন্তু এটির কোন চার্জ ছিল না। চ্যাডউইক এই কণাটিকে নিউট্রন নাম দেন।

নিউট্রনের আবিষ্কার পারমাণবিক পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছিল। এটি পরমাণুর কেন্দ্রের গঠন বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং পারমাণবিক শক্তির উন্নয়নকে সম্ভব করেছিল। নিউট্রনের আবিষ্কারের জন্য চ্যাডউইককে ১৯৩৫ সালে পদার্থবিদ্যার নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

See also  (জেনে রাখুন) হেলিকপ্টার কে আবিষ্কার করেছেন? কবে? কোন দেশে?

নিউট্রন আবিষ্কারের পরীক্ষা

নিউক্লিয়াসের গঠন সম্পর্কে বোঝার জন্য নিউট্রনের আবিষ্কার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল। ১৯৩২ সালে জেমস চ্যাডউইক এই মৌলিক কণাটি আবিষ্কার করেন।

চ্যাডউইক বেরিলিয়ামকে আলফা কণা দিয়ে বোমাবর্ষণ করেছিলেন। নির্গত বিকিরণের প্রকৃতি পরীক্ষা করে, তিনি দেখতে পান যে এটি গামা রশ্মি বা প্রোটনের মতো পরিচিত কোনও বিকিরণ নয়। পরিবর্তে, এটি এমন একটি কণা ছিল যার ভর প্রোটনের প্রায় সমান, তবে চার্জ ছিল না। তিনি এই কণাকে “নিউট্রন” নাম দিয়েছিলেন, ল্যাটিন শব্দ “নিউট্রাল” থেকে, কারণ এর চার্জ ছিল না।

নিউট্রনের আবিষ্কার নিউক্লিয়াসের গঠন সম্পর্কে আমাদের বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি দেখিয়েছিল যে নিউক্লিয়াস শুধুমাত্র প্রোটন দ্বারা গঠিত নয়, বরং নিউট্রনও রয়েছে। নিউট্রনের উপস্থিতি পারমাণবিক ভর এবং পারমাণবিক সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যা করেছে। এটি পরমাণুর শক্তিকেন্দ্রের বিক্রিয়াগুলি বুঝতেও সাহায্য করেছে, যার ফলে পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।

নিউট্রনের বৈশিষ্ট্য

নিউট্রন হল একটি মৌলিক কণা যা পরমাণুর নিউক্লিয়াসে প্রোটনের সাথে থাকে৷ এটি একটি নিরপেক্ষ কণা যার কোন চার্জ নেই৷ নিউট্রনের ভর প্রোটনের ভরের প্রায় সমান৷ নিউট্রন এবং প্রোটন একসাথে একটি পরমাণুর পারমাণবিক ভর নির্ধারণ করে৷ নিউট্রন পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে একসাথে ধরে রাখতে সাহায্য করে, কেননা প্রোটনগুলোর ধনাত্মক চার্জ একে অপরকে বিকর্ষণ করে৷ নিউট্রন শক্তিশালী নিউক্লিয়ার বল দ্বারা একত্রে আবদ্ধ থাকে, যা তাদেরকে প্রোটন থেকে পৃথক হওয়া থেকে বিরত রাখে৷ নিউট্রন নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেমন পারমাণবিক বিভাজন এবং পারমাণবিক সংযোজন৷

নিউট্রনের ব্যবহার

নিউট্রন হল মৌলিক কণা যাদের কোন চার্জ থাকে না। এটি প্রোটন এবং ইলেকট্রন দ্বারা গঠিত পরমাণুর নিউক্লিয়াসে পাওয়া যায়। নিউট্রন অত্যন্ত ভেদনশীল কণা, যা অন্যান্য উপাদানের সাথে সহজেই প্রতিক্রিয়া করতে পারে। এই বৈশিষ্ট্যটি এটিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপযোগী করে তোলে।

See also  ভারতের আসার নতুন জলপথ আবিষ্কারকারী: অজানা গল্প ও প্রভাব

উদাহরণস্বরূপ, নিউট্রনকে পারমাণবিক চুল্লীতে ব্যবহার করা হয় যেখানে এটি পারমাণবিক শৃঙ্খল বিক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। এটি পরমাণু বোমা তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়, যেখানে এটি বিস্ফোরণ তৈরি করার জন্য দুটি পারমাণবিক নিউক্লিয়াসকে গলিয়ে দেয়।

নিউট্রনকে চিকিৎসা ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, নিউট্রন থেরাপি হল এক ধরনের রেডিওথেরাপি যা নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি সার্জারি বা অন্যান্য চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত ভেদনশীল অঙ্গগুলিতে অবস্থিত টিউমারের চিকিৎসার জন্যও ব্যবহৃত হতে পারে।

এছাড়াও, নিউট্রনকে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, নিউট্রন স্কেটারিং হল একটি কৌশল যা উপাদানগুলির আণবিক গঠন অধ্যয়ন করতে ব্যবহৃত হয়। এটি পরমাণুর চারপাশের চৌম্বকীয় ক্ষেত্রগুলি অধ্যয়ন করতেও ব্যবহৃত হতে পারে।

উপসংহার

নিউট্রন আবিষ্কার করেছিলেন স্যার জেমস চ্যাডউইক। ১৯৩২ সালে নিউট্রন প্রকাশের জন্য তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি রাদারফোর্ডের শিক্ষার্থী এবং বিশিষ্ট পরমাণু পদার্থবিদ ছিলেন। চ্যাডউইক বিখ্যাত গোল্ড ফয়েল পরীক্ষায় রাদারফোর্ডের সাথে কাজ করেছিলেন, যেখানে আলফা কণার স্ক্যাটারিং পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল, যা পরমাণুর নিউক্লিয়াস মডেলের দিকে পরিচালিত করেছিল। নিউট্রনের আবিষ্কার নিউক্লিয়ার ফিজিক্স এবং পরমাণু বোমার বিকাশকে সম্ভব করে তোলে। তিনি এই আবিষ্কারের জন্য ১৯৩৫ সালে নাইট উপাধি পেয়েছিলেন।

Tipu Avatar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *