চট্টগ্রামের লোকেরে কেন ‘নারকাটা’ বলা হয়? জানবেন আজই!

চট্টগ্রামের লোকেরে কেন ‘নারকাটা’ বলা হয়? জানবেন আজই!

চট্টগ্রামের মানুষ, তাদের সংস্কৃতি এবং জীবনযাপন নিয়ে অনেক কথাই বলা হয়। তবে, সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা হয় তা হলো তাদের নেতিবাচক দিক। হ্যাঁ, চট্টগ্রামের মানুষের কিছু নেতিবাচক দিক আছে, যা অনেক সময় তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। এই নেতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে একটি হলো ‘নারকাটা’ শব্দটি। এটি একটি অপমানজনক শব্দ যা চট্টগ্রামের নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর মানুষকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এবং দুর্ভাগ্যবশত, এই নারকাটা শব্দের প্রভাবে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

আমি এই ব্লগ পোস্টে চট্টগ্রামের মানুষের নেতিবাচক দিক, বিশেষ করে ‘নারকাটা’ শব্দের উৎপত্তি, কিভাবে চট্টগ্রামের লোকেরা নারকাটা হয়ে উঠেছে, নারকাটাদের বৈশিষ্ট্য, সমাজে নারকাটাদের প্রভাব এবং এই নারকাটা চরিত্রের সমাধান নিয়ে আলোচনা করব। আমি আশা করি এই পোস্ট আপনাকে চট্টগ্রামের মানুষের এই নেতিবাচক দিকটি বুঝতে সাহায্য করবে এবং এই সমস্যা সমাধানে আপনি কিভাবে অবদান রাখতে পারেন তা উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে।

নারকাটা’ শব্দের উৎপত্তি

চট্টগ্রামের মানুষের ‘নারকাটা’ বলে কেন? আসলে চট্টগ্রামের মানুষেরা অনেক অন্যরকম। তাদের কথা বলার ভঙ্গি, খাওয়া দাওয়ার অভ্যাস সবকিছুতেই আছে একটা স্বাতন্ত্র্য। আর সেই স্বাতন্ত্র্যেরই প্রমাণ তাদের ভাষা। চট্টগ্রামের মানুষেরা অনেক শব্দই ব্যবহার করে যা অন্য অঞ্চলের মানুষেরা বুঝতে পারে না। এমনই একটি শব্দ হলো ‘নারকাটা’।

‘নারকাটা’ শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে অনেক তত্ত্ব রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, শব্দটি এসেছে ‘নারক’ শব্দ থেকে। নারক মানে জাহান্নাম। আর এই শব্দটির সঙ্গে ‘কাটা’ শব্দ যুক্ত হয়ে ‘নারকাটা’ হয়েছে। এর অর্থ হলো জাহান্নাম কাটা। অর্থাৎ এমন কিছু করা যা খুব কষ্টের কাজ।

আবার কেউ কেউ মনে করেন, ‘নারকাটা’ শব্দটি এসেছে ‘নারিকেল’ শব্দ থেকে। নারিকেল মানে নারকেল। আর এই শব্দটির সঙ্গে ‘কাটা’ শব্দ যুক্ত হয়ে ‘নারকাটা’ হয়েছে। এর অর্থ হলো নারকেল কাটা। অর্থাৎ এমন কিছু করা যা খুব কঠিন কাজ।

See also  প্রকৃত উন্নয়ন: সংজ্ঞা, উপাদান এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর প্রয়োগ

যে কোনো তত্ত্বই সঠিক হোক না কেন, ‘নারকাটা’ শব্দটি চট্টগ্রামের মানুষের কাছে একটি খুব পরিচিত শব্দ। তারা এই শব্দটি দিয়ে যে কোনো কঠিন বা কষ্টকর কাজকে বোঝায়। তাই যদি কখনো কোনো চট্টগ্রামিয়ার কাছে ‘নারকাটা’ শব্দটি শুনতে পান, তাহলে বুঝবেন যে তিনি কোনো কঠিন কাজের কথা বলছেন।

কিভাবে চট্টগ্রামের লোকেরা নারকাটা হয়ে উঠেছে

চট্টগ্রামের মানুষের ‘নারকাটা’ বলে কেন? আসলে চট্টগ্রামের লোকেরা খুব বেশি নারকেল খায়। নারকেল তাদের প্রধান খাবারের একটি অংশ। তারা নারকেলের পানি, নারকেলের দুধ, নারকেলের তেল এবং নারকেলের মাংস সবই খায়। এই নারকেল খাওয়ার কারণে তাদের শরীরে নারকেলের গন্ধ থাকে। এই গন্ধের জন্যই তাদেরকে ‘নারকাটা’ বলা হয়।

চট্টগ্রামের নারকাটাদের বৈশিষ্ট্য

চট্টগ্রামের মানুষের ‘নারকাটা’ বলে কেন? আসলে কী কারণ রয়েছে?

চট্টগ্রামের মানুষদের ‘নারকাটা’ বলে ডাকা হয়। কিন্তু কেন? কী কারণ রয়েছে এর পেছনে? প্রচলিত কিছু কাহিনি থেকে জানা যায়, চট্টগ্রামের এক সময়ের অধিবাসীরা ‘খেরকার’ রাজবংশের ছিলেন। তারা মূলত ‘নারিকেল বন’ এ বাস করতেন। তারা নারিকেলের দুধ, খোল ও শাঁস দিয়ে নানান খাবার বানিয়ে খেতেন। এমনকি, তাদের ঘরবাড়িও ছিল নারিকেল গাছ দিয়ে তৈরি।

এই ‘নারিকেল’ শব্দটি ক্রমেই পরিবর্তিত হয়ে ‘নারকাটা’ হয়ে যায়। যা আজ চট্টগ্রামের মানুষের পরিচয় বহন করে। তাই, যখন কেউ ‘নারকাটা’ বলে ডাকে, তখন তা চট্টগ্রামের মানুষের অতীত, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত। এটি একটি স্নেহের ডাক যা তাদের গৌরবময় অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

চট্টগ্রামের নারকাটাদের প্রভাবে সমাজে প্রভাব

চট্টগ্রামের বাসিন্দারা কেন ‘নারকাটা’ নামে পরিচিত, তার কারণ নিয়ে অনেক কথাই প্রচলিত। সেই সব কথার সত্যতার খোঁজে আমাদের ঘুরে ফিরে যেতে হবে ১৮শ’ শতাব্দীতে। ইতিহাস বলছে, সেই সময় চট্টগ্রাম ছিল মূলত রাখাইন সম্প্রদায়ের আবাস। পরবর্তীকালে এখানে মগ আর আরাকানি বসতি স্থাপন করে। আর এদেরই হাত ধরে চট্টগ্রামের জীবনযাত্রায় প্রবেশ করে নারকেলের খোল থেকে তৈরি করা পাত্র ‘নারকাট’। রাখাইন এবং আরাকানি সম্প্রদায়ের মানুষ ঘোষণার কাজে এই নারকাট ব্যবহার করতেন। ওই সময় থেকেই চট্টগ্রামের মানুষের মুখে মুখে নারকাটা নামের প্রচলন ঘটে। আজও এর ব্যবহার শুধু ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ নেই। মাটি খননের কাজেও এর ব্যবহার আছে।

See also  ঢাকায় হিন্দুরা বেশি বসবাস করেন কোথায়?

চট্টগ্রামের মানুষের নারকাটা চরিত্রের সমাধান

চট্টগ্রামের লোকেদের ‘নারকাটা’ বলা হয় কারণ তাদের মধ্যে সাহস ও দুঃসাহসের একটি অনন্য সংমিশ্রণ রয়েছে। তারা তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে প্রসিদ্ধ এবং প্রয়োজন হলে বিপদের মুখোমুখি হতে কখনও দ্বিধা করে না। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে অন্য এলাকার লোকেরা তাদের ‘নারকাটা’ বলে ডাকে, যার অর্থ ‘দুর্ধর্ষ যোদ্ধা’।

চট্টগ্রামের মানুষের সাহসের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তারা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম বাঙালি যারা বিদ্রোহ শুরু করেছিল। এরই ফলে পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। চট্টগ্রামের মানুষ এই যুদ্ধেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

চট্টগ্রামের মানুষদের দুঃসাহসের জন্যও সুপরিচিত। তারা বরাবরই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। কিন্তু তারা কখনই হাল ছাড়েনি। সুপার সাইক্লোন সিডর এবং ঘূর্ণিঝড় মোরা এগুলোর কিছু সাম্প্রতিক উদাহরণ। এই ঘটনাগুলোর সময় চট্টগ্রামের মানুষ তাদের সাহস ও দৃঢ়তা দ্বারা বিশ্বকে অবাক করেছিল।

Susmita Avatar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *