চর্যাপদের ভাষা সন্ধ্যাভাষা কেন? রহস্য উন্মোচন

চর্যাপদের ভাষা সন্ধ্যাভাষা কেন? রহস্য উন্মোচন

আমি একজন বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী। আমার এই আর্টিকেলটি চর্যাপদের ভাষা নিয়ে। চর্যাপদ হলো বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম সাহিত্যকীর্তি। এটি প্রায় দশম শতকের রচনা বলে মনে করা হয়। চর্যাপদের ভাষা অত্যন্ত প্রাচীন এবং এতে অনেক অচেনা শব্দ রয়েছে। এই আর্টিকেলটিতে আমি চর্যাপদের ভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

আমি প্রথমে সন্ধ্যা ভাষা সম্পর্কে আলোচনা করবো। সন্ধ্যা ভাষা হলো এক ধরনের রহস্যময় ভাষা যা তান্ত্রিকরা ব্যবহার করতো। চর্যাপদের ভাষায় সন্ধ্যা ভাষার প্রভাব রয়েছে। এছাড়াও, আমি চর্যাপদের ভাষার অন্যান্য বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও আলোচনা করবো। চর্যাপদের ভাষা কীভাবে আধুনিক বাংলা ভাষার উৎপত্তিতে ভূমিকা রেখেছে তাও আলোচনা করা হবে।

চর্যাপদ ও তার ভাষা: একটি পরিচয়

চর্যাপদের ভাষা কে ‘সন্ধ্যা ভাষা’ বলা হয় কারণ এটি একটি মিশ্র ভাষা যা সংস্কৃত, প্রাকৃত ও পালা ভাষার মিশ্রণ। এই ভাষাটি প্রধানত চর্যাপদ নামক বৌদ্ধ ধর্মীয় গানে ব্যবহৃত হয়েছে, যা মনে করা হয় 10ম থেকে 12শ শতাব্দীর মধ্যে রচিত হয়েছিল। চর্যাপদের ভাষায় প্রচুর সংস্কৃত শব্দ রয়েছে, তবে এতে প্রাকৃত ও পালা ভাষার প্রভাবও স্পষ্ট। এই ভাষার অনেক শব্দ আধুনিক বাংলা ভাষায়ও ব্যবহৃত হয়। চর্যাপদের ভাষাটি মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি বাংলা ভাষার বিকাশকে বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সন্ধ্যা ভাষার সংজ্ঞা ও এর উৎপত্তি

সন্ধ্যা ভাষা, যা চর্যাপদের ভাষা, একটি মধ্যযুগীয় প্রাকৃত ভাষা যা ১০ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে বাংলা অঞ্চলে প্রচলিত ছিল। এই ভাষাকে “সন্ধ্যা ভাষা” বলা হয় কারণ এটি সংস্কৃত এবং অপভ্রংশ ভাষার মধ্যবর্তী একটি সন্ধিকালীন ভাষা হিসাবে দেখা হয়।

চর্যাপদগুলো বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নমুনা; সেগুলো এই সন্ধ্যা ভাষায় লিখিত হয়েছে। এই চর্যাপদগুলো ছিল বৌদ্ধ দোহা গান, যা সাধারণত সহজিয়া অনুসারীরা গাইতেন। চর্যাপদের ভাষাটি তাদের অঞ্চলীয় প্রকৃতির জন্য উল্লেখযোগ্য। এতে সংস্কৃত শব্দভান্ডারের পাশাপাশি পালি, অপভ্রংশ এবং স্থানীয় বাংলা উপাদানও রয়েছে। এই ভাষার ব্যাকরণও বিশেষ, যা সংস্কৃত এবং দেশজ প্রভাবগুলোর মিশ্রণ প্রদর্শন করে।

See also  আমার লেখা ‘নয়া চীন’ গ্রন্থের লেখকের পরিচয় | অবাক করা তথ্য

সন্ধ্যা ভাষার গুরুত্ব অনেক দিক থেকেই রয়েছে। প্রথমত, এটি বাংলা ভাষার একটি প্রাচীন পর্যায়ের প্রতিনিধিত্ব করে, যা পরবর্তীতে আধুনিক বাংলা ভাষার বিকাশে অবদান রাখে। দ্বিতীয়ত, চর্যাপদগুলো বৌদ্ধ ধর্ম এবং দোহা গানের প্রাচীন প্রথা সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। তৃতীয়ত, সন্ধ্যা ভাষার গবেষণা ভাষাতত্ত্ববিদ এবং ভাষা ইতিহাসবিদদের ভাষার বিকাশ ও পরিবর্তনের উপর আলোকপাত করতে সহায়তা করে।

চর্যাপদের ভাষায় সন্ধ্যা ভাষার প্রভাব

চর্যাপদের ভাষাকে ‘সন্ধ্যা ভাষা’ বলা হয় কারণ এটি মধ্যযুগীয় বাংলা ভাষার একটি রূপ যা সন্ধি যুগের প্রতিফলন ঘটায়। সন্ধি যুগ হলো প্রাচীন ভারতীয় ভাষা সংস্কৃত থেকে মধ্যযুগীয় ভাষাগুলি, যেমন বাংলা, হিন্দি ইত্যাদির উদ্ভবের সময়কাল। এই সময়ের মধ্যে ভাষার অনেক পরিবর্তন ঘটেছিল, যার মধ্যে একটি ছিল স্বরধ্বনির পরিবর্তন। চর্যাপদের ভাষায়, অনেক সংস্কৃত স্বরধ্বনি মধ্যযুগীয় বাংলা স্বরধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সংস্কৃতের ‘অ’ ধ্বনি বাংলায় ‘o’ হয়েছে, এবং ‘e’ ধ্বনি ‘ai’ হয়েছে। এই স্বরধ্বনি পরিবর্তনগুলি চর্যাপদের ভাষাকে একটি স্বতন্ত্র রূপ দেয়, যা এটিকে সংস্কৃত থেকে আলাদা করে এবং মধ্যযুগীয় বাংলার সূচনা করে। তাই, চর্যাপদের ভাষাকে ‘সন্ধ্যা ভাষা’ বলা হয় কারণ এটি সন্ধি যুগের ভাষান্তর প্রক্রিয়ার প্রতিনিধিত্ব করে।

‘সন্ধ্যা ভাষা’ নামকরণের কারণসমূহ

চর্যাপদের ভাষাকে ‘সন্ধ্যা ভাষা’ বলা হয় কারণ এই ভাষাটি প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের সন্ধিকালের একটি ভাষা, যা মধ্যযুগের শুরুতে বিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষার জন্ম দেয়। এই সন্ধিকালে প্রাকৃত এবং অপভ্রংশ ভাষাগুলির মিশ্রণে চর্যাপদ রচিত হয়েছিল।

প্রাচীন সংস্কৃত এবং পালি ভাষা থেকে ধার করা শব্দগুলির পাশাপাশি এই ভাষায় স্থানীয় অপভ্রংশ এবং প্রাকৃত শব্দও ব্যবহৃত হয়েছিল। ফলস্বরূপ, চর্যাপদের ভাষাটি একটি সংকর ভাষা, যা প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় ভাষার উপাদানগুলির মিশ্রণ ঘটায়। এই ভাষাগত বৈশিষ্ট্যের কারণে, চর্যাপদের ভাষাকে “সন্ধ্যা ভাষা” বলা হয়, কারণ এটি দুটি ভাষাগত যুগের সন্ধিক্ষণে রচিত হয়েছিল।

See also  বেগম রোকেয়া: বাংলা সাহিত্যের অগ্রদূত যাঁর অবদান অসামান্য

চর্যাপদের ভাষার অন্যান্য বৈশিষ্ট্য

চর্যাপদের ভাষা সন্ধ্যা ভাষা হিসেবে পরিচিত। এর পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, চর্যাপদে প্রচুর সংখ্যক সন্ধি রয়েছে। সন্ধি বলতে দুটি শব্দের মিলিত হওয়া বোঝায়। উদাহরণস্বরূপ, “মায়ের” শব্দটি “মা” এবং “এর” শব্দের সন্ধি। চর্যাপদে অনেক শব্দই এভাবে সন্ধিযুক্ত। এছাড়াও, চর্যাপদে অনেক অপভ্রংশ শব্দ রয়েছে। অপভ্রংশ শব্দ বলতে সংস্কৃত শব্দের অপভ্রংশ বা বিকৃত রূপকে বোঝায়। উদাহরণস্বরূপ, “হেতু” শব্দের অপভ্রংশ রূপ “হেউ”। চর্যাপদের ভাষায় এই ধরনের অপভ্রংশ শব্দ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এছাড়াও, চর্যাপদের ভাষায় অনেক প্রাকৃত শব্দ রয়েছে। প্রাকৃত শব্দ বলতে সংস্কৃত ভাষা থেকে উদ্ভূত কিন্তু সংস্কৃত নয় এমন ভাষাকে বোঝায়। উদাহরণস্বরূপ, “জল” শব্দটি একটি প্রাকৃত শব্দ। চর্যাপদের ভাষায় এই ধরনের প্রাকৃত শব্দ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এই সব কারণে চর্যাপদের ভাষাকে ‘সন্ধ্যা ভাষা’ বলা হয়।

উপসংহার

চর্যাপদের ভাষা সন্ধ্যা ভাষা হিসেবে পরিচিত। এর পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, চর্যাপদে প্রচুর সংখ্যক সন্ধি রয়েছে। সন্ধি বলতে দুটি শব্দের মিলিত হওয়া বোঝায়। উদাহরণস্বরূপ, “মায়ের” শব্দটি “মা” এবং “এর” শব্দের সন্ধি। চর্যাপদে অনেক শব্দই এভাবে সন্ধিযুক্ত। এছাড়াও, চর্যাপদে অনেক অপভ্রংশ শব্দ রয়েছে। অপভ্রংশ শব্দ বলতে সংস্কৃত শব্দের অপভ্রংশ বা বিকৃত রূপকে বোঝায়। উদাহরণস্বরূপ, “হেতু” শব্দের অপভ্রংশ রূপ “হেউ”। চর্যাপদের ভাষায় এই ধরনের অপভ্রংশ শব্দ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এছাড়াও, চর্যাপদের ভাষায় অনেক প্রাকৃত শব্দ রয়েছে। প্রাকৃত শব্দ বলতে সংস্কৃত ভাষা থেকে উদ্ভূত কিন্তু সংস্কৃত নয় এমন ভাষাকে বোঝায়। উদাহরণস্বরূপ, “জল” শব্দটি একটি প্রাকৃত শব্দ। চর্যাপদের ভাষায় এই ধরনের প্রাকৃত শব্দ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এই সব কারণে চর্যাপদের ভাষাকে ‘সন্ধ্যা ভাষা’ বলা হয়।

Rani Avatar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *