চোখের নজরদোষ থেকে বাঁচার দোয়া ও আকৃষ্টকারী উপায়

চোখের নজরদোষ থেকে বাঁচার দোয়া ও আকৃষ্টকারী উপায়

আমাদের সমাজে নজরদোষ বা দুষ্টচোখ একটি বহুল প্রচলিত বিশ্বাস।বহু যুগ ধরে চলে আসা এই বিশ্বাসের সাথে জড়িত আছে আমাদের সংস্কৃতি,ধর্ম আর বিশ্বাসের নানান দিক। নজরদোষ মানে হলো কারো দৃষ্টিতে এমন কিছু শক্তি রয়েছে যা অন্য কারো উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি কেউ হিংসা বা অসৎ দৃষ্টিতে কাউকে দেখলেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এই নেতিবাচক প্রভাবের ফলে কারো শারীরিক অসুস্থতা,মানসিক সমস্যা এমনকি আর্থিক ক্ষতিও হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। এছাড়াও বিশেষ কিছু লোককে নজরদোষ করার ক্ষেত্রে বেশি প্রবন বলে মনে করা হয়। যেমন- আকর্ষণীয় নারী বা পুরুষ,নতুন জন্ম নেওয়া শিশু,সফল বা ধনী ব্যক্তি ইত্যাদি। নজরদোষের প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য আমাদের সমাজে নানা রকম পদ্ধতি প্রচলিত আছে। কিছু কিছু ঘরোয়া উপায়ে নজরদোষ প্রতিরোধ করা যায় বলে বিশ্বাস করা হয়। আবার কিছু কিছু আধ্যাত্মিক পদ্ধতির মাধ্যমেও নজরদোষের প্রতিকার করা যায় বলে মনে করা হয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নজরদোষ সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং নিজেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করা।

দুষ্ট চোখ বা নজরদোষ

ের কথা অনেকেই শুনেছেন, কিন্তু কীভাবে এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, তা কমই জানা। তবে নজরদোষ থেকে বাঁচার কার্যকরী একটি দোয়া আছে। দোয়াটি হলো—

আল্লাহুম্মা সাচ্ছিলি ওয়া জিল্লাহি মিন শর্রি মা আহাজুরু ওয়া মা আখশা৷

অর্থ—

হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে শরণাপন্ন হচ্ছি আপনার প্রতিশোধের হাত থেকে এবং আমি যা ভয় পাচ্ছি ও যা আশঙ্কা করছি তার হাত থেকেও।

নজরদোষের লক্ষণ

নজরদোষ এমন একটি বিষয় যা অনেক মানুষ বিশ্বাস করে। তবে এটি সম্পর্কে সঠিক কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। তবে অনেক মানুষের দাবি, তারা নজরদোষের শিকার হয়েছেন। এই নজরদোষের কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেমন:

  • শারীরিক অসুস্থতা, যেমন মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, পেটব্যথা ইত্যাদি।
  • মানসিক অসুস্থতা, যেমন দুশ্চিন্তা, ভয়, অস্থিরতা ইত্যাদি।
  • আর্থিক ক্ষতি, যেমন ব্যবসায় লস, চাকরি হারানো ইত্যাদি।
  • সম্পর্কের সমস্যা, যেমন বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া, বিবাহবিচ্ছেদ ইত্যাদি।
See also  যে যন্ত্রণাকে বুকে নিয়ে আমরা এগিয়ে যাই | দুঃখের কারণ | কেন আমরা দুঃখ পাই |

যদি তোমার মনে হয় যে তুমি নজরদোষের শিকার হয়েছ, তাহলে কিছু পদক্ষেপ নিতে পার। যেমন:

  • সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পাঠ করো।
  • মাথার ওপর সাতবার ফুঁ দাও।
  • লবণের পানি দিয়ে স্নান করো।
  • একটা লেবু কেটে দুভাগ করে মাথার ওপর ঘুরাও এবং তারপর সেটা ফেলে দাও।

এসব পদক্ষেপ নেওয়ার পর তুমি ভালো বোধ করবে বলে আশা করা হয়। তবে, যদি তোমার অবস্থার উন্নতি না হয়, তাহলে একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করো।

চোখের নজরদোষ থেকে বাঁচার প্রার্থনা

চোখের নজরদোষ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত। নজরদোষ হলো শয়তানি কাজ যা চোখ দিয়ে করা হয়, যা মানুষের স্বাস্থ্য বা সম্পদকে ক্ষতি করে। নজরদোষ থেকে বাঁচার জন্য আমরা আল্লাহর কাছে নিম্নলিখিত দোয়াটি করতে পারি:

“আউজু বি কালিমাতিল্লাহিত তাম্মাহ, মিন কুল্লি শায়তানিন ওয়া হাম্মাহ, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাহ”

অর্থ: “আমি সকল শয়তান, কীট এবং হিংসুটে দৃষ্টি থেকে আল্লাহর নিখুঁত কথার দ্বারা আশ্রয় চাই।”

এই দোয়াটি রাসূল (সাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে এবং এটি নজরদোষের বিরুদ্ধে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটি প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় তিনবার পাঠ করা উচিত। এটি আপনার পকেটে একটি তাবিজ হিসাবে রাখা যেতে পারে বা আপনার বাড়ির প্রবেশদ্বারে টাঙানো যেতে পারে। নজরদোষের বিরুদ্ধে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই দোয়াটি পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আপনাকে শয়তান এবং হিংসুটে দৃষ্টি থেকে রক্ষা করে।

নজরদোষ প্রতিরোধের ঘরোয়া উপায়

নজরদোষের ফলে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। নজর দোষের শিকার হওয়ার পরে মাথা ঘোরা, শরীরের কোনো অঙ্গ হঠাৎ ব্যথা করা, বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা এ সব লক্ষন দেখা দিতে পারে। তবে আমরা খুব সহজ কিছু উপায় অবলম্বন করে নজরদোষ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।

See also  খন্দকার বংশকে ফকির ডাকার রহস্য: অজানা ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে দেখা

প্রথমত, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে সবচেয়ে আগে আল্লাহর নাম নিয়ে পানি খান। এটি শরীর থেকে নেতিবাচক শক্তি দূর করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। দ্বিতীয়ত, নজর দোষের হাত থেকে বাঁচার জন্য নিয়মিত নামাজ পড়ুন। কারণ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করি এবং আল্লাহর রহমত বরকত লাভ করি। তৃতীয়ত, সব সময় ঘরে ঘরে সুরা রহমান, সুরা ইয়াসিন ইত্যাদি তেলাওয়াত করুন। এতে ঘরের পরিবেশ নির্মল থাকে এবং নেতিবাচক শক্তি দূর হয়। চতুর্থত, বাম হাতের তালুতে তিনবার কুল হুওয়াল্লাহু আল্লাহু আহাদ পরুন। এরপর উভয় হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে স্পর্শ করুন। এভাবে প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় করুন। শেষে আল্লাহর কাছে নজরদোষ থেকে বাঁচার জন্য দোয়া করুন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে নজরদোষের হাত থেকে হেফাজত করুন।

নজরদোষের আধ্যাত্মিক প্রতিকার

নজরদোষের কবল থেকে বাঁচতে চোখের বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়াটি পাঠ করা একটি কার্যকরী আধ্যাত্মিক প্রতিকার। এই দোয়াটি মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার একটি উপায়, যিনি সবকিছুর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখেন। দোয়াটি পাঠ করার সময়, আপনাকে আন্তরিক হতে হবে এবং বিশ্বাস করতে হবে যে আল্লাহ আপনার প্রার্থনা শুনবেন এবং আপনাকে রক্ষা করবেন। দোয়াটি এইভাবে পড়তে হবে: “আউযু বি কালিমাতিল্লাহিত তাম্মাহ মিন শর মা খালাক”। এই দোয়াটি নিয়মিত পাঠ করলে ইনশাল্লাহ আপনি চোখের বদ নজর থেকে রক্ষা পাবেন। এছাড়াও, আপনি মাশাল্লাহ বলে আপনার প্রশংসা প্রকাশ করতে পারেন, যা নজরদোষ প্রতিরোধের আরেকটি উপায়।

শিশুদের নজরদোষ থেকে রক্ষা

নজরদোষের কবল থেকে বাঁচতে চোখের বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়াটি পাঠ করা একটি কার্যকরী আধ্যাত্মিক প্রতিকার। এই দোয়াটি মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার একটি উপায়, যিনি সবকিছুর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখেন। দোয়াটি পাঠ করার সময়, আপনাকে আন্তরিক হতে হবে এবং বিশ্বাস করতে হবে যে আল্লাহ আপনার প্রার্থনা শুনবেন এবং আপনাকে রক্ষা করবেন। দোয়াটি এইভাবে পড়তে হবে: “আউযু বি কালিমাতিল্লাহিত তাম্মাহ মিন শর মা খালাক”। এই দোয়াটি নিয়মিত পাঠ করলে ইনশাল্লাহ আপনি চোখের বদ নজর থেকে রক্ষা পাবেন। এছাড়াও, আপনি মাশাল্লাহ বলে আপনার প্রশংসা প্রকাশ করতে পারেন, যা নজরদোষ প্রতিরোধের আরেকটি উপায়।

See also  বি এড কোর্স: কেন আপনার এটি করতে হবে?

Ucchal Avatar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *