বাঙালি জাতির ইতিহাসে ছয় দফা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি ১৯৫০ সালের শুরুর দিকে পাকিস্তানের শাসকদের কাছে আওয়ামী লীগের দ্বারা একটি দাবি হিসাবে উত্থাপিত হয়েছিল এবং তা বহু বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।
এই নিবন্ধে আমরা ছয় দফাকে পুরোপুরিভাবে তুলে ধরব এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের উপর এর প্রভাবগুলি অনুসন্ধান করব। আমরা এর উত্থান, জনপ্রিয়তা এবং এর অসহযোগ আন্দোলনকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে তাও পরীক্ষা করব। আমরা দেখব যে ছয় দফার অসাধারণ প্রভাব আজও বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনুভূত হয়।
ছয় দফা কি ছিল এবং কেন একে ‘মুক্তির সনদ’ বলা হয়
ছয় দফা ছিল ১৯৬৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের জন্য উপস্থাপিত একটি রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কর্মসূচি। এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাবস্থা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য অনুঘটক হিসাবে পরিচিত। একে “মুক্তির সনদ” হিসাবে অভিহিত করা হয় কারণ এটি পূর্ব পাকিস্তানিদের অসন্তোষের প্রকাশ এবং পশ্চিম পাকিস্তানীদের শোষণ থেকে মুক্তির দাবি প্রকাশ করে।
ছয় দফাটি হচ্ছে: (1) কেন্দ্রীয় সরকার শুধুমাত্র পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা দেখভাল করবে। (2) পূর্ব পাকিস্তানে একটি পৃথক মুদ্রা এবং একটি পৃথক রিজার্ভ ব্যাংক। (3) পূর্ব পাকিস্তানের জন্য একটি পৃথক রাজস্ব সংগ্রহ ও ব্যয়ের ব্যবস্থা। (4) পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক বিদেশি বিনিময় হিসাব। (5) পূর্ব পাকিস্তানের নিজস্ব সামরিক বাহিনী। (6) পূর্ব পাকিস্তানের জন্য একটি পৃথক সংবিধান।
ছয় দফা আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রস্তাব করেছিলেন। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে। ফলস্বরূপ, ছয় দফা একটি রাজনৈতিক বিরোধের সৃষ্টি করে যা রক্তক্ষয়ী ভাষা আন্দোলন এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিকে পরিচালিত করে।
১৯৫২ সালের জাতীয় ভাষা আন্দোলনের ভূমিকা
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ছয় দফা ছিল বাঙালির আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের ইতিহাসে এক মাইলফলক। এই ছয় দফার দাবিতে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি থেকে শুরু করে শিক্ষা ও অর্থনীতির স্বায়ত্তশাসনের দাবিও ছিল। তাই ছয় দফা বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে বিবেচিত হয়।
প্রথমত, ছয় দফা বাঙালিদের ভাষাগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেছিল। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি মূলত বাঙালিদের স্বাভিমান এবং ভাষার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ছিল। ছয় দফা এই দাবি পূরণের মাধ্যমে বাঙালিদের মর্যাদা ও স্বীকৃতি এনে দিয়েছিল।
দ্বিতীয়ত, ছয় দফা বাঙালিদের শিক্ষা ও অর্থনীতির স্বায়ত্তশাসনের দাবি উত্থাপন করেছিল। মাতৃভাষায় শিক্ষার দাবি বাঙালিদের শিক্ষাঙ্গনে বাংলা ভাষার প্রসার ঘটিয়েছিল এবং শিক্ষায় বাঙালিদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করেছিল। অনুরূপভাবে, অর্থনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি বাঙালিদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল।
তৃতীয়ত, ছয় দফা বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি শক্তিশালী করেছিল। ভাষা আন্দোলনের সময় সব শ্রেণী, পেশা ও ধর্মের মানুষ একত্রে লড়াই করেছিল। এই ঐক্য এবং সংহতি পরবর্তীকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
সর্বোপরি, ১৯৫২ সালের জাতীয় ভাষা আন্দোলনের ছয় দফা বাঙালি জাতির জন্য একটি মুক্তির সনদ ছিল। এটি বাঙালিদের ভাষাগত, শিক্ষাগত এবং অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেছিল, তাদের ঐক্য ও সংহতি শক্তিশালী করেছিল এবং শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ प्रशस्त করেছিল।
ছয় দফার উদ্ভব ও জনপ্রিয়তা
ছয় দফা বাঙালির ‘মুক্তির সনদ’ হিসেবে পরিচিত, কারণ এটি ছিল বাঙালি জাতির মুক্তি ও স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ১৯৪৮ সালের জুন মাসে জিন্নাহর মুসলিম লীগ সরকারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে, তৎকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ সোহরাওয়ার্দী ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে দাবি তোলেন। এই দাবিগুলোই পরে ‘ছয় দফা’ নামে পরিচিত হয়।
ছয় দফার মূল সারমর্ম ছিল বাংলাকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান, কেন্দ্রীয় আইনসভায় বাংলাকে স্থায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রদান, বাংলার অর্থনীতির ওপর বাঙালিদের নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তার দায়িত্ব বাংলার নিজস্ব বাহিনীকে দেওয়া, বাংলাকে পৃথক মুদ্রা এবং বাংলার সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগে বাঙালিদের অগ্রাধিকার দেওয়া।
ছয় দফা প্রকাশিত হওয়ার পর তা দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগ সরকার এই দাবিগুলো মানতে অস্বীকৃতি জানালেও, বাঙালি জাতিবাদীদের কাছে এটি একটি মুক্তির মন্ত্রে পরিণত হয়। ছয় দফার দাবিকে সমর্থন করে বাংলা জুড়ে ছাত্র-যুবক, শ্রমিক-কৃষক, মেধাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই আন্দোলন অবশেষে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে মিলেমিশে গিয়ে পাকিস্তানের অবনতির সূচনা ঘটে।
আওয়ামী লীগের ছয় দফা দাবির প্রভাব
আওয়ামী লীগের ছয় দফা দাবির সবচেয়ে বড় প্রভাব ছিল বাঙালির মুক্তি সনদ হিসেবে এর ভূমিকা। এই দাবিগুলি বাঙালিদের অধিকার এবং স্বাধীনতা আদায়ের আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করেছিল। বহু বছর ধরে ব্রিটিশ শাসনের অধীনে অবদমিত হওয়া বাঙালিদেরকে এই দাবিগুলি একটি আশার আলো দেখিয়েছিল।
ছয় দফার মধ্যে স্বায়ত্তশাসন ও সশস্ত্র বাহিনী গঠনের দাবি অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা বাঙালিদেরকে নিজেদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করার এবং তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষমতা দেবে। ভাষাগত অধিকারের দাবিটি বাঙালিদের তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলার এবং তাদের সংস্কৃতির চর্চা করার গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
ছয় দফা দাবিগুলি বাঙালিদের মধ্যে একটি শক্তিশালী আন্দোলন তৈরি করেছিল এবং তাদের মুক্তির সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছিল। এই দাবিগুলি বাঙালিদের অধিকারের জন্য তাদের কণ্ঠস্বর উত্থাপন করতে এবং তাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করেছিল।
ছয় দফা অসহযোগ আন্দোলন ও পাকিস্তান সরকারের প্রতিক্রিয়া
ছয় দফা অসহযোগ আন্দোলন বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি বিশেষ অধ্যায়। এই আন্দোলনই ছিল পাকিস্তানের শাসন থেকে মুক্তির প্রথম ধাপ। এই আন্দোলন বাঙালিদের আত্মনির্ভরতার অনুভূতি জাগিয়ে তুলেছিল।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের শহীদদের রক্তে রঞ্জিত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক শেষে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ছয় দফা দাবি জানান। সেই ছয় দফা আন্দোলনকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানবাসীরা ‘মুক্তির সনদ’ হিসেবে অভিহিত করেছিল। কারণ, এই আন্দোলনই ছিল পাকিস্তানের অ несправедливостьতার বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির প্রথম সংগঠিত প্রতিবাদ।
পাকিস্তান সরকার ছয় দফা আন্দোলনের প্রতি কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। আন্দোলনকারীদের উপর নির্মম অত্যাচার, গ্রেফতার এবং গুলি চালানোর ঘটনাও ঘটেছিল। কিন্তু এই অত্যাচার-নির্যাতন বাঙালি জাতিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বরং, এটি তাদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে আরও প্রবল করেছিল।
ছয় দফা আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই আন্দোলন বাঙালি জাতির মন থেকে পাকিস্তানের প্রতি বিশ্বাস ও আশা দূর করে দিয়েছিল। এই আন্দোলনই বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
ছয় দফা কিভাবে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে আকৃতি দিয়েছে
ছয় দফা অসহযোগ আন্দোলন বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি বিশেষ অধ্যায়। এই আন্দোলনই ছিল পাকিস্তানের শাসন থেকে মুক্তির প্রথম ধাপ। এই আন্দোলন বাঙালিদের আত্মনির্ভরতার অনুভূতি জাগিয়ে তুলেছিল।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের শহীদদের রক্তে রঞ্জিত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক শেষে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ছয় দফা দাবি জানান। সেই ছয় দফা আন্দোলনকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানবাসীরা ‘মুক্তির সনদ’ হিসেবে অভিহিত করেছিল। কারণ, এই আন্দোলনই ছিল পাকিস্তানের অ несправедливостьতার বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির প্রথম সংগঠিত প্রতিবাদ।
পাকিস্তান সরকার ছয় দফা আন্দোলনের প্রতি কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। আন্দোলনকারীদের উপর নির্মম অত্যাচার, গ্রেফতার এবং গুলি চালানোর ঘটনাও ঘটেছিল। কিন্তু এই অত্যাচার-নির্যাতন বাঙালি জাতিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বরং, এটি তাদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে আরও প্রবল করেছিল।
ছয় দফা আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই আন্দোলন বাঙালি জাতির মন থেকে পাকিস্তানের প্রতি বিশ্বাস ও আশা দূর করে দিয়েছিল। এই আন্দোলনই বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
Leave a Reply