তড়িৎ ঋণাত্মকতা: কেন একে পর্যায়বৃত্ত ধর্ম বলা হয়?

তড়িৎ ঋণাত্মকতা: কেন একে পর্যায়বৃত্ত ধর্ম বলা হয়?

আজকের আর্টিকেলে, আমি ভৌত জগতের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা নিয়ে আলোচনা করব, যা হল বিদ্যুৎ ঋণাত্মকতা। এর অর্থ কী, এটি কীভাবে কাজ করে এবং আমাদের চারপাশের বিশ্বের উপর এর কী প্রভাব রয়েছে তার একটি সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দেব।

বিদ্যুৎ ঋণাত্মকতা একটি উপাদানের পরমাণুর নিউক্লিয়াসের প্রতি আকর্ষণ করার শক্তিকে বোঝায়। অন্য কথায়, এটি একটি উপাদানের ইলেকট্রন আকর্ষণ করার ক্ষমতা। বিদ্যুৎ ঋণাত্মকতা একটি নির্দিষ্ট আকারের স্কেলের তুলনায় পরিমাপ করা হয়, যা পলদের স্কেল হিসাবে পরিচিত। এই স্কেলটিতে, বিদ্যুৎ ঋণাত্মকতার মান 0 থেকে 4.0 পর্যন্ত বিস্তৃত। যত বেশি একটি উপাদানের বিদ্যুৎ ঋণাত্মকতা, তত বেশি এটি ইলেকট্রন আকর্ষণ করে।

বিদ্যুৎ ঋণাত্মকতা রসায়নে একটি মৌলিক ধারণা কারণ এটি উপাদানগুলির বন্ধন প্রবণতা এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার ধরণকে ব্যাখ্যা করতে ব্যবহৃত হয়। আজকের আর্টিকেলে, আমরা বিদ্যুৎ ঋণাত্মকতার ধারণাকে আরও বিশদভাবে পরীক্ষা করব, বিভিন্ন উপাদানগুলির বিদ্যুৎ ঋণাত্মকতাগুলি কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা অন্বেষণ করব এবং এটি রাসায়নিক বন্ধন এবং রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলিকে কীভাবে প্রভাবিত করে তা আলোচনা করব।

ওখানকার ঋণাত্মক অবস্থান

বিদ্যুৎ ঋণাত্মকতাকে পর্যায়বৃত্ত ধর্ম বলা হয় কারণ এটি পর্যায় সারণীতে মৌলগুলোর অবস্থানের উপর নির্ভর করে। যেহেতু পর্যায় সারণী একটি পর্যায়বৃত্ত প্যাটার্ন অনুসরণ করে, তাই বিদ্যুৎ ঋণাত্মকতাও পর্যায় অনুসারে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত, যত বামে ও উপরে একটি মৌল অবস্থিত হয়, তত বেশি তার বিদ্যুৎ ঋণাত্মকতা। উদাহরণস্বরূপ, ফ্লোরিন (F), পর্যায় সারণীর ডান দিকের শীর্ষে অবস্থিত, সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ঋণাত্মকতা 4.0 ধারণ করে। অন্যদিকে, সিজিয়াম (Cs), ডান দিকের নীচের অংশে অবস্থিত, সর্বনিম্ন বিদ্যুৎ ঋণাত্মকতা 0.7 ধারণ করে। এই পর্যায়বৃত্ত প্রবণতা বিদ্যুৎ ঋণাত্মকতাকে রাসায়নিক বন্ধন এবং অন্যান্য রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের পূর্বাভাস দিতে একটি মূল্যবান সরঞ্জাম হিসাবে কাজে লাগায়।

যে উপাদানগুলি ধাতব

তড়িৎ ঋণাত্মকতা পর্যাবৃত্ত ধর্ম কেন বলা হয় তা বুঝতে, প্রথমে আমাদের তড়িৎ ঋণাত্মকতা কী তা বুঝতে হবে। তড়িৎ ঋণাত্মকতা হলো একটি পরমাণুর একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য, যা পরমাণুর অন্য একটি পরমাণুর সাথে একটি রাসায়নিক বন্ধন গঠন করার ক্ষমতার পরিমাপ করে। যত বেশি তড়িৎ ঋণাত্মক একটি পরমাণু, তত বেশি এটি অন্য পরমাণুর ইলেকট্রনগুলিকে নিজের দিকে আকর্ষণ করতে সক্ষম।

See also  পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণ কেন সুষম তরণের উদাহরণ?

পর্যাবৃত্ত সারণিতে, তড়িৎ ঋণাত্মকতা সাধারণত ডানদিকে এবং উপরে বাড়তে দেখা যায়। এর কারণ হলো, যত আমরা ডানদিকে যাই, নিউক্লিয়াসের চার্জ বাড়ে, যা ইলেকট্রনগুলিকে নিউক্লিয়াসের দিকে আরও শক্ত করে আটকে রাখে। অন্য দিকে, যত আমরা উপরে যাই, পারমাণবিক ব্যাস হ্রাস পায়, যার ফলে নিউক্লিয়াস এবং ভ্যালেন্স ইলেকট্রনগুলির মধ্যে দূরত্ব কমে যায়। এই হ্রাসকৃত দূরত্ব ইলেকট্রনগুলিকে নিউক্লিয়াসের দ্বারা আরও শক্তভাবে আকর্ষণ করার অনুমতি দেয়, তাই তড়িৎ ঋণাত্মকতা বৃদ্ধি পায়।

পর্যাবৃত্ত সারণিতে তড়িৎ ঋণাত্মকতার এই পর্যায়বৃত্ত আচরণের কারণে, আমরা পরমাণুগুলির তড়িৎ ঋণাত্মকতাগুলি পূর্বাভাস করতে পারি এবং এর ফলে তারা কীভাবে রাসায়নিক বন্ধন গঠন করবে তাও পূর্বাভাস করতে পারি।

সাধারণত বাইরের ইলেকট্রনগুলি হারায়

সাধারণত বাইরের ইলেকট্রনগুলি হারায় এবং অক্টেট নিয়ম পূরণ করে স্থায়ী হয়। এ কারণে ধাতুর তড়িৎ ঋণাত্মকতা কম। অন্য দিকে অধাতুর দরকার হয় বাইরের শক্ত খোলকে ভেঙে তার বেশি সংখ্যক ইলেকট্রন গ্রহণ করে অক্টেট পূরণের। তাই অধাতুর তড়িৎ ঋণাত্মকতা বেশি থাকে। এজন্য তড়িৎ ঋণাত্মকতা পর্যায়ক ক্রমে বাম দিক থেকে ডান দিকে বাড়ে এবং উপর দিক থেকে নিচে দিকে কমে। হ্যালোজেন পরমাণুর তড়িৎ ঋণাত্মকতা সবচেয়ে বেশি। কারণ এগুলির বাইরের শক্ত খোলমণ্ডলে একটি করে ইলেকট্রন থাকে। তাই স্থায়ী হওয়ার জন্য তাদের দরকার হয় একটি মাত্র বাইরের ইলেকট্রন গ্রহণের।

যে উপাদানগুলি অধাতব

তড়িৎ ঋণাত্মকতা হল একটি পর্যাবৃত্ত ধর্ম। এর মানে হল যে রাসায়নিক মৌলসমূহের পর্যায় সারণীর মধ্যে তাদের অবস্থানের সাথে তাদের তড়িৎ ঋণাত্মকতা পরিবর্তিত হয়। সাধারণভাবে, একটি পর্যায় সারণীর একটি সারিতে বাম থেকে ডানে যাওয়ার সাথে সাথে তড়িৎ ঋণাত্মকতা বৃদ্ধি পায়। অন্য কথায়, একটি সারির মধ্যে সবচেয়ে তড়িৎ ঋণাত্মক মৌলটি হলো ডান দিকের সর্বশেষ মৌলটি।

একটি কলামে উপরে থেকে নিচে যাওয়ার সাথে সাথে তড়িৎ ঋণাত্মকতা সাধারণত হ্রাস পায়। এর কারণ হল যে একটি কলামে উপরে থেকে নিচে যাওয়ার সাথে সাথে পরমাণুর আকার বৃদ্ধি পায়। বৃহৎ পরমাণুগুলোর ভ্যালেন্স শেলগুলি নিউক্লিয়াস থেকে দূরে থাকে, যা তাদেরকে ভ্যালেন্স ইলেক্ট্রন হারাতে কম প্রবণ করে তোলে। এই হ্রাস করা প্রবণতা কিছু ব্যতিক্রমের সাথে দেখা যায়, যেমন অ্যালুমিনিয়াম এবং সিলিকন।

See also  উইলিয়াম কেরি: যে ব্যক্তি বাংলা ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করে ইতিহাস ঘটিয়েছিলেন

তড়িৎ ঋণাত্মকতা রাসায়নিক আবন্ধন বোঝার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এটি আমাদেরকে দুটি পরমাণুর মধ্যে আবন্ধনের ধরন (আয়নিক, সহযোজী, বা ধাতব) নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। এটি আণবিক জ্যামিতি এবং পদার্থের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলিকে বুঝতেও সাহায্য করে।

সাধারণত বাইরের ইলেকট্রনগুলি লাভ করে

এবং তড়িৎ ঋণাত্মকতা হলো একটি পর্যায়বৃত্ত ধর্ম। প্রতিটি মৌলের নিজস্ব তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান রয়েছে, যা সারণীতে বাম থেকে ডান এবং উপর থেকে নিচের দিকে সরানোর সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ফ্লোরিনের সবচেয়ে বেশি তড়িৎ ঋণাত্মকতা রয়েছে, যখন সিজিয়ামের সবচেয়ে কম তড়িৎ ঋণাত্মকতা রয়েছে।

এই প্রবণতাটি নিউক্লিয়াস থেকে বাইরের শেল ইলেকট্রনগুলির দূরত্ব এবং নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ শক্তির কারণে ঘটে। পর্যায় সারণীর বাম দিকের মৌলগুলির বাইরের ইলেকট্রনগুলি নিউক্লিয়াস থেকে দূরে অবস্থিত, যার ফলে নিউক্লিয়াসের দুর্বল আকর্ষণ এবং তাই কম তড়িৎ ঋণাত্মকতা থাকে। অন্যদিকে, পর্যায় সারণীর ডান দিকের মৌলগুলির বাইরের ইলেকট্রনগুলি নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি অবস্থিত, যার ফলে নিউক্লিয়াসের শক্তিশালী আকর্ষণ এবং তাই বেশি তড়িৎ ঋণাত্মকতা থাকে।

তড়িৎ ঋণাত্মকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম কারণ এটি একটি মৌলের রাসায়নিক বন্ধন এবং বিক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যগুলি নির্ধারণ করে। উচ্চ তড়িৎ ঋণাত্মক মৌলগুলি ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পছন্দ করে, যখন নিম্ন তড়িৎ ঋণাত্মক মৌলগুলি ইলেকট্রন দান করতে পছন্দ করে। এই পার্থক্যগুলি বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক বন্ধন তৈরি করে, যেমন আয়নিক বন্ধন এবং সহসংযোজক বন্ধন।

বিদ্যুৎ ঋণাত্মকতা

হল পর্যায়বৃত্ত ধর্ম কারণ এটি পর্যায়বৃত্ত সারণির মধ্যে একটি নির্দিষ্ট নমুনা অনুসরণ করে। পর্যায়গুলি (সারি) ডান দিকে যাওয়ার সাথে সাথে এবং গ্রুপগুলি (স্তম্ভ) নিচে যাওয়ার সাথে সাথে সাধারণত বৃদ্ধি পায়। এর কারণ হল, ডান দিকে যাওয়ার সাথে সাথে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের কাছে ইলেকট্রন আকর্ষণের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং নিচে যাওয়ার সাথে সাথেই শক্তির স্তর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, যা ইলেকট্রনকে নিউক্লিয়াস থেকে আরও দূরে অবস্থিত করে।

See also  পৃথিবীর কেন্দ্রে বস্তুর ত্বরণ কেন শূন্য? – সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা

এই নমুনাটি কিছু ব্যতিক্রম সহকারে দেখা যায়, যেমন নোবেল গ্যাসগুলি, যেগুলি সাধারণত অত্যন্ত কম থাকে কারণ তাদের ভ্যালেন্স শেলগুলি সম্পূর্ণ হয়। যাইহোক, র পর্যায়বৃত্ত প্রকৃতি রাসায়নিক বন্ধন এবং প্রতিক্রিয়াগুলিকে বুঝতে একটি মূল্যবান সরঞ্জাম প্রদান করে। এটি বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে আকর্ষণ এবং বিকর্ষণের শক্তিকে পূর্বাভাস করতে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এর ফলে এদের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলি নির্ধারণ করা যায়।

Shadnan Avatar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *