আমরা বাংলা ভাষায় বানান লিখতে গেলে প্রায়ই ‘ত্’ এবং ‘ৎ’ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে যাই। কখন ‘ত্’ লিখব, আর কখন ‘ৎ’ লিখব, তা বুঝতে পারা যায় না। তবে কিছু সহজ নিয়ম জানলেই এই বিভ্রান্তি কাটিয়ে উঠতে পারব। এই আর্টিকেলে আমি সেই নিয়মগুলোই আলোচনা করব।
এই আর্টিকেল থেকে আপনি জানতে পারবেন:
- বাংলা বানানে কখন ‘ত্’ এবং কখন ‘ৎ’ ব্যবহার করবেন
- ‘ত্’-এর বদলে ‘ৎ’ ব্যবহারের কারণসমূহ
- শব্দের শেষে ‘ত্’ এবং ‘ৎ’ ব্যবহারের নিয়ম
- যুক্তাক্ষরগুলিতে ‘ত্’ এবং ‘ৎ’ ব্যবহারের পার্থক্য
- ‘ত্’ এবং ‘ৎ’ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাধারণ ভুল এবং ব্যতিক্রম
- বাংলা বানানে ‘ত্’ এবং ‘ৎ’ ব্যবহারের সঠিকতা নিশ্চিত করার টিপস
বাংলা বানানে ‘ত্’-এর বদলে ‘ৎ’-এর ব্যবহার কী?
বাংলা ব্যাকরণে সবচেয়ে কঠিন ও জটিল বিষয়গুলির মধ্যে একটি হল “ত্”-এর জায়গায় “ৎ” ব্যবহার। এটি বুঝতে গেলে আমাদের প্রাচীন ভাষা সংস্কৃতের দিকে ফিরে যেতে হবে। সংস্কৃতে “ত্” এবং “ৎ” দুটি পৃথক ধ্বনি ছিল। “ত্” উচ্চারণ করা হত দাঁতের সাহায্যে, যখন “ৎ” উচ্চারণ করা হত তালুর সাহায্যে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পার্থক্যটি মুছে গেছে এবং বর্তমান বাংলা ভাষায় “ত্” এবং “ৎ” একই রকম উচ্চারণ করা হয়। তবে লেখার ক্ষেত্রে এখনও কিছু নিয়ম রয়েছে যার ভিত্তিতে “ত্” এবং “ৎ” ব্যবহার করা হয়। এই নিয়মগুলি জানা খুবই জরুরি, কারণ এটি ছাড়া বাংলা শব্দগুলি সঠিকভাবে লিখতে পারা যায় না।
‘ত্’-এর স্থলে ‘ৎ’-এর ব্যবহারের কারণসমূহ
বাংলা ভাষায় ‘ত্’-এর স্থলে ‘ৎ’-এর ব্যবহারের প্রধান কারণ হলো শব্দের উচ্চারণে সুবিধা এবং শব্দের সঠিক অর্থ প্রকাশ করা। যখন কোন শব্দের শেষে ‘ত্’ ধ্বনির পরে ‘অ’ বা ‘আ’ কার থাকে, তখন শব্দটি সহজে উচ্চারণ করার জন্য ‘ত্’-এর স্থলে ‘ৎ’ ব্যবহার করা হয়। যেমন, ‘পত’ শব্দটি ‘পৎ’ হিসাবে লেখা হয় কারণ ‘পত’ শব্দটি উচ্চারণ করা কঠিন, কিন্তু ‘পৎ’ শব্দটি সহজে উচ্চারণ করা যায়।
এছাড়াও, ‘ৎ’-এর ব্যবহার শব্দের সঠিক অর্থ প্রকাশ করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, ‘দেবতা’ শব্দটি ‘দেবত’ হিসাবে লেখা হলে এর অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়। ‘দেবত’ শব্দটির অর্থ ঈশ্বর, কিন্তু ‘দেবতা’ শব্দটির অর্থ ঈশ্বরের অনুচর। তাই শব্দের সঠিক অর্থ বোঝানোর জন্য ‘ত্’-এর স্থলে ‘ৎ’ ব্যবহার করা প্রয়োজন।
শব্দের শেষে ‘ত্’-এর বদলে ‘ৎ’-এর ব্যবহার
বাংলা ভাষায় ‘ত্’-এর স্থলে ‘ৎ’-এর ব্যবহারের প্রধান কারণ হলো শব্দের উচ্চারণে সুবিধা এবং শব্দের সঠিক অর্থ প্রকাশ করা। যখন কোন শব্দের শেষে ‘ত্’ ধ্বনির পরে ‘অ’ বা ‘আ’ কার থাকে, তখন শব্দটি সহজে উচ্চারণ করার জন্য ‘ত্’-এর স্থলে ‘ৎ’ ব্যবহার করা হয়। যেমন, ‘পত’ শব্দটি ‘পৎ’ হিসাবে লেখা হয় কারণ ‘পত’ শব্দটি উচ্চারণ করা কঠিন, কিন্তু ‘পৎ’ শব্দটি সহজে উচ্চারণ করা যায়।
এছাড়াও, ‘ৎ’-এর ব্যবহার শব্দের সঠিক অর্থ প্রকাশ করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, ‘দেবতা’ শব্দটি ‘দেবত’ হিসাবে লেখা হলে এর অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়। ‘দেবত’ শব্দটির অর্থ ঈশ্বর, কিন্তু ‘দেবতা’ শব্দটির অর্থ ঈশ্বরের অনুচর। তাই শব্দের সঠিক অর্থ বোঝানোর জন্য ‘ত্’-এর স্থলে ‘ৎ’ ব্যবহার করা প্রয়োজন।
যুক্তাক্ষরগুলিতে ‘ত্’-এর বদলে ‘ৎ’-এর ব্যবহার
যুক্তাক্ষরের ক্ষেত্রে বর্ণবিধির নিয়ম অনুযায়ী শব্দের অন্তিম দু’টি ব্যঞ্জনবর্ণকে যুক্ত করলে যে বর্ণের উচ্চারণ হয় সেই অনুযায়ী যুক্তাক্ষরটি লিখতে হয়। যেমন- ক+প = কপ (‘প’ বর্ণের উচ্চারণ) ক+চ = কচ্ছ (‘চ্ছ’ বর্ণের উচ্চারণ)। এখানে ফ-ধ-র-ল-জ-শ-ষ-হ-বর্ণগুলিকে মূলীয় বর্ণ বলা হয়। আর তক্র বা ত+কার বর্ণগুলি যুক্ত হলে মূলীয় বর্ণটিকে পূর্ণ উচ্চারণ করা হয়। যেমন- স্ত্রী, ক্রিয়া, লিখন ইত্যাদি। কিন্তু যুক্তাক্ষরটি যদি শব্দের মাঝখানে থাকে, অর্থাৎ তার পরে আর একটি বা একাধিক বর্ণ থাকে সেক্ষেত্রে ‘ত+কার’ বর্ণটি অ’কারে উচ্চারিত হয়। সেইজন্য এসব শব্দের ক্ষেত্রে ৎ-কার বর্ণের প্রয়োগ হয়। যেমন- পত্র, স্বর্ণ, মন্ত্র ইত্যাদি। এভাবেই যুক্তাক্ষরগুলিতে ত্রুটিমুক্তভাবে ‘ত্’-এর বদলে ‘ৎ’-এর ব্যবহার করতে হবে।
ব্যতিক্রম এবং সাধারণ ভুলের ক্ষেত্রে ‘ত্’-এর ব্যবহার
‘ত্’-এর পরিবর্তে ‘ৎ’-এর ব্যবহার নিয়ে আমাদের প্রায়সই বিভ্রান্তি দেখা দেয়। ‘ত্’ এর পরিবর্তে ‘ৎ’ ব্যবহারের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম এবং ব্যতিক্রম রয়েছে।
সাধারণতঃ বিভক্তি চিহ্নের পরে ‘ত্’ ব্যবহার করা হয়। যেমন- ঘরের, স্কুলের, খাতার। কিন্তু কয়েকটি নির্দিষ্ট বিভক্তি চিহ্নের পরে ‘ৎ’ ব্যবহার হয়। যেমন- কারণে, দ্বারা, পর্যন্ত।
এছাড়াও, কিছু ক্রিয়ামূলের পরেও ‘ৎ’ ব্যবহার হয়। যেমন- করিতে, চলিয়া, বসিয়া, দেইয়া, খাইয়া।
তবে কিছু ব্যতিক্রম ক্ষেত্রেও ‘ত্’ ব্যবহার করা হয়। যেমন- ‘কথাটা’ (বিভক্তি চিহ্ন থাকলেও), ‘অতি’ (ক্রিয়ামূল থাকলেও), ‘সমস্ত’, ‘সম্পূর্ণ’ (সংযুক্ত শব্দে)।
‘ত্’-এর পরিবর্তে ‘ৎ’ ব্যবহারের নিয়ম ও ব্যতিক্রম মনে রাখলে আমরা সঠিকভাবে বাংলা ভাষায় লিখতে পারব। তাই এই বিষয়টি ভালোভাবে বুঝে নেওয়া এবং লিখনের সময় প্রয়োগ করা জরুরি।
বাংলা বানানে ‘ত্’ ও ‘ৎ’ ব্যবহারের সঠিকতা নিশ্চিতকরণের টিপস
একাকার ধ্বনির চিহ্ন হিসেবে বাংলা বর্ণমালায় ব্যবহৃত হয় ‘ত্’ ও ‘ৎ’। এদের উচ্চারণ এক হলেও ব্যবহারে রয়েছে সূক্ষ্ম পার্থক্য। ‘ত্’-এর ব্যবহার প্রধানত শব্দের শেষে, যথা- তুমি, কত। অন্যদিকে, ‘ৎ’-এর ব্যবহার রয়েছে শব্দের মধ্যস্থলে, যথা- কতৃ, অত্র।
এ নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে মেনে চললেই শব্দের বানানে ‘ত্’ ও ‘ৎ’-এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হবে। যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে। যেমন- ‘তত্ত্ব’ ও ‘তত্ব’, ‘চিত্ত’ ও ‘চিৎ’, ‘সত্ত্বা’ ও ‘সৎ’ ইত্যাদি। এ ধরনের ব্যতিক্রম শব্দগুলো মনে রাখতে হবে।
‘ত্’ ও ‘ৎ’-এর ব্যবহারে সর্তক না হলে অর্থের বিকৃতি ঘটতে পারে। যেমন- ‘কত’ ও ‘কৎ’, ‘তুমি’ ও ‘তুৎ’ ইত্যাদি। তাই সঠিক বানান নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে অভিধান বা অনলাইন সম্পদও ব্যবহার করা যায়।
Leave a Reply