আন্তর্জাতিক বিবাহ আইন অনুসারে, দেশের বাইরে কোর্ট ম্যারেজ হল বিদেশী ভূমিতে আইনত বিবাহিত হওয়ার প্রক্রিয়া। বিশেষত দুজন নাগরিক বা প্রবাসী যাদের নিজ দেশে বিবাহিত হওয়া সম্ভব নয়, তাদের জন্য এই ব্যবস্থা একটি বরদান। দেশের বাইরে কোর্ট ম্যারেজের প্রক্রিয়াটি সহজ এবং সুবিধাজনক, যা দম্পতিদের তাদের বিবাহের আনুষ্ঠানিকতাগুলি দ্রুত ও সহজে সম্পূর্ণ করতে সহায়তা করে।
যদি আপনি বিদেশে বিবাহ করার পরিকল্পনা করছেন, তবে এই নিবন্ধটি আপনাকে এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য প্রদান করবে। আমি দেশের বাইরে কোর্ট ম্যারেজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেব, যার মধ্যে রয়েছে এর যোগ্যতা, আবেদন প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয় নথিপত্র, সাক্ষীর ভূমিকা এবং ফলাফল। এই নিবন্ধটি পড়ার পর, আপনি দেশের বাইরে কোর্ট ম্যারেজ সম্পর্কে সমস্ত কিছু জানবেন এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করতে পারবেন।
দেশের বাইরে কোর্ট ম্যারেজ কী?
দেশের বাইরে কোর্ট ম্যারেজ হল এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে দুই জন ব্যক্তি বিদেশের আইনের অধীনে সরকারি নিবন্ধকারীর সামনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত তাদের জন্য উপকারী হয় যারা দেশের বাইরে বসবাস করেন বা তাদের দেশে বিবাহের আইনী স্বীকৃতির অভাব রয়েছে।
বিদেশে কোর্ট ম্যারেজের প্রক্রিয়াটি সাধারণত দেশ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। তবে, সাধারণ পদক্ষেপগুলি সাধারণত নিম্নরূপ:
- বিবাহের ইচ্ছা প্রকাশ করা
- প্রয়োজনীয় দলিল জমা দেওয়া, যেমন পাসপোর্ট, জন্ম শংসাপত্র এবং বৈবাহিক অবস্থার প্রমাণ
- বিবাহের শপথপত্রে স্বাক্ষর করা
- নিবন্ধকারীর সামনে বিবাহের শপথ গ্রহণ করা
বিদেশে কোর্ট ম্যারেজ একটি আইনত বৈধ উপায় যা দুই জন ব্যক্তির বৈবাহিক অবস্থার স্বীকৃতি নিশ্চিত করে। তবে, নির্দিষ্ট দেশের আইন এবং প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত হওয়া জরুরি যাতে প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায়। এছাড়াও, বিদেশে কোর্ট ম্যারেজের আইনী প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যদি আপনি আপনার দেশে ফিরে আসার পরে আপনার বিবাহের স্বীকৃতি চান।
দেশের বাইরে কোর্ট ম্যারেজ করার যোগ্যতা
দেশের বাইরে কোর্ট ম্যারেজ করার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো এই লেখায়। কোর্ট ম্যারেজ এক ধরনের বিবাহ যেটি আইনত স্বীকৃত এবং কোর্টের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এটি নিবন্ধিত বিবাহ নামেও পরিচিত। সাধারণত, কোর্ট ম্যারেজ দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির মধ্যে সম্পন্ন হয় যাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এবং তারা বিবাহের জন্য আইনত যোগ্য। দেশের বাইরে কোর্ট ম্যারেজ করার জন্য, কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করা প্রয়োজন। প্রথমত, বিবাহিত হতে ইচ্ছুক উভয় পক্ষেরই আইনত প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। অর্থাৎ, তাদের বয়স कम से कम ১৮ বছর হতে হবে। দ্বিতীয়ত, তাদের মধ্যে কেউই আগে থেকেই বিবাহিত হতে পারে না। তৃতীয়ত, তারা একে অপরের নিকটাত্মীয় হতে পারে না, যেমন ভাই-বোন বা মা-বাবা। চতুর্থত, তাদের মধ্যে কেউই মানসিক অসুস্থতায় ভুগতে পারে না যা তাদের বিবাহের জন্য সম্মতি দেওয়ার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। পঞ্চমত, তাদের উভয়েরই বিবাহের জন্য স্বেচ্ছায় সম্মতি দিতে হবে। ষষ্ঠত, তাদের বিবাহের সময় অন্য কোনো আইনী বাধা থাকতে পারে না।
দেশের বাইরে কোর্ট ম্যারেজের আবেদন প্রক্রিয়া
দেশের বাইরে থেকে কোর্ট ম্যারেজ করার আবেদন প্রক্রিয়া কি?
যদি আপনি এবং আপনার সঙ্গী দুজনেই বাংলাদেশি নাগরিক হন এবং বিদেশে অবস্থান করছেন, তাহলে আপনারা বিদেশ থেকেই কোর্ট ম্যারেজের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই প্রক্রিয়ার জন্য আপনাদের নিম্নলিখিত কাগজপত্র জমা দিতে হবে:
- আপনার এবং আপনার সঙ্গীর পাসপোর্টের কপি
- আপনাদের জন্ম সার্টিফিকেট
- আপনাদের সর্বশেষ বৈবাহিক অবস্থার প্রমাণ (যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন)
- দুইজন সাক্ষীর স্বাক্ষরযুক্ত একটি অ্যাফিডেভিট, যা আপনাদের বৈবাহিক অবস্থা এবং সম্পর্কের প্রকৃতি নিশ্চিত করবে
- আপনার এবং আপনার সঙ্গীর তিনটি করে রঙিন পাসপোর্ট আকারের ছবি
আবেদনপত্রে আপনাদের বিবাহের তারিখ এবং সময় উল্লেখ করতে হবে। এছাড়াও, আপনাদের বিবাহের সাক্ষী হিসেবে দুজন ব্যক্তির নাম এবং ঠিকানা দিতে হবে।
আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর, আপনাদের বিবাহ নিবন্ধনকারীর কার্যালয়ে উপস্থিত হতে হবে। বিবাহ নিবন্ধক আপনাদের পরিচয় নিশ্চিত করবেন এবং আবেদনপত্রটি যাচাই করবেন। যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তাহলে তিনি আপনাদের বিবাহ নিবন্ধন করবেন।
বিদেশ থেকে কোর্ট ম্যারেজের আবেদন প্রক্রিয়াটি তুলনামূলকভাবে সহজ। তবে, আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে আপনি আপনার দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস বা কনস্যুলেটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
দেশের বাইরে কোর্ট ম্যারেজের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র
দেশের বাইরে কোর্ট ম্যারেজ করতে হলে কি কি লাগবে সেই নিয়েই হবে আজকের আলোচনা। বিদেশে কোর্ট ম্যারেজ করতে গেলে অনেক নথিপত্রের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে কয়েকটি নথিপত্রের প্রয়োজন হয় বাংলাদেশ এবং কয়েকটি নথিপত্রের প্রয়োজন হয় সেই দেশ থেকে যেখানে তোমার বিয়ে হচ্ছে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক কোন কোন নথিপত্রের প্রয়োজন হতে পারে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র হলো:
- পাসপোর্টের ফটোকপি
- জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
- বর/কনের ছবি।
দেশের বাইরে কোর্ট ম্যারেজে সাক্ষীর ভূমিকা
বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কোর্ট ম্যারেজটি সফল করতে তোমাকে দুজন সাক্ষী উপস্থিত থাকতে হবে, যারা বিবাহের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবে এবং বিবাহের সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করবে। সাক্ষীরা তোমাদের বিবাহের বৈধতার প্রমাণ সরবরাহ করে এবং তোমাদের বিবাহের পদ্ধতির সত্যতা নিশ্চিত করে। তোমার নির্বাচিত সাক্ষীরা বিশ্বস্ত, দায়িত্ববান এবং তোমাদের বিবাহের গুরুত্ব বুঝতে সক্ষম ব্যক্তি হওয়া উচিত। তাদের ভালোভাবে তোমাদের এবং তোমাদের বিবাহের ইচ্ছার কথা জানা উচিত এবং তারা তোমাদের সম্পর্কের প্রকৃত সত্যতা দিতে সক্ষম হবেন। সাক্ষীরা কোর্ট ম্যারেজের প্রক্রিয়ার একটি অপরিহার্য অংশ, তাই তাদের সাবধানে নির্বাচন করা এবং তাদের ভূমিকা সম্পর্কে অবহিত করা নিশ্চিত করা জরুরি।
দেশের বাইরে কোর্ট ম্যারেজের ফলাফল
বিদেশে কোর্ট ম্যারেজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, ফলাফলগুলি বিবেচনা করা জরুরি। এটি একটি আইনত বৈধ বিয়ে, যা আপনার দেশে এবং বিদেশে উভয়ই স্বীকৃত হবে। ফলাফলগুলি বিদেশে বসবাস, নাগরিকত্বের অধিকার এবং আপনার সন্তানদের আইনগত সুরক্ষা প্রভাবিত করতে পারে। আপনি যখন কোনও বিদেশী নাগরিককে বিয়ে করেন, তখন আপনাকে আপনার দেশের এবং আপনার সঙ্গীর দেশের আইনগুলি মেনে চলতে হবে। কিছু দেশ মিশ্র-জাতীয় বিয়েতে বাধা দেয়, অন্যেরা নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তা আরোপ করে। আপনার সঙ্গীর দেশে কোর্ট ম্যারেজের আইন সম্পর্কে গবেষণা করা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আপনি প্রক্রিয়াটি বুঝতে এবং প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারেন। আপনার দেশে বিয়েটি নিবন্ধন করাও গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আপনার বিয়েটি আপনার স্বদেশে আইনত স্বীকৃত হয়। কিছু দেশে, আপনার দেশে বিয়েটি নিবন্ধন করার জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আবেদন করতে হবে। বিয়েটি নিবন্ধন না করলে, এটি আপনার বৈবাহিক অবস্থা, উত্তরাধিকার অধিকার এবং আপনার সন্তানদের নাগরিকত্বের অধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে।
Leave a Reply