ক্রিয়া এবং ধাতু বাক্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বাক্যে ক্রিয়া বা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত বিভক্তি শব্দের রূপ পরিবর্তন করে এবং বিশেষ কিছু অর্থ প্রকাশ করে। এই বিভক্তিটি শব্দের শেষে যুক্ত হয় এবং শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে। বাংলা ভাষায় বিভক্তি ব্যবহারের বিস্তृत নিয়ম রয়েছে, যা বিভিন্ন ব্যাকরণ গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই নিবন্ধে আমরা ক্রিয়া এবং ধাতুর সঙ্গে যুক্ত বিভক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমরা বিভক্তির সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, ব্যবহারের নিয়ম এবং উদাহরণ সম্পর্কে জানব। এই নিবন্ধটি পড়ে আপনি ক্রিয়া এবং ধাতুর সঙ্গে যুক্ত বিভক্তি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবেন এবং আপনার লেখা ও কথার মান উন্নত করতে পারবেন।
ক্রিয়া বা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত বিভক্তি কী?
ক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয়ে ক্রিয়ার কোন বিষয়কে বা ক্রিয়াটি কখন-কোথায়-কে দ্বারা সংঘটিত হয়েছে তা নির্দেশকারী শব্দগুলোকেই বিভক্তি বলে। ক্রিয়ার সাথে বিভক্তি যুক্ত হলে তাকে ক্রিয়া বা ধাতুরূপ বলে। ক্রিয়ারূপ হলো ক্রিয়া এবং বিভক্তির সমষ্টি। যেমন-
১। আমি খাই
২। তুমি খাও
৩। সে খায়
যেখানে, “খা” হচ্ছে ক্রিয়া আর “ই”, “ও”, “য়” হচ্ছে বিভক্তি। এই বিভক্তি ক্রিয়ার কারক, পুরুষ, বচন ইত্যাদি নির্দেশ করে। ক্রিয়ারূপে বিভক্তি কেবল মৌখিক ক্রিয়াতেই যুক্ত হয়। ক্রিয়াপদের সাথে বিভক্তি যুক্ত হয় না।
বিভক্তির সংজ্ঞা
প্রিয় পাঠক,
ধাতুর সাথে আমরা যুক্ত করে যা, তাকে বিভক্তি বলে। এটা আমাদের ধাতুকে বিশেষায়িত বা বিশেষত্ব প্রদান করে। যেমন-‘আমি’ ধাতুর সাথে যদি ‘-অ’ যোগ করি, তা হলে সেটা হয় ‘আমি’-আমরা এখানে দেখতে পাচ্ছি, ‘অ’ যোগ করার ফলে ‘আমি’ শব্দটি ‘বহুবচন’ হয়ে গেছে। আবার, ‘লিখি’ শব্দের সাথে ‘-ছিলাম’ যোগ করলে ‘লিখিছিলাম’ শব্দটি তৈরি হয়, যা ‘ভুতকাল’কে নির্দেশ করে।
তাই, আমরা বলতে পারি, ধাতুর সাথে যুক্ত হয়ে যা ধাতুর বিষেশ বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করে, তাকেই বিভক্তি বলে।
বিভক্তির প্রকারভেদ
ধাতু বা ক্রিয়ামূলের সাথে যে বিভক্তি যুক্ত হয় তাকে বলা হয় ক্রিয়ার কর্ম বা ক্রিয়ার বিভক্তি। এই বিভক্তিগুলি শুধুমাত্র ক্রিয়ার শেষে বা এর মধ্যে যুক্ত করা হয় এবং এগুলি ক্রিয়ার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করে যেমন পুরুষ, সংখ্যা, কাল, দিক, এবং দৃষ্টিভঙ্গি।
বাংলা ভাষায় মোট ৫টি ক্রিয়ার বিভক্তি রয়েছে যা নিম্নরূপ: –
- লট বিভক্তি: ব্যক্তি সংখ্যা এবং কাল নির্দেশ করে।
- কিল বিভক্তি: ক্রিয়ার দিক এবং দৃষ্টিভঙ্গি নির্দেশ করে।
- তন বিভক্তি: কাজের নিষেধ, আদেশ বা আশীর্বাদ নির্দেশ করে।
- ন বিভক্তি: অতীত কালের কাজ নির্দেশ করে।
- আ বিভক্তি: অনুরোধ বা বর্ণনা নির্দেশ করে।
এই ক্রিয়ার বিভক্তিগুলি শুধুমাত্র ধাতু বা ক্রিয়ামূলের সাথে যুক্ত হয় এবং এগুলিকে ক্রিয়ার অঙ্গ বলা হয়। এই বিভক্তিগুলি সঠিকভাবে ব্যবহার করা খুবই জরুরি কারণ এগুলি ক্রিয়ার অর্থ এবং ব্যবহার পরিবর্তন করে।
ক্রিয়া ও ধাতুর সঙ্গে ব্যবহৃত বিভক্তি
ধাতু বা ক্রিয়ামুলের সাথে যে বিভক্তি যুক্ত হয় তাকে বলা হয় ক্রিয়া বিভক্তি। এই বিভক্তিগুলি ক্রিয়া বা ধাতুর সময়, ব্যক্তি, সংখ্যা, কাল ইত্যাদি প্রকাশ করে। ক্রিয়া বিভক্তিগুলি শুধুমাত্র ক্রিয়া বা ধাতুর সাথে যুক্ত হয়, বিশেষ্য বা সর্বনামের সাথে নয়।
যেমন:
* আমি যাই (বর্তমান কাল, একবচন, প্রথম পুরুষ)
* তুমি যাবে (ভবিষ্যৎ কাল, একবচন, দ্বিতীয় পুরুষ)
* তারা গেল (ভূতকাল, বহুবচন, তৃতীয় পুরুষ)
ক্রিয়া বিভক্তিগুলির অনেকগুলি ধরন রয়েছে, যা ভাষা এবং কাল উপর নির্ভর করে। কিছু সাধারণ ক্রিয়া বিভক্তিগুলির উদাহরণ হল:
- কাল বিভক্তি: -ল (বর্তমান কাল), -বে (ভবিষ্যৎ কাল), -ল (ভূতকাল)
- ব্যক্তি বিভক্তি: -ই (একবচন, প্রথম পুরুষ), -ও (একবচন দ্বিতীয় পুরুষ), -ন (বহুবচন, তৃতীয় পুরুষ)
- সংখ্যা বিভক্তি: -রা (বহুবচন)
বিভক্তি ব্যবহারের উদাহরণ
ধাতু বা ক্রিয়ামূলের সাথে যে বিভক্তি যুক্ত হয় তাকে কী বলে?
ধাতুর সঙ্গে যেসব বর্ণ বা পদের যোগে নানা রূপ সৃষ্টি হয়, তাকে বিভক্তি বলে। কাল নির্দেশ ও কর্ম নির্দেশ করাই বিভক্তির মূল কাজ। বিভক্তি ব্যবহার না করলে কাল ও কর্ম নির্ধারণ সম্ভব হয় না। বাংলা ভাষায় সর্বমোট ১৭টি বিভক্তি রয়েছে, যেমনটি তুমি জানো। এই বিভক্তিগুলি হল-
- কর্তৃ বিভক্তি
- কর্ম বিভক্তি
- সম্প্রদান বিভক্তি
- অপাদান বিভক্তি
- অধিকরণ বিভক্তি
- সম্বন্ধ বিভক্তি
- অব্যয়ীভাব বিভক্তি
- যুক্ত বিভক্তি
- নিষেধাত্মক বিভক্তি
- তুলনামূলক বিভক্তি
- অপেক্ষিক বিভক্তি
- অসমাপিকা বিভক্তি
- ভাবসূচক বিভক্তি
- কালসূচক বিভক্তি
- প্রশ্নসূচক বিভক্তি
- অর্থসূচক বিভক্তি
- সংযোগসূচক বিভক্তি
বিভক্তি ব্যবহারের নিয়ম
আমাদের ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে বিভক্তি। বিভক্তি হল ধাতু বা ক্রিয়াপদের শেষে যুক্ত হওয়া একটি উপাদান যা শব্দটির অর্থে পরিবর্তন ঘটায়। শব্দের অর্থ পরিবর্তনের পাশাপাশি বিভক্তি শব্দটির বাক্যে কাজও নির্ধারণ করে। বিभক্তি ব্যবহারের নিয়ম জানা প্রত্যেক বাঙলাভাষী মানুষের জন্য জরুরী।
একটি নির্দিষ্ট ক্রিয়ামূলের বিভক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে কাজটি কে বা কারা করছে, কাজটি কখন করা হয়েছে বা হবে,কাজটি কোথায় বা কিভাবে করা হবে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে।
বিभক্তि ব্যবহারের নিয়ম যথাযথভাবে জানা না থাকলে আমরা সঠিকভাবে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারবো না বা লিখতে পারবো না।
Leave a Reply