আমাদের দেশে নাক পরিষ্কারের জন্য সরষের তেল ব্যবহারের রীতি চলে আসছে অনেক দিন ধরে। অনেক সময় দেখা যায় শিশুদের নাক থেকে শ্লেষ্মা বের করা যাচ্ছে না। এই সময় আমাদের বাবা-মায়েরা একটা সরু তুলোর টুকরোয় সরষের তেল নিয়ে তা নাকের ভেতরে দিয়ে দিতেন। কিছুক্ষণ পরেই দেখা যেত সরষের তেলের গন্ধে এবং এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদানগুলির কারণে নাকের ভেতরে জমে থাকা শ্লেষ্মা ঘন হয়ে সহজেই বেরিয়ে আসে।
নাক পরিষ্কারের জন্য সরষের তেল ব্যবহারের এই রীতি চলে আসছে হাজার হাজার বছর ধরে। সরষের তেল শুধু নাক পরিষ্কার করতেই কাজে আসে না, এর রয়েছে আরও অনেক উপকারিতা। এই লেখায় আমরা বিস্তারিত জানব নাকে সরষের তেল দেওয়ার উপকারিতাগুলি কী কী এবং কোন কোন রোগে এটি ব্যবহার করা যায়।
নাকে সরিষার তেল ব্যবহার করার হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে
নাকে সরিষার তেল ব্যবহারের অন্তত হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে। আয়ুর্বেদে, সরিষার তেলকে নাসিকায় ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের নাসিকা আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা শুধুমাত্র শ্বাস-প্রশ্বাসের পথ নয়, বরং এটি আমাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গকেও সুরক্ষা দেয়। নাক দিয়ে আমরা যে সবকিছু শ্বাস নেই, তা সরাসরি আমাদের ফুসফুসে চলে যায়। তাই নাসিকার স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য কিছু জটিল প্রক্রিয়া আছে, যার মধ্যে একটি হল নাকের ভিতর তেল লাগানো। নাসিকায় সরিষার তেল ব্যবহার করা হয় মূলত নাসিকার শুষ্কতা দূর করতে, নাসারন্ধ্র পরিষ্কার করতে ও নাসিকার সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে। সরিষার তেলে থাকা অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান নাকের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লিকে সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ইরুসিক অ্যাসিড, যা নাকের জমাট থাকা শ্লেষ্মা দ্রবীভূত করতে সাহায্য করে।
সরিষার তেলে উপস্থিত উপকারী উপাদানগুলি
সরিষার তেল বিভিন্ন উপকারী উপাদানে ভরপুর, যা এটিকে স্বাস্থ্যের জন্য একটি মূল্যবান উপাদান করে তোলে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অ্যালিসিন, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। সরিষার তেলে ওমেগা-3 এবং ওমেগা-6 ফ্যাটি অ্যাসিডও রয়েছে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, সরিষার তেলে ভিটামিন ই এবং ভিটামিন কে রয়েছে, যা ত্বক এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এই সমস্ত উপকারী উপাদানগুলি সরিষার তেলকে স্বাস্থ্যকর খাবার রান্না করার পাশাপাশি ত্বক এবং চুলের যত্নে ব্যবহারের জন্য একটি দুর্দান্ত পছন্দ করে তোলে।
নাকে সরিষার তেল দেওয়ার উপকারিতা
নাকের জন্য সরিষার তেলের অসাধারণ উপকারিতা সম্পর্কে আমি আজ আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব। আমাদের অনেকেই জানেন যে, নাকে তেল দেওয়ার অনেক উপকার রয়েছে। কিন্তু সরিষার তেলের কথা শুনলেই আমাদের মনে পড়ে শুধুমাত্র রান্নার কাজ। তবে এটা কিন্তু নাকের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে এই শীতের দিনে নাকের যত্ন নেওয়ার জন্য সরিষার তেলের কোনো বিকল্প নেই। সরিষার তেল নাকে ব্যবহার করলে কী কী উপকার পাওয়া যায়, তা এবার জেনে নেওয়া যাক-
শ্বসনতন্ত্রের সমস্যায় সরিষার তেল
শ্বাসকষ্ট, হাঁচি, নাক বন্ধ—এইসব সমস্যায় আমরা অনেকেই ভুগে থাকি। তবে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার আগেই ঘরোয়া টোটকার দিকে নজর দিতে পারি। আর এমনই একটি টোটকা হল নাকে সরিষার তেল দেওয়া। তবে প্রকৃতপক্ষেই নাকে সরিষার তেল দিলে উপকার হয় কী? আসুন, জেনে নেওয়া যাক—
নাকে সরিষার তেলের ব্যবহারের সবচেয়ে বড় উপকার হল এটি শ্বাসনালী পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। সরিষার তেলে মৌजूদ অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-অ্যালার্জিক উপাদান ফুলে যাওয়া ঝিল্লি কমায় এবং নাকের প্যাসেজ খুলে দিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, সরিষার তেলের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য শ্বাসনালীতে থাকা ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করতে সাহায্য করে। ফলে শ্বাসকষ্ট এবং হাঁচি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নাক বন্ধ থাকলেও সরিষার তেল দিলে উপকার পাওয়া যায়। সরিষার তেলের তীক্ষ্ণ গন্ধ নাকে ঢুকলে শ্বাসনালী উত্তেজিত হয়ে শ্লেষ্মা তরল হয়ে বেরিয়ে আসে। ফলে নাক বন্ধের সমস্যা দূর হয়।
মাথাব্যথা এবং সাইনাসের সমস্যায় সরিষার তেল
নাকের বন্ধন অথবা সাইনাসে ব্যথা হলে অনেকেই নাকে সরিষার তেল ব্যবহার করেন। এটি একটি ঘরোয়া প্রতিকার, যা কিছু লোকের ক্ষেত্রে কার্যকরও বটে। তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, নাকে সরিষার তেল ব্যবহার করা নিরাপদ নয়। এটি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
সরিষার তেল ঘন এবং চটচটে। এটি নাকে লাগালে নাকের ভেতরের আস্তরণে আটকে যেতে পারে। ফলে নাকের বন্ধন আরও খারাপ হতে পারে। এছাড়াও, সরিষার তেলে থাকা কিছু উপাদান নাকের আস্তরণে জ্বালা ও প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। এটি মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব এবং মাথা ঘোরার কারণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, এটি সংক্রমণেরও কারণ হতে পারে।
তাই, নাকের বন্ধন বা সাইনাসের ব্যথা হলে নাকে সরিষার তেল ব্যবহার করা এড়িয়ে চলাই ভালো। এর পরিবর্তে, লবণপানি দিয়ে নাক ধুয়ে ফেলা বা নাকের স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও, শীতকালে মাথা ও কান ঢেকে রাখা এবং সর্দি-কাশির সংস্পর্শে না আসা জরুরি।
ত্বকের যত্নে সরিষার তেল
নাকের শুষ্কতা দূর এবং নাকের ভেতরের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরিষার তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। দুই ফোঁটা সরিষার তেল নাকের ভেতরে দিনে দুইবার দিলে শুষ্কতা দূর হয়ে যায়। এছাড়াও, নাকের ভেতরে সরিষার তেল দিলে নাকের ভেতরের সংক্রমণের ব্যাকটেরিয়া দূর হয় এবং এলার্জির উপসর্গও কম হয়। নাকের ভেতরে ব্যবহার করার আগে অবশ্যই সরিষার তেল গরম করে নিতে হবে। অন্যদিকে, সর্দি হলে নাকের বাইরের অংশে সরিষার তেল ঘষলে সর্দি সারে দ্রুত। নাকের ভেতরে সরিষার তেল ব্যবহারের ফলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। তবে, সরিষার তেলে এলার্জি হলে ব্যবহার করা যাবে না। সরিষার তেল ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সাবধানতা এবং দিকনির্দেশনা
নাকের শুষ্কতা দূর এবং নাকের ভেতরের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরিষার তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। দুই ফোঁটা সরিষার তেল নাকের ভেতরে দিনে দুইবার দিলে শুষ্কতা দূর হয়ে যায়। এছাড়াও, নাকের ভেতরে সরিষার তেল দিলে নাকের ভেতরের সংক্রমণের ব্যাকটেরিয়া দূর হয় এবং এলার্জির উপসর্গও কম হয়। নাকের ভেতরে ব্যবহার করার আগে অবশ্যই সরিষার তেল গরম করে নিতে হবে। অন্যদিকে, সর্দি হলে নাকের বাইরের অংশে সরিষার তেল ঘষলে সর্দি সারে দ্রুত। নাকের ভেতরে সরিষার তেল ব্যবহারের ফলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। তবে, সরিষার তেলে এলার্জি হলে ব্যবহার করা যাবে না। সরিষার তেল ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
Leave a Reply