আমরা প্রতিদিন অসংখ্য টাকা লেনদেন করি, কিন্তু কি আমরা কখনও ভেবে দেখেছি যে এই টাকাগুলি কীভাবে তৈরি হয়? আজ আমি আপনাদের বলব বাংলাদেশের ৫০০ টাকার নোটের ইতিহাস নিয়ে। আমরা জানব কোন বিদেশি সংস্থাগুলি বাংলাদেশের টাকা ছাপায় এবং ৫০০ টাকার নোট ছাপাতে কোন দেশকে নির্বাচন করা হয়েছিল। এছাড়াও আমরা বাংলাদেশে নোট ছাপানোর প্রক্রিয়া এবং প্রযুক্তিগত দিক নিয়েও আলোচনা করব। শেষে, আমরা ৫০০ টাকার নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যগুলির উপর নজর রাখব। তাই শুরু করা যাক বাংলাদেশের ৫০০ টাকার নোটের অবিশ্বাস্য যাত্রা।
বাংলাদেশের ৫০০ টাকার নোটের ইতিহাস
বাংলাদেশের ৫০০ টাকার নোট প্রথম ছাপানো হয় ১৯৭৩ সালে। এটি ছিল অন্যন্য মূল্যমানের নোটের সাথে বাংলাদেশের প্রথম মুদ্রা সেটের অংশ। ৫০০ টাকার নোটটি ছিল বেগুনি রঙের এবং এতে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ছবি ছিল। নোটটি লন্ডনের থমাস ডি লা রু কোম্পানি দ্বারা মুদ্রিত হয়েছিল।
১৯৭৮ সালে ৫০০ টাকার নোটের ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়। নতুন নোটটিতে বাংলাদেশের মানচিত্র এবং লাল দুর্গের একটি ছবি যুক্ত করা হয়। নোটটি পুনরায় থমাস ডি লা রু কোম্পানি দ্বারা মুদ্রিত হয়েছিল।
২০১১ সালে ৫০০ টাকার নোটের ডিজাইন আবারো পরিবর্তন করা হয়। নতুন নোটটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি নতুন ছবি যুক্ত করা হয় এবং এটি বাংলাদেশ ব্যাংক প্রেস কর্পোরেশন দ্বারা মুদ্রিত হয়।
বাংলাদেশের মুদ্রণের জন্য বিদেশি সংস্থাগুলি
বাংলাদেশের ৫০০ টাকার নোট ছাপা হয় জার্মানির জিজেড ডেরেসডেন কোম্পানিতে। এই কোম্পানিটি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় মুদ্রা ছাপার প্রতিষ্ঠান। জিজেড ডেরেসডেন কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের দীর্ঘদিনের চুক্তি রয়েছে। এই চুক্তির আওতায় জিজেড ডেরেসডেন কোম্পানি বাংলাদেশের বিভিন্ন মূল্যমানের নোট ছাপিয়ে থাকে।
৫০০ টাকার নোট ছাপার জন্য জিজেড ডেরেসডেন কোম্পানি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এই নোটগুলোতে বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ফিচার যুক্ত থাকে, যা নোট জাল করা প্রায় অসম্ভব করে তোলে। এছাড়াও, এই নোটগুলো টেকসই এবং দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়।
জিজেড ডেরেসডেন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চমানের মুদ্রা ছাপাতে সক্ষম হয়েছে। এই উচ্চমানের মুদ্রা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫০০ টাকার নোট ছাপানোর জন্য নির্বাচিত দেশ
বাংলাদেশের ৫০০ টাকার নোট ছাপা হয় কোন দেশে?
বাংলাদেশের ৫০০ টাকার নোট ছাপানো হয় জার্মানির জিজেড এস হার্জেল ড্রকারি থেকে। এই ড্রকারিটি ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে অবস্থিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একটি চুক্তির আওতায় এই ড্রকারি থেকে বাংলাদেশের ৫০০ টাকার নোট ছাপানো হয়ে থাকে। এই নোটগুলোর নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যগুলোও জিজেড এস হার্জেল ড্রকারি দ্বারাই পরীক্ষা করা হয়। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে এই নোটগুলো ছাপানো হয়। এই নোটগুলোর ডিজাইন বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারাই করা হয়েছে। এই নোটগুলোতে ব্যবহৃত কাগজটিও জিজেড এস হার্জেল ড্রকারি থেকে সরবরাহ করা হয়। এই কাগজটি একটি বিশেষ ধরনের সুরক্ষা কাগজ যা জালিয়াতি প্রতিরোধে সহায়তা করে। এই নোটগুলোতে ব্যবহৃত কালিও জিজেড এস হার্জেল ড্রকারি থেকে সরবরাহ করা হয়। এই কালিটি একটি বিশেষ ধরনের সুরক্ষা কালি যা নকল করা কঠিন। এই নোটগুলোতে ব্যবহৃত নিরাপত্তা থ্রেডও জিজেড এস হার্জেল ড্রকারি থেকে সরবরাহ করা হয়। এই থ্রেডটি একটি বিশেষ ধরনের নিরাপত্তা থ্রেড যা নকল করা কঠিন। এই নোটগুলোতে ব্যবহৃত হলোগ্রামও জিজেড এস হার্জেল ড্রকারি থেকে সরবরাহ করা হয়। এই হলোগ্রামটি একটি বিশেষ ধরনের নিরাপত্তা হলোগ্রাম যা নকল করা কঠিন। এই নোটগুলোতে ব্যবহৃত ওয়াটারমার্কও জিজেড এস হার্জেল ড্রকারি থেকে সরবরাহ করা হয়। এই ওয়াটারমার্কটি একটি বিশেষ ধরনের নিরাপত্তা ওয়াটারমার্ক যা নকল করা কঠিন।
বাংলাদেশে নোট ছাপানোর প্রক্রিয়া
বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থনৈতিক কার্যক্রম এবং দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে মুদ্রা এবং মুদ্রা ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই কোন বিদেশি দেশে বাংলাদেশী মুদ্রা ছাপা হয়, সেটি জানা গুরুত্বপূর্ণ। সংক্ষেপে বলা যায়, তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৫০০ টাকার নোটটি যুক্তরাজ্যে অবস্থিত একটি সংস্থা দ্বারা ছাপানো হয়। এই সংস্থাটির নাম ডি লা রু। ডি লা রু বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম নিরাপত্তা মুদ্রণ সংস্থাগুলির মধ্যে একটি, যা বিভিন্ন দেশের জন্য বিভিন্ন মূল্যবান নোট এবং অন্যান্য নিরাপত্তা মুদ্রণ পণ্য ছাপায়। বাংলাদেশ ব্যাংক ডি লা রুর সাথে একটি চুক্তির অধীনে দেশের জন্য ৫০০ টাকার নোট ছাপানোর দায়িত্ব দিয়েছে। এই চুক্তির আওতায়, ডি লা রু বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং নির্দেশনা অনুযায়ী নোটগুলি নিরাপদ এবং উচ্চ মানের নিশ্চিত করে ছাপানো হয়।
নোট ছাপানোর প্রযুক্তিগত দিক
বাংলাদেশের ৫০০ টাকার সম্পর্কে জানার আগ্রহ নিয়ে আমি এই প্রবন্ধটি লিখছি। বিদেশ থেকে নোট আমদানি করা বন্ধ করার লক্ষ্যে আমাদের দেশে উচ্চমানের নোট ছাপার প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়েছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছাপা হওয়া প্রথম নোটটি ছিল ৫০০ টাকার নোট।
নোট ছাপার এই প্রযুক্তিতে সুরক্ষা বৈশিষ্ট্যগুলিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই নোটগুলিতে অত্যাধুনিক সুরক্ষা বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা জালিয়াতিকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এই নোটগুলি টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী করে তোলার জন্য উচ্চ মানের কাগজ এবং কালি ব্যবহার করা হয়েছে।
৫০০ টাকার নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য
বাংলাদেশের ৫০০ টাকার নোট যে দেশে ছাপা হয় সেই দেশটি হচ্ছে ফ্রান্স। ইউরোপের অন্যতম অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ ফ্রান্স বাংলাদেশের সর্বোচ্চ মূল্যমানের নোট ছাপার দায়িত্ব পালন করছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয় নিয়মিত ভাবে ফ্রান্সের কাছ থেকে নোট আমদানি করে আসছে।
ফ্রান্সের প্রিন্টিং প্রেস গ্রুপ ‘ওবারথুর ফিডুসিয়া’ বাংলাদেশের ৫০০ টাকার নোট ছাপার দায়িত্বে নিয়োজিত আছে। এই প্রিন্টিং প্রেসটি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যে বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নোট ছাপার কাজ করে। বাংলাদেশের ৫০০ টাকার নোটেও উচ্চমানের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করা হয়েছে।
Leave a Reply