ইংরেজদের ভাষা কেন বাংলায় ‘ইংরেজি’ নামে পরিচিত? আজই জেনে ফেলুন

ইংরেজদের ভাষা কেন বাংলায় ‘ইংরেজি’ নামে পরিচিত? আজই জেনে ফেলুন

আপনারা কখনও ভেবে দেখেছেন ইংরেজি শব্দটি এলো কী করে? কেন আমরা ইংল্যান্ডের ভাষাকে ইংরেজি বলি? কিংবা এই কথাটির ব্যুৎপত্তিগত দিকটা কী? ইংরেজি শব্দটির ইতিহাস, ব্যবহার এবং বিবর্তন খুবই আকর্ষণীয়। এই শব্দটির সাথে যুক্ত হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে, যা আমাদেরকে প্রাচীন কাল থেকে আজ অবধি ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত সম্পর্ক সম্পর্কে অনেক কিছু বলে।

আজকের এই ব্লগ পোস্টে, আমি ইংরেজি শব্দটির ব্যুৎপত্তি, এর বিবর্তন এবং ভারতীয় ভাষায় এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমরা দেখব কীভাবে প্রাচীন কালে ভারত এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এই শব্দটির উৎপত্তিতে ভূমিকা পালন করেছে, এবং কীভাবে এই শব্দটি ভারতীয় ভাষায় সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে। এছাড়াও, আমরা ব্যাকরণগত দিক থেকে “ইংরেজি” শব্দটির বিশ্লেষণ করব এবং দেখব কেন এই প্রেক্ষিতে ইংরেজি ভাষাকে ‘ইংরেজি’ বলা হয়।

ইংরেজি শব্দটির ব্যুৎপত্তি

ইংরেজি ভাষার নামটির উৎপত্তি নিয়ে নিশ্চিত কোনো প্রমাণ নেই তবে বিভিন্ন তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে। একটি তত্ত্ব অনুসারে, ‘ইংরেজি’ শব্দটি এসেছে ‘এঙ্গেল’ শব্দ থেকে, যা একটি জার্মানিক উপজাতি ছিল। এঙ্গেলরা 5ম শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে অভিবাসন করেছিল এবং তাদের ভাষাটি ধীরে ধীরে দেশের প্রধান ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

আরেকটি তত্ত্ব অনুসারে, ‘ইংরেজি’ শব্দটি এসেছে ‘এঙ্গেলল্যান্ড’ শব্দ থেকে, যার অর্থ ‘এঙ্গেলদের দেশ’। এই তত্ত্বটির সমর্থনে প্রমাণ হিসাবে ইংল্যান্ডের পুরানো নাম ‘ইঙ্গারিক’ ব্যবহার করা হয়, যা ‘এঙ্গেলদের জমি’ হিসাবে অনুবাদ করা যেতে পারে।

তবে, সবচেয়ে সম্ভাব্য তত্ত্বটি হল ‘ইংরেজি’ শব্দটি এসেছে ‘এঙ্গেল-স্যাক্সন’ শব্দ থেকে, যা ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে বসবাসকারী জার্মানিক উপজাতিদের একটি গোষ্ঠীকে বোঝায়। 7ম শতাব্দীতে, এঙ্গেল-স্যাক্সন উপজাতিরা ইংল্যান্ডের বেশিরভাগ অংশ জয় করেছিল এবং তাদের ভাষাটি দেশের প্রধান ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

প্রাচীন কালে ভারতের সাথে ইংল্যান্ডের বাণিজ্যিক সম্পর্ক

প্রাচীন কাল থেকেই ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। প্রাচীন ভারতীয় মসলা, রেশম ও অন্যান্য পণ্যের জন্য ইংল্যান্ডের উচ্চ চাহিদা ছিল। ইংরেজরা ভারত থেকে ক্রয় করা পণ্যগুলো অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে বিক্রি করতো।

See also  অ্যাটর্নি জেনারেল: রাষ্ট্রের প্রধান আইনজ্ঞ

ভারতীয় ভাষায় ইংরেজি শব্দের ক্রমবিকাশ

আমরা সকলেই জানি যে, বাংলা ভাষায় ইংরেজি শব্দগুলোকে আমরা কীভাবে উচ্চারণ করি। কিন্তু কখনও কি তোমরা ভেবে দেখেছো, বাংলা ভাষায় ইংরেজি শব্দগুলো এসেছে কীভাবে? আজ আমরা সেই বিষয়েই আলোচনা করব।

আমরা জানি যে, ইংরেজরা ১৭৫৭ সালে ভারতে আসে। তারা ভারত শাসন করার সময়, তাদের ভাষাও ভারতীয় ভাষার মধ্যে প্রবেশ করে। ইংরেজরা ভারত শাসন করার সময়, তাদের নিজেদের আইন-কানুন, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করে। এই সমস্ত ব্যবস্থার মধ্যে ইংরেজি ভাষার প্রভাব ছিল।

ইংরেজরা ভারত শাসন করার সময়, তাদের ভাষাও ভারতীয় ভাষার মধ্যে প্রবেশ করে। এই সময়, ভারতীয়রা ইংরেজি শব্দগুলোকে তাদের নিজস্ব ভাষার উচ্চারণ অনুযায়ী উচ্চারণ করতে শুরু করে। যেমন, “car” শব্দটি ভারতীয়রা “কার” বলে উচ্চারণ করে। এইভাবে, ইংরেজি শব্দগুলো ভারতীয় ভাষার মধ্যে প্রবেশ করে এবং ভারতীয়দের নিজস্ব উচ্চারণ অনুযায়ী রূপান্তরিত হয়।

এছাড়াও, ইংরেজি শব্দগুলো ভারতীয় ভাষার ব্যাকরণ অনুযায়ীও পরিবর্তিত হয়েছে। যেমন, “car” শব্দটির বহুবচন রূপ ভারতীয় ভাষায় “কারস” হয়। এইভাবে, ইংরেজি শব্দগুলো ভারতীয় ভাষার মধ্যে প্রবেশ করে এবং ভারতীয়দের নিজস্ব ভাষার ব্যাকরণ অনুযায়ীও রূপান্তরিত হয়।

আজকের দিনে, ইংরেজি শব্দগুলো ভারতীয় ভাষার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। আমরা প্রতিদিনের কথোপকথন থেকে শুরু করে, সরকারি কাজকর্ম পর্যন্ত সর্বত্র ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করি। এইভাবে, ইংরেজি শব্দগুলো ভারতীয় ভাষার মধ্যে প্রবেশ করে এবং ভারতীয়দের নিজস্ব ভাষার উচ্চারণ এবং ব্যাকরণ অনুযায়ী রূপান্তরিত হয়েছে।

ইংরেজি শব্দের বাংলা রূপ ‘ইংরেজি’

ইংরেজি শব্দের বাংলা রূপ “ইংরেজি” শব্দটির উৎপত্তি ১৬ শতকে পর্তুগিজ শব্দ “ইংরেজ” থেকে এসেছে। পর্তুগিজ শব্দটি আবার এসেছে ল্যাটিন শব্দ “ইঙ্গ্লিকাস” থেকে, যার অর্থ “ইংল্যান্ডের”। তাই, “ইংরেজি” শব্দটি আসলে ইংল্যান্ডের ভাষাকে বোঝাতে ব্যবহৃত হত।

কালক্রমে, ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের সময় ইংরেজি ভাষা ভারতের সরকারি এবং শিক্ষার ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় থেকেই ভারতে ইংরেজি ভাষাকে “ইংরেজি” নামে ডাকা শুরু হয়।

See also  রবি শস্য কী? কোন কোন ফসল রবি শস্য হিসেবে পরিচিত?

তবে, বাংলা ভাষাতে “ইংরেজি” শব্দটির ব্যবহার কেবলমাত্র ইংরেজি ভাষাকে বোঝাতেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি ইংল্যান্ড, ইংরেজ জাতি এবং ইংরেজ সংস্কৃতির সাথেও সম্পর্কিত। উদাহরণস্বরূপ, আমরা “ইংরেজ পোশাক” বা “ইংরেজ খাবার” শব্দগুলি ব্যবহার করি ইংল্যান্ডের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলিকে বোঝাতে।

ব্যাকরণগত দিক থেকে ‘ইংরেজি’ শব্দের বিশ্লেষণ

“ইংরেজি” শব্দটির ব্যাকরণগত বিশ্লেষণ অনুসারে, এটি একটি সংস্কৃত শব্দ যা “ইংগ” শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। “ইংগ” শব্দটির অর্থ “যে আসে”। বিশেষত, “যে পারস্য থেকে আসে” সেই অর্থে এই শব্দটি ব্যবহৃত হতো। কারণ, ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে পারস্য দেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের “ইংগ” নামে ডাকা হতো। পরবর্তীকালে, এই “ইংগ” শব্দ থেকেই “ইংরেজ” শব্দটির উৎপত্তি ঘটে। আর “ইংরেজ” থেকে “ইংরেজি” শব্দটি এসেছে। অর্থাৎ, “ইংরেজি” শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল “পারস্য থেকে আসা ব্যক্তিদের ভাষা”।

সেই প্রেক্ষিতে ইংরেজি ভাষাকে ‘ইংরেজি’ বলা

এই প্রেক্ষাপটে, ইংরেজি ভাষालाई বাংলায় ‘ইংরেজি’ বলা হয়, কারণ এটি ইংল্যান্ড নামক দেশ থেকে এসেছে৷ ইংল্যান্ডের আদিবাসীদের বলা হতো ‘এ্যাংলস’, আর তাদের ভাষাকে বলা হতো ‘এ্যাংলিশ’৷ পরে এই ‘এ্যাংলিশ’ শব্দটির উচ্চারণ সহজ করার জন্য ‘ইংরেজি’ করা হয়৷ ইংরেজি ভাষা বিশ্বের অন্যতম প্রধান ভাষা, যা বিশ্বব্যাপী প্রায় ১.৫ বিলিয়ন লোকের প্রথম বা দ্বিতীয় ভাষা৷

Tonmoy Avatar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *