আমি বাংলা ব্যাকরণের একজন পেশাদার শিক্ষক। আমি এই ক্ষেত্রে বহু বছরের অভিজ্ঞতা রাখি। এই ব্লগ পোস্টে, আমি বাংলা ব্যাকরণের প্রাথমিক রূপগুলি, বাংলা ব্যাকরণের আদি রচনাকার, চণ্ডীদাস এবং তার ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্য, প্রাচীন বাংলা ব্যাকরণের অন্যান্য গ্রন্থ, মধ্যযুগে বাংলা ব্যাকরণ এবং আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ সম্পর্কে আলোচনা করব।
এই পোস্টটি পড়ার পরে, আপনি বাংলা ব্যাকরণের ইতিহাস এবং বিকাশ সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পাবেন। আপনি প্রাথমিক বাংলা ব্যাকরণের রূপগুলি, বিখ্যাত বাংলা ব্যাকরণকারদের কাজ এবং বাংলা ব্যাকরণের বিভিন্ন যুগ সম্পর্কে জানতে পারবেন। এই জ্ঞান আপনাকে বাংলা ভাষা আরও ভালভাবে বুঝতে এবং ব্যবহার করতে সাহায্য করবে।
বাংলা ব্যাকরণের প্রাথমিক রূপসমূহ
ব্যাকরণের প্রাথমিক রূপসমূহ
বাংলা ভাষার মূল ভিত্তি হিসেবে ব্যাকরণকে বিবেচনা করা হয়। এটি ভাষার সঠিক ব্যবহার এবং বোধগম্যতা নিশ্চিত করে। বাংলা ব্যাকরণের প্রাথমিক রূপগুলো হলো:
- বিশেষ্য: বিষয়, জায়গা, গুণ বা অন্য কোনো জিনিসের নামকে বিশেষ্য বলে। যেমন, বই, ঘর, সুন্দর, সাহস।
- সर्वनाम: যে শব্দ ব্যক্তিকে প্রতিস্থাপন করে সেটি হলো सर्वनाम। যেমন, আমি, তুমি, তিনি, এটি।
- বিশেষণ: যে শব্দ বিশেষ্য বা सर्वनामকে বর্ণনা করে বা পরিবর্তন করে তাকে বিশেষণ বলে। যেমন, লাল, বড়, সুখী।
- ক্রিয়া: যে শব্দ কোনো কাজ, অবস্থা বা ঘটনাকে প্রকাশ করে তাকে ক্রিয়া বলে। যেমন, পড়া, খাওয়া, ঘুমানো।
- ক্রিয়াবিশেষণ: যে শব্দ ক্রিয়া, বিশেষণ বা অন্য ক্রিয়াবিশেষণকে বর্ণনা করে তাকে ক্রিয়াবিশেষণ বলে। যেমন, দ্রুত, ধীরে, সত্যই।
এই প্রাথমিক রূপগুলো বাংলা ভাষার ভিত্তি তৈরি করে। এগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে আমরা স্পষ্ট এবং সংক্ষিপ্তভাবে যোগাযোগ করতে পারি। তাই বাংলা ভাষায় দক্ষতা অর্জনের জন্য এই রূপগুলোর জ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলা ব্যাকরণের আদি রচনাকার
হিসেবে বিখ্যাত আচার্য কৃত্তিবাস ওজ্ঝা। তিনি কবি চণ্ডীদাস কর্তৃক রচিত শ্রীকৃষ্ণকীর্তন গ্রন্থটি সংশোধন করেছিলেন। এই সংশোধনেই কৃত্তিবাস ওজ্ঝা বাংলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণ রচনা করেন, যার নাম দেওয়া হয় “রসমঞ্জরী”। এই গ্রন্থে তিনি শব্দের প্রকারভেদ, সন্ধি, সমাস, ক্রিয়ারূপ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে এই গ্রন্থটি বর্তমানে হারিয়ে গেছে। তাই মনে করা হয়, দাশমা রঘুনাথের রচিত “মনোরমা” নামক ব্যাকরণই বাংলা ভাষার প্রাচীনতম ব্যাকরণ। তবে বাংলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণ কে রচনা করেছেন এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর এখনও গবেষকদের কাছে অনিশ্চিত।
চণ্ডীদাস ও তাঁর ‘চণ্ডীমঙ্গল’
যখন কথা উঠে বাংলা সাহিত্যের খ্যাতনামা কবিদের কথা, তখন চণ্ডীদাসের নাম অন্যতম প্রথমেই মনে উদয় হয়। তিনি ছিলেন মধ্যযুগীয় বাংলার এক বিখ্যাত কবি ও সাধক। তাঁর রচিত ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যটি বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ।
‘চণ্ডীমঙ্গল’ হল একটি মহাকাব্য যা দেবী চণ্ডীর মহিমার বর্ণনা করে। এটি চণ্ডীদাসের সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে বিবেচিত হয়। কাব্যটি কাব্যলিপির খ্যাতিমান রীতিতে রচিত হয়েছে, যা কাব্যিক বর্ণনা, অলঙ্কার এবং গানের সংমিশ্রণ।
কাব্যটিতে দেবী চণ্ডীর জন্ম, তাঁর দৈত্য-বধের কাহিনী, শিবের সঙ্গে তাঁর বিবাহ এবং তাঁর মহিমা বর্ণিত হয়েছে। চণ্ডীদাস তাঁর কাব্যে দেবী চণ্ডীর প্রতি গভীর ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন। তাঁর ভাষা সরল ও সুন্দর, যা পাঠকদের মনে সহজেই স্থান করে নেয়।
‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, এটি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টি। এটি বাংলা ভাষার বিকাশে এবং বাংলা সাহিত্যের ধারাকে প্রভাবিত করতে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। চণ্ডীদাসের ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যটি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ যা আজও পাঠকদের মুগ্ধ করে।
প্রাচীন বাংলা ব্যাকরণের অন্যান্য গ্রন্থ
প্রাচীন বাংলা ব্যাকরণ নিয়ে রচিত গ্রন্থের মধ্যে নাম উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চণ্ডীদাস রচিত “অলঙ্কার চণ্ডী”। এটি মূলত সংস্কৃত ভাষার শব্দালঙ্কার ও শব্দানুশাসনের মন্তব্য গ্রন্থ। তবে এতে বাংলা ব্যাকরণের কিছু মৌলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হলো মহিষাদলের রঘুনন্দন শিরোমণির “ব্যাকরণ কৌমুদী”। এটিও সংস্কৃত ভাষার ব্যাকরণের গ্রন্থ হলেও এতে অনেক স্থানে বাংলা ব্যাকরণের নিয়মকানুন উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও, লোচনদাসের “লোচন প্রকাশ” গ্রন্থে বাংলা ব্যাকরণ নিয়ে কিছু আলোচনা পাওয়া যায়। এছাড়াও, রামসুন্দর তর্করত্নের “ব্যাকরণ সার”, শতানন্দ ভট্টাচার্যের “ব্যাকরণ সঙ্কেত”, রামনারায়ণ মহারাজের “ব্যাকরণ কুমুদী বিবৃতি” ও কীর্ত্তিচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের “ব্যাকরণ কৌমুদী ভ্রমদ্যোতন” গ্রন্থগুলোতে বাংলা ব্যাকরণের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই গ্রন্থগুলো বাংলা ব্যাকরণের উন্নয়ন ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
মধ্যযুগে বাংলা ব্যাকরণ
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনা করেন কে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে মধ্যযুগে। মধ্যযুগে বাংলা ভাষার উন্নয়ন ঘটেছিল দ্রুত গতিতে। এই সময় বাংলা সাহিত্যে প্রচুর রচনা হয়। তবে বাংলা ব্যাকরণের প্রথম নিদর্শন পাওয়া যায় ১৫৭৮ খ্রিস্টাব্দে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনা করেন ১৮৫৫ সালে। এই ব্যাকরণের নাম ছিল “ব্যাকরণ কৌমুদী”। ব্যাকরণ কৌমুদী বাংলা ভাষার ব্যাকরণের প্রথম আধুনিক গ্রন্থ। এই গ্রন্থে বাংলা ভাষার ব্যাকরণকে সহজ ও সুবোধ্য ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে। ব্যাকরণ কৌমুদী বাংলা ভাষার ব্যাকরণ শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। এই গ্রন্থের পরে আরও অনেক বাংলা ব্যাকরণ রচিত হয়েছে। তবে ব্যাকরণ কৌমুদীর স্থান আজও অতুলনীয়।
Leave a Reply