ভাষা আন্দোলনের গোড়াপত্তন এবং এর মূল কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত বিশ্লেষণ

ভাষা আন্দোলনের গোড়াপত্তন এবং এর মূল কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত বিশ্লেষণ

আমি একজন বাঙালি, এবং একজন গর্বিত ভাষা আন্দোলনের সৈনিক। আমার মা-বাবার বীরত্বের সাথে জড়িয়ে থাকা এই আন্দোলন আমার হৃদয়ের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। আজ আমি তোমাদের এমন এক আন্দোলনের গল্প বলবো, যা আমাদের জাতীয়তাবাদকে দৃঢ় করেছিল। এই আন্দোলন, যা ভাষা আন্দোলন নামে পরিচিত, একটাই দাবি নিয়ে শুরু হয়েছিল, তা হলো আমাদের মাতৃভাষাকে আমাদের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া। আজ আমি তোমাদের এই আন্দোলনের সূত্রপাত, রাজ্যভাষা হিসেবে বাংলার দাবি, সম্মুখ সংগ্রামের প্রস্তুতি, ২১ শে ফেব্রুয়ারি ঘটনা, ভাষা শহীদদের ত্যাগ এবং ভাষা আন্দোলনের বিজয় সম্পর্কে বলবো। তাই, প্রিয় পাঠক, মনোযোগ সহকারে আমার কথাগুলি শোনো, এবং জানো কিভাবে আমাদের বাংলা ভাষা আমাদের জাতীয়তাবাদের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত

হয় ১৯৪৭ সালের ১১ মার্চ। ব্রিটিশ সরকার পূর্ববাংলাকে পূর্ব পাকিস্তান নাম দিয়ে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করে। এই ঘোষণার বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিবাদ শুরু করে। ছাত্রদের এই প্রতিবাদের সাথে যোগ দেয় সাধারণ মানুষ। তারা উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে শুরু করে। পুলিশ গুলি চালিয়ে আন্দোলনকারীদের দমন করার চেষ্টা করে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা দমে যায়নি। তারা আরো বেগবান হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল বাংলাকে পাকিস্তানের একটি সরকারি ভাষা করা। এই দাবির পক্ষে আন্দোলনকারীরা পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর কাছে একটি স্মারকলিপিও দাখিল করে। কিন্তু জিন্নাহ আন্দোলনকারীদের দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। এতে আন্দোলনকারীরা আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করতে শুরু করে।

রাজ্যভাষা হিসেবে বাংলার দাবি

বাংলা হল আমাদের মাতৃভাষা, আমাদের আত্মপরিচয়ের অন্যতম প্রধান বাহন। তাই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি ও আন্দোলন একটি স্বাভাবিক দাবি ও আন্দোলন ছিল।

১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসাবে উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়া হয়। এটি ছিল পাকিস্তানের পশ্চিম পাংশের শাসকগোষ্ঠীর ভাষাগত সাম্রাজ্যবাদ। আর তা প্রতিহত করা বাংলাভাষী জনগণের জন্য ছিল তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন।

See also  কানাডায় মেডিকেল পড়ার জন্যে যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন সেগুলো পেতে হলে কী করব?

তাই ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত এক সভায় বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) রাষ্ট্রভাষার দাবিতে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক দাবি জানানো হয়। সেই থেকে শুরু হয় বাংলা ভাষা আন্দোলনের। এ আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র, সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক দলসমূহ সরব অবস্থান গ্রহণ করেন।

সম্মুখ সংগ্রামের প্রস্তুতি

ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত প্রসঙ্গে ওই আপনি, যিনি কোনো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী অথবা কোনো বিষয়ের গবেষক, নিশ্চয়ই বিস্তারিত তথ্য জানতে চান। এই বিষয়ে আপনাকে বিশদ ধারণা দিতে পারি।

ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৯৪৭ সালের ১১ মার্চ তারিখে। এদিন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেন যে, উর্দু হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এই ঘোষণার বিরুদ্ধে বাংলা ভাষার পক্ষে প্রতিবাদ শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ভাষার দাবিতে সর্বপ্রথম প্রতিবাদ করেন। এই দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা পূর্ব বাংলায়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

২১শে ফেব্রুয়ারি ঘটনা

একুশে ফেব্রুয়ারি ঘটনাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন, যা বাংলা ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিল। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পরে, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাপক মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেছিলেন যে উর্দু পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে। এ ঘোষণা বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে।

আমরা, বাংলা ভাষাভাষীরা, আমাদের মাতৃভাষার জন্য লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমরা ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করি। পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে গুলি চালায় এবং আব্দুল সালাম, রফিক উদ্দিন আহমেদ, আবুল বরকত, আব্দুল জব্বারসহ কয়েকজন ছাত্র শহীদ হন।

তাদের মৃত্যু আমাদের আরও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ করে। আমরা আমাদের দাবির জন্য লড়াই চালিয়ে যাই এবং অবশেষে ১৯৫৬ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের মাতৃভাষার জন্য শহীদদের স্মরণ করার এবং তাদের ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিন। এটি আমাদের সকলের জন্য একটি অনুপ্রেরণা, আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য সর্বদা সাহসের সাথে দাঁড়ানোর।

See also  বাংলাদেশে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা জানুন

ভাষা শহীদদের ত্যাগ

আমাদের জাতীয় ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষের ওপর পাকিস্তানি পুলিশের নৃশংস গুলিতে প্রাণ দেন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিকসহ অনেক নিরীহ প্রাণ। তাদের এই ত্যাগের ফলে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর। পাকিস্তানের শাসকরা উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টা শুরু করে। এতে বাংলাভাষী মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাজশাহী কলেজের মুক্তিযুদ্ধ শহীদদের স্মরণে একটি শোকসভা পালন করে এবং পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। এটিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয় এবং বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়।

ভাষা আন্দোলনের বিজয়

আমাদের ভাষা আন্দোলন একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এই আন্দোলন আমাদের মাতৃভাষার জন্য লড়াই করার একটি অনন্য উদাহরণ। ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ১৯৪৭ সালের ১১ মার্চ, যখন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণার বিরুদ্ধে বাংলা ভাষাভাষীরা প্রতিবাদ শুরু করেন।

ভাষা আন্দোলন দমন করার জন্য পাকিস্তান সরকার গুলি চালায়, যার ফলে আবুল বরকত, রফিক উদ্দিন আহমেদ, আবদুস সালাম প্রমুখ বেশ কয়েকজন শহীদ হন। এই ঘটনা বাংলা ভাষাভাষীদের আরও উদ্বুদ্ধ করে এবং আন্দোলন আরও জোরদার হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে পাকিস্তানের একটি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় সংহতি, সাহস ও আত্মবিশ্বাসের এক মাইলফলক।

Susmita Avatar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *