আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কত, সেটা আমরা ভুল করে অনেক সময় ৯৮° সেলসিয়াস বলেই জানি। কিন্তু এই তথ্যটি আসলে সঠিক নয়। আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব, মানুষের স্বাভাবিক শরীরের তাপমাত্রা আসলে কত হওয়া উচিত এবং কেন দেহের তাপমাত্রা ভারসাম্য রক্ষা করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এটাও জানবো যে কোন কোন কারণে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে এবং কোন কারণে তা কমে যেতে পারে। শেষে, আমরা আলোচনা করব যখন শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে যায়, তখন আমাদের কী করণীয়।
মানুষের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮° সেলসিয়াস নয়
যে তথ্যটি বহুদিন ধরে প্রচলিত রয়েছে তা হল, মানুষের স্বাভাবিক দেহের তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রী ফারেনহাইট (37 ডিগ্রী সেলসিয়াস)৷ এই ধারণাটি ভুল। বাস্তবে, স্বাভাবিক মানব শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা পরিবর্তিত হয় এবং এটি সাধারণত ৯৭.৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট থেকে ৯৯.৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট (36.4 ডিগ্রী থেকে 37.6 ডিগ্রী সেলসিয়াস) এর মধ্যে থাকে৷ এই সীমার মধ্যে তাপমাত্রার সামান্য তারতম্য স্বাভাবিক এবং এটি বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে, যেমন দিনের সময়, শারীরিক কার্যকলাপের মাত্রা এবং ব্যক্তির সামগ্রিক স্বাস্থ্য৷ তাই, যদি আপনার শরীরের তাপমাত্রা 98 ডিগ্রী ফারেনহাইটের থেকে কিছুটা বেশি বা কম থাকে, তবে এটি সাধারণত উদ্বেগের কোন কারণ নয়। যাইহোক, যদি আপনার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক সীমার বাইরে থাকে, যেমন 100.4 ডিগ্রী ফারেনহাইটের (38 ডিগ্রী সেলসিয়াস) বেশি বা 95 ডিগ্রী ফারেনহাইটের (35 ডিগ্রী সেলসিয়াস) কম হয়, তাহলে এটি একটি ঔষধের লক্ষণ হতে পারে এবং আপনার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত৷
মানুষের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কী?
মানুষের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা সাধারণত 98.6° ফারেনহাইট (37° সেলসিয়াস) হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে, এটি ব্যক্তির থেকে ব্যক্তিরের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে, এবং এটি দিনের সময়ের উপর নির্ভর করে কিছুটা উঠানামা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সকালে আপনার শরীরের তাপমাত্রা দিনের শেষের দিকে কিছুটা কম হতে পারে। এছাড়াও, কিছু কার্যকলাপ, যেমন ব্যায়াম বা তাপে থাকা, আপনার শরীরের তাপমাত্রা সাময়িকভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে।
আপনার শরীরের তাপমাত্রা হাইপোথ্যালামাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যা আপনার মস্তিষ্কের একটি অংশ। হাইপোথ্যালামাস আপনার শরীরের তাপমাত্রাকে মনিটর করে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী এটিকে সামঞ্জস্য করতে কাজ করে। যখন আপনার শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি বা খুব কম হয়ে যায়, তখন হাইপোথ্যালামাস কাজ করে আপনার শরীরকে ঠান্ডা বা গরম করতে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি হয়, তাহলে হাইপোথ্যালামাস আপনাকে ঘামতে পাঠাবে, যা আপনার শরীরকে ঠান্ডা করতে সাহায্য করবে। অন্যদিকে, যদি আপনার শরীরের তাপমাত্রা খুব কম হয়, তাহলে হাইপোথ্যালামাস আপনাকে কাঁপতে পাঠাবে, যা আপনার শরীরকে উষ্ণ করতে সাহায্য করবে।
মানুষের দেহের তাপমাত্রা কেন স্থির রাখা গুরুত্বপূর্ণ?
মানুষের দেহের তাপমাত্রা কেন স্থির রাখা গুরুত্বপূর্ণ, সেই সম্পর্কে জানার আগে আমাদের প্রথমে আমাদের দেহের তাপমাত্রা কেন এবং কিভাবে পরিবর্তিত হয়, সেই সম্পর্কে জানা দরকার। আমাদের শরীর একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কাজ করার জন্য তৈরি, যা সাধারণত ৯৮.৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস হিসাবে বিবেচিত হয়। যখন আমাদের শরীরের তাপমাত্রা এই স্বাভাবিক পরিসর থেকে খুব বেশি হ্রাস পায় বা বেড়ে যায়, তখন আমাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখার প্রধান কারণ হল আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গগুলি যথাযথভাবে কাজ করতে সক্ষম হওয়া। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গেরই স্বাভাবিকভাবে কাজ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। যখন আমাদের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক পরিসর থেকে খুব বেশি হ্রাস পায় বা বেড়ে যায়, তখন এই অঙ্গগুলি আর সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, যার ফলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কী কী কারণে দেহের তাপমাত্রা বাড়তে পারে?
মানুষের দেহের তাপমাত্রা সবসময় ৯৮° সেলসিয়াস থাকে না। এটি সাধারণত ৯৭.৬° ফারেনহাইট (৩৬.৫° সেলসিয়াস) থেকে ৯৯.৬° ফারেনহাইট (৩৭.৬° সেলসিয়াস) এর মধ্যে থাকে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এই তাপমাত্রা বাড়তে পারে।
প্রথমত, ব্যায়াম করার সময় আপনার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এটি ঘটে কারণ ব্যায়াম আপনার পেশীগুলিকে উদ্দীপিত করে, যা তাপ উৎপন্ন করে। দ্বিতীয়ত, বেশি গরম পরিবেশে থাকলে আপনার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এটি ঘটে কারণ আপনার শরীর নিজেকে ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করে এবং এই প্রক্রিয়ায় তাপ উৎপন্ন করে। তৃতীয়ত, কিছু নির্দিষ্ট খাবার খেলে আপনার শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে পারে। এটি ঘটে কারণ এই খাবারগুলি আপনার বিপাক ক্রিয়াকে বাড়িয়ে তোলে, যার ফলে তাপ উৎপন্ন হয়। চতুর্থত, কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসাবে আপনার শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে পারে।
এটি ঘটে কারণ এই ওষুধগুলি আপনার শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। পঞ্চমত, কিছু নির্দিষ্ট চিকিৎসা অবস্থা, যেমন সংক্রমণ বা হাইপারথাইরয়েডিজম, আপনার শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি ঘটে কারণ এই অবস্থাগুলি আপনার শরীরের তাপ উৎপাদন বা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
কী কী কারণে দেহের তাপমাত্রা কমতে পারে?
মানুষের দেহের তাপমাত্রা সবসময় ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট থাকে কেন?
আমাদের শরীরের তাপমাত্রা 98.6 ডিগ্রি ফারেনহাইট (37 ডিগ্রি সেলসিয়াস) এর কাছাকাছি থাকে। এই তাপমাত্রা আমাদের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে, কিছু কারণবশত আমাদের শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ কমে যেতে পারে। তাপমাত্রা হঠাৎ কমে গেলে শরীরে কাঁপুনি, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, চামড়া ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা ও বিভ্রান্তির মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলে এটি জরুরী অবস্থা হতে পারে, তাই উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
যখন দেহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হয় তখন কী করবেন?
আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। কিন্তু যখন আমরা অসুস্থ হই বা আমাদের পরিবেশের তাপমাত্রা খুব বেশি বা খুব কম হয়, তখন আমাদের দেহের তাপমাত্রা এই স্বাভাবিক পরিসরের বাইরে যেতে পারে।
যদি তোমার দেহের তাপমাত্রা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার বেশি হয়, তবে তোমার জ্বর আছে। জ্বর একটি সাধারণ উপসর্গ যা ইঙ্গিত দেয় যে তোমার শরীর একটি সংক্রমণ বা অন্যান্য অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়ছে। জ্বর হলে তোমার ঠাণ্ডা লাগতে পারে, কাঁপতে পারে এবং মাথাব্যথা হতে পারে।
তোমার দেহের তাপমাত্রা ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার কম হয়, তবে তোমার হাইপোথার্মিয়া হয়েছে। হাইপোথার্মিয়া একটি জীবন-হুমকিরূপ অবস্থা যা তখন ঘটে যখন তোমার শরীর খুব বেশি ঠাণ্ডা হয়ে যায়। হাইপোথার্মিয়া হলে তোমার কাঁপতে পারে, তোমার ত্বক নীল হয়ে যেতে পারে এবং তোমার চেতনা হারাতে পারে।
যদি তোমার দেহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হয়, তবে তোমার অবিলম্বে চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া উচিত। জ্বর বা হাইপোথার্মিয়া চিকিৎসা না করলে মারাত্মক জটিলতা হতে পারে।
Leave a Reply