হাজার হাজার কোটি নিউরনের দ্বারা গঠিত আমাদের স্নায়ুতন্ত্র আমাদের শরীরের প্রধান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। এই নিউরনগুলি আমাদের চিন্তা, অনুভূতি, এবং আচরণের জন্য দায়ী। তবে, নিউরনগুলি যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যটি দ্বারা পৃথক করা হয় তা হল সেগুলি অবিভাজ্য। অন্য কথায়, তারা বিভক্ত হতে বা নতুন নিউরন তৈরি করতে পারে না।
এই নিবন্ধে, আমি নিউরনের অবিভাজ্যতার কারণগুলি অন্বেষণ করব এবং তারা ক্লিনিক্যাল প্রেক্ষাপটে নিউরোজেনেসিসকে কীভাবে প্রভাবিত করে তা আলোচনা করব। নিউরনের অবিভাজ্যতা বোঝা আমাদের শরীরের সবচেয়ে জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির আরও গভীর প্রশংসা অর্জনে সাহায্য করবে।
নিউরনের অবিভাজ্যতার সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও গুরুত্ব
নিউরন হল আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের মূল একক। এগুলি আমাদের শরীরকে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং স্মৃতি সংরক্ষণ করার ক্ষমতা দেয়। তবে, নিউরনগুলি একটি অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য দ্বারা চিহ্নিত করা হয়: তারা বিভাজিত হতে পারে না।
এই অবিভাজ্যতা অন্যান্য কোষের তুলনায় নিউরনকে অনন্য করে তোলে। বেশিরভাগ কোষ তাদের জীবনকালে বারবার বিভাজিত হতে পারে, তবে নিউরনগুলি নয়। একবার তৈরি হওয়ার পর, নিউরনগুলি সাধারণত আমাদের জীবদ্দশায় টিকে থাকে। এর অর্থ হল আমরা জন্মের সাথে যে নিউরন পাই তা আমাদের মৃত্যুর সময় পর্যন্ত থাকে।
নিউরন অবিভাজ্য হওয়ার কারণটি এখনও সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায়নি। তবে, কিছু সম্ভাব্য ব্যাখ্যা রয়েছে। একটি তত্ত্ব হল যে নিউরন অবিভাজ্য কারণ তারা অত্যন্ত বিশেষায়িত। তারা তাদের ফাংশন সঠিকভাবে সম্পাদন করতে অত্যন্ত জটিল সার্কিট গঠন করে। বিভাজন এই জটিলতা ব্যাহত করতে পারে।
আরেকটি তত্ত্ব হল যে নিউরন অবিভাজ্য কারণ তারা দীর্ঘায়ু হওয়ার ডিজাইন করা হয়েছে। তারা আমাদের জীবনকালে টিকে থাকতে হবে, যার মানে তাদের ক্ষতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হতে হবে। বিভাজন নিউরনকে দুর্বল করতে পারে এবং তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
নিউরনের অবিভাজ্যতা এমন একটি বৈশিষ্ট্য যা আমাদের মস্তিষ্কের ফাংশনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। যদি নিউরন বিভাজিত হতে পারত, তবে আমাদের মস্তিষ্কের কাঠামো এবং কার্যকারিতা একেবারে আলাদা হত। আমাদের শেখার, স্মৃতি সংরক্ষণ করার এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সম্ভবত খারাপ হত। তাই, যদিও নিউরনের অবিভাজ্যতা একটি বিধিনিষেধের মতো মনে হতে পারে, এটি আসলে আমাদের মস্তিষ্ককে সঠিকভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
মাইটোসিসের অভাব: নিউরন নিউক্লিয়াসের ইন্টারফেজ পর্যায়ে স্থির হয়ে যায় এবং ডিএনএ প্রতিলিপি তৈরি করে না
নিউরনের বিভাজন না হওয়ার পেছনে মাইটোসিসের অনুপস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। মাইটোসিস একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি কোষ দুটি অভিন্ন সন্তান কোষে বিভক্ত হয়। নিউরনগুলিতে এই প্রক্রিয়াটি অনুপস্থিত, যা তাদের বিভাজন থেকে বিরত রাখে।
নিউরনের নিউক্লিয়াসে ইন্টারফেজ পর্যায়ে থাকাকালীন, তাদের ডিএনএ প্রতিলিপি তৈরি হয় না। ফলে, মাইটোসিসের জন্য প্রয়োজনীয় জেনেটিক উপাদানের অভাব হয়। এই ডিএনএ প্রতিলিপি স্থির থাকে, যা নিউরনকে অ-বিভাজনীয় কোষে পরিণত করে।
মাইটোসিসের অভাব নিউরনগুলিকে স্থায়ী ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। মাইটোসিসের সময় কোষের ভুল বিভাজন মারাত্মক পরিণতি ঘটাতে পারে, যেমন ক্যান্সার। নিউরনগুলিতে মাইটোসিসের অভাব এই ঝুঁকি হ্রাস করে এবং তাদের সঠিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করে।
পোস্ট-মাইটোটিক অবস্থা: অপরিণত নিউরন মাইটোসিস সম্পূর্ণ করে এবং অপরিবর্তনীয়ভাবে পোস্ট-মাইটোটিক অবস্থায় প্রবেশ করে
। এই অবস্থায় নিউরনগুলি আর বিভক্ত হতে পারে না এবং এদের স্থায়ী রূপ ধারণ করে। মাইটোসিসের পরে, নিউরনগুলি বিভিন্ন স্তরের পরিপক্কতায় প্রবেশ করে, শেষ পর্যন্ত তাদের কার্যকরী অবস্থায় পৌঁছায়। এই প্রক্রিয়াটিতে নিউরনগুলি তাদের অ্যাক্সন এবং ডেনড্রাইট বিকাশ করে, যা তাদের যোগাযোগের অনুমতি দেয়। এছাড়াও, নিউরনগুলি তাদের সিন্যাপটিক সংযোগ গঠন করে, যা তাদের অন্যান্য নিউরন এবং লক্ষ্য অঙ্গগুলির সাথে যোগাযোগ করতে দেয়। এই পোস্ট-মাইটোটিক অবস্থা নিউরনের কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি তাদের তাদের জটিল নেটওয়ার্ক এবং সার্কিট গঠন করার অনুমতি দেয় যা আমাদের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি এবং আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে।
সেন্ট্রোসোমের অভাব: নিউরনে সেন্ট্রোসোম থাকে না, যা মাইটোসিসের জন্য স্পিন্ডল ফাইবার উৎপন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয়
নিউরন কেন বিভাজিত হয় না তা বুঝতে গেলে সেন্ট্রোসোমের অভাব বুঝতে হবে। সেন্ট্রোসোম ছোট, গোলাকার অঙ্গক যা মাইটোসিস নামক কোষ বিভাজনের প্রক্রিয়া চলাকালীন মাইক্রোটিউবুল নামক ফাইবার তৈরি করে। এই ফাইবারগুলি কোষের বিভিন্ন অংশকে বিপরীত দিকে টানার মাধ্যমে কোষটিকে দুটি ভাগে বিভক্ত করতে সাহায্য করে।
যদিও সেন্ট্রোসোম অনেক ধরণের কোষে পাওয়া যায়, তবে এটি নিউরনে অনুপস্থিত। এর অর্থ নিউরনগুলি মাইটোসিসের মাধ্যমে বিভক্ত হতে অক্ষম। এই অক্ষমতার কারণে নিউরনগুলি একবার গঠিত হলে আর বিভাজিত হয় না। এই অক্ষমতা নিউরনের ক্ষয়ক্ষতি বা মৃত্যুর বিরুদ্ধে সুরক্ষার একটি উপায় হিসাবেও কাজ করে, কারণ বিভাজন না করার ফলে তাদের জেনেটিক উপাদানের অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ঝুঁকি কমে যায়।
টেলোমের ক্ষয়: নিউরনে টেলোমের ক্ষয় হয় না, যা কোষ বিভাজনের সাথে সংযুক্ত একটি সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা
নিউরন কেন বিভাজিত হয় না তা বুঝতে গেলে সেন্ট্রোসোমের অভাব বুঝতে হবে। সেন্ট্রোসোম ছোট, গোলাকার অঙ্গক যা মাইটোসিস নামক কোষ বিভাজনের প্রক্রিয়া চলাকালীন মাইক্রোটিউবুল নামক ফাইবার তৈরি করে। এই ফাইবারগুলি কোষের বিভিন্ন অংশকে বিপরীত দিকে টানার মাধ্যমে কোষটিকে দুটি ভাগে বিভক্ত করতে সাহায্য করে।
যদিও সেন্ট্রোসোম অনেক ধরণের কোষে পাওয়া যায়, তবে এটি নিউরনে অনুপস্থিত। এর অর্থ নিউরনগুলি মাইটোসিসের মাধ্যমে বিভক্ত হতে অক্ষম। এই অক্ষমতার কারণে নিউরনগুলি একবার গঠিত হলে আর বিভাজিত হয় না। এই অক্ষমতা নিউরনের ক্ষয়ক্ষতি বা মৃত্যুর বিরুদ্ধে সুরক্ষার একটি উপায় হিসাবেও কাজ করে, কারণ বিভাজন না করার ফলে তাদের জেনেটিক উপাদানের অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ঝুঁকি কমে যায়।
উদ্দীপনা নির্ভরতা: নিউরন প্রাণঘাতী ক্ষতির পরেই সীমিত মাত্রায় পুনরায় উৎপন্ন করতে পারে, যা উদ্দীপনার সাথে জড়িত
নিউরন আমাদের শরীরের যোগাযোগ ব্যবস্থার মূল উপাদান। এরা একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও বিশেষ ধরনের কোষ যারা তথ্য প্রেরণ ও গ্রহণের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। একটি নিউরনে দুটি প্রধান অংশ থাকে, একটি হল সেল বডি এবং অপরটি হল অ্যাক্সন। সেল বডি নিউরনের কেন্দ্রীয় অংশ যেখানে নিউক্লিয়াস অবস্থিত। অ্যাক্সন একটি দীর্ঘ, সরু প্রসারণ যা তথ্য বাড়িয়ে দেয়।
নিউরনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি হল যে তারা বিভাজিত হতে পারে না। অর্থাৎ, তারা নতুন নিউরন তৈরি করতে পারে না। এটি অন্যান্য ধরনের কোষ থেকে নিউরনকে আলাদা করে, যা বিভাজন এবং নতুন কোষ তৈরির ক্ষমতা রাখে। নিউরনগুলির বিভাজন করার অক্ষমতা বিবর্তনের ফল বলে মনে করা হয়। সময়ের সাথে সাথে, নিউরনগুলি আরও বিশেষ হয়ে উঠেছে এবং তাদের বিভাজনের ক্ষমতা হারিয়েছে। এটি নিশ্চিত করে যে আমাদের স্নায়ুতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করে এবং আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখা যায়।
নিউরনের অবিভাজ্যতার কারণ এবং নিউরোজেনেসিসের ক্লিনিক্যাল প্রভাবের সংক্ষিপ্তসার
নিউরনের অবিভাজ্যতার কারণগুলি বোঝার জন্য, প্রথমে আমাদের নিউরনের অনন্য গঠন এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে হবে। নিউরনগুলি হলো বিশেষায়িত কোষ যা আমাদের স্নায়ুতন্ত্র গঠন করে এবং তাদের দুটি প্রধান অংশ রয়েছে: সেল বডি এবং নিউরাইটস। সেল বডি হলো নিউরনের কেন্দ্রীয় অংশ যা নিউক্লিয়াস, সাইটোপ্লাজম এবং অন্যান্য অরগানেল ধারণ করে। নিউরাইটস দীর্ঘ, সিলিন্ডারাকার প্রক্রিয়া যা সেল বডি থেকে প্রসারিত হয় এবং দুটি প্রকারের হয়: অ্যাক্সন এবং ডেনড্রাইট। অ্যাক্সনগুলি দীর্ঘ, একক প্রক্রিয়া যা নিউরনের সংকেতগুলি অন্যান্য নিউরন বা লক্ষ্য কোষে প্রেরণ করে। অন্যদিকে, ডেনড্রাইটগুলি শাখাযুক্ত প্রক্রিয়া যা অন্যান্য নিউরন থেকে অ্যাক্সনের সংকেতগুলি গ্রহণ করে এবং সেগুলিকে সেল বডিে প্রেরণ করে।
নিউরনগুলি সাধারণত তাদের জীবনকাল ধরে অবিভাজিত থাকে, যা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তবে কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে, যেমন হিপোক্যাম্পাস, কিছু নিউরোজেনেসিস বা নতুন নিউরন উৎপাদন ঘটে। তবে এই প্রক্রিয়াটি সীমিত এবং প্রাপ্তবয়স্ক মস্তিষ্কের মধ্যে কেবলমাত্র কয়েকটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে ঘটে।
Leave a Reply