আমরা রসায়নের পাঠ্যপুস্তকের প্রতি পাতায় চ্যালকোজেনের কথা শুনেছি, কিন্তু তারা আসলে কী এবং কেন এত গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা সত্যিই বুঝি না। এই ব্লগে, আমি চ্যালকোজেনের আদ্যোপান্ত নিয়ে আলোচনা করব, যা আমাদের এই মৌলসমূহের মূল বৈশিষ্ট্য, তাদের রাসায়নিক আচরণ এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তাদের প্রাসঙ্গিকতা বোঝার সুযোগ দেবে। আমরা অক্সিজেন, গন্ধক, সেলেনিয়াম, টেলুরিয়াম এবং পলোনিয়ামের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের গভীরে যাব, যা আমাদের এই আকর্ষণীয় মৌলসমূহের প্রতি একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেবে।
চ্যালকোজেনের সংজ্ঞা
পর্যায় সারণীতে ১৬তম গ্রুপের মৌলগুলোকে চ্যালকোজেন বলা হয়। এর কারণ হলো, এই মৌলগুলো অক্সিজেন, সালফার, সেলেনিয়াম এবং টেলুরিয়ামের মতো অধাতুর মৌল যা অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে অক্সাইড তৈরি করে। এছাড়াও, এই মৌলগুলো হাইড্রোজেনের সাথে যুক্ত হয়ে হাইড্রাইড তৈরি করে। চ্যালকোজেন মৌলগুলোর সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো:
- এগুলো অধাতুর মৌল।
- এগুলোর ৬টি ভ্যালেন্স ইলেকট্রন রয়েছে।
- এগুলো অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে অক্সাইড তৈরি করে।
- এগুলো হাইড্রোজেনের সাথে যুক্ত হয়ে হাইড্রাইড তৈরি করে।
- এগুলো সাধারণত কঠিন এবং ভঙ্গুর পদার্থ।
- এগুলো বিদ্যুতের দুর্বল পরিবাহী।
- এগুলো তাপের দুর্বল পরিবাহী।
গ্রুপ ১৬-এর মৌলগুলোর সাধারণ বৈশিষ্ট্য
পর্যায় সারণীর ১৬ নম্বর গ্রুপের মৌলগুলোকে চ্যালকোজেন নামে অভিহিত করা হয়। এদের নামকরণ করা হয়েছে গ্রিক শব্দ “খ্যালকোস” থেকে, যার অর্থ তামা। এটি কারণ এই গ্রুপের প্রথম দুটি মৌল, অক্সিজেন এবং সালফার, তামার খনিজগুলোতে সাধারণত পাওয়া যায়।
চ্যালকোজেনস সাধারণত অধাতব, যাদের বৈদ্যুতিক নেতিবাচকতা মধ্যম মাত্রার। এগুলো সাধারণত দ্বিপরমাণুক অণু হিসাবে বিদ্যমান এবং হাইড্রোজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অ্যাসিড গঠন করে। এগুলো অন্যান্য মৌলের সাঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন ধরণের যৌগ তৈরি করতে পারে, যেমন অক্সাইড, সালফাইড এবং সেলেনাইড।
চ্যালকোজেনসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার রয়েছে। অক্সিজেন আমাদের বায়ুমণ্ডলের একটি প্রধান উপাদান এবং জীবনী প্রক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য। সালফার বিভিন্ন শিল্প প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়, যেমন সার, কাগজ এবং রাবার উৎপাদন। সেলেনিয়াম ফটোকপির এবং প্রিন্টারে ব্যবহৃত হয়। টেলুরিয়াম সৌরকোষ এবং ইনফ্রারেড ডিটেক্টরের মতো আধুনিক ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়।
অক্সিজেনের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য
চ্যালকোজেন হল পর্যায় সারণীর গ্রুপ ১৬ তে অবস্থিত মৌলিক পদার্থগুলোকে বলা হয়। এদের মধ্যে রয়েছে অক্সিজেন, সালফার, সেলেনিয়াম, টেলুরিয়াম এবং পোলোনিয়াম। এই মৌলগুলোর কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা তাদেরকে অন্যান্য গ্রুপ থেকে আলাদা করে।
চ্যালকোজেনগুলি সাধারণত অধাতব বা দুর্বল ধাতব প্রকৃতির। এগুলো শক্তিশালী অক্সিজেনকারী এজেন্ট এবং অন্যান্য মৌলের সাথে যৌগ গঠন করতে পারে। এগুলো সাধারণত দ্বিপরমাণুক অণু হিসেবে পাওয়া যায়। এদের ইলেক্ট্রন বিন্যাসের শেষ কক্ষে ৬টি ইলেকট্রন থাকে, যা তাদেরকে স্থিতিশীল করে তোলে।
অক্সিজেন চ্যালকোজেন গ্রুপের সবচেয়ে হালকা এবং সবচেয়ে প্রচুর মৌল। এটি বায়ুমণ্ডলে প্রায় ২১% পরিমাণে পাওয়া যায় এবং সকল জীবনের জন্য অপরিহার্য। অক্সিজেন দহন প্রক্রিয়ায় জড়িত, যা শক্তি উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি জল, কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং অন্যান্য অনেক যৌগের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
সালফার চ্যালকোজেন গ্রুপের দ্বিতীয় হালকা মৌল। এটি প্রকৃতিতে বিভিন্ন আকারে পাওয়া যায়, যেমন স্ফটিক, খনিজ এবং সালফেট। সালফার ইন্ধন, ওষুধ এবং রাসায়নিক শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
সেলেনিয়াম চ্যালকোজেন গ্রুপের তৃতীয় হালকা মৌল। এটি একটি অর্ধপরিবাহী এবং সৌরকোষ এবং ফটোকপি মেশিনে ব্যবহৃত হয়।
টেলুরিয়াম চ্যালকোজেন গ্রুপের চতুর্থ হালকা মৌল। এটি একটি বিরল মৌল এবং সেমিকন্ডাক্টর এবং থার্মোইলেক্ট্রিক উপকরণে ব্যবহৃত হয়।
পোলোনিয়াম চ্যালকোজেন গ্রুপের সর্বশেষ এবং সবচেয়ে ভারী মৌল। এটি একটি তেজস্ক্রিয় মৌল এবং পারমাণবিক শক্তি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
চ্যালকোজেনগুলি রসায়ন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এগুলো সাধারণত অক্সাইড, সালফাইড, সেলেনাইড, টেলুরাইড এবং পোলোনাইড হিসাবে পাওয়া যায়। এই যৌগগুলি ব্যাটারি, সিরামিক, কাচ এবং অন্যান্য অনেক পণ্যে ব্যবহৃত হয়।
গন্ধকের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য
গন্ধক একটি প্রাচীন কাল থেকে পরিচিত মৌল। এটি একটি হলুদ বর্ণের, দুর্গন্ধযুক্ত, ভঙ্গুর কঠিন পদার্থ। গন্ধকের পরমাণু ক্রমিক 16 এবং পারমাণবিক ভর 32.06। এটি অ্যাম্ফোটেরিক প্রকৃতির একটি বহুরূপী মৌল, যার অর্থ এটি অ্যাসিড এবং ক্ষার উভয়ের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে।
গন্ধকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি হল এর জ্বলনশীলতা। গন্ধক বাতাসে সহজেই জ্বলে সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন করে। এই জ্বলনশীলতা গন্ধকের বিভিন্ন প্রয়োগের ভিত্তি, যেমন ম্যাচ এবং বারুদের তৈরি করা।
গন্ধক অ্যাসিড এবং ক্ষার উভয়ের সাথে বিক্রিয়া করে লবণ তৈরি করে। অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে এটি সালফেট লবণ তৈরি করে, যখন ক্ষারের সাথে বিক্রিয়া করে এটি সালফাইড লবণ তৈরি করে। এই বিক্রিয়াগুলি বিভিন্ন রাসায়নিক শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ।
গন্ধকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য হল এর অক্সিডেশন এবং হ্রাসের প্রবণতা। গন্ধককে অক্সিজেন দ্বারা সহজেই অক্সিডেজ করা যায়, যার ফলে সালফার ডাই অক্সাইড এবং সালফার ট্রাই অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। বিপরীতভাবে, হাইড্রোজেন বা কার্বন মনোক্সাইডের মতো অপকারকদের দ্বারা গন্ধককে হ্রাস করা যায়।
সেলেনিয়ামের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য
পর্যায় সারণীর গ্রুপ ১৬-এ অবস্থিত মৌলগুলোকে চ্যালকোজেন বলা হয়। কারণ এরা ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী। তাদের বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা ধাতুর চেয়ে কম কিন্তু অধাতুর চেয়ে বেশি। চ্যালকোজেন মৌলগুলোর সাধারণ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি হলো যে এদের বাইরের শেলে ৬টি ইলেকট্রন থাকে। এই ইলেকট্রনগুলো সহজেই অপসারণ করা যায় এবং এদের অক্সাইডেশন অবস্থা -2 হতে +6 পর্যন্ত পরিবর্তিত হতে পারে। এই মৌলগুলোর অক্সাইডগুলো সাধারণত অম্লীয় প্রকৃতির। চ্যালকোজেন মৌলগুলোর মধ্যে অক্সিজেন, সালফার, সেলেনিয়াম, টেলুরিয়াম এবং পোলোনিয়াম অন্তর্ভুক্ত। এদের মধ্যে অক্সিজেন সবচেয়ে বেশি বিক্রিয়াশীল এবং পোলোনিয়াম সবচেয়ে কম বিক্রিয়াশীল।
টেলুরিয়াম এবং পলোনিয়ামের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য
টেলুরিয়াম ও পলোনিয়াম গ্রুপ ১৬-এর চ্যালকোজেন মৌল। এই মৌলদ্বয়ের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এদের পরমাণু ক্রমিক সংখ্যা ৫২ এবং ৮৪। পর্যায় সারণীতে এরা অক্সিজেন, সালফার, সেলেনিয়াম ও টেলুরিয়ামের পরে অবস্থিত। তাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো:
- ধাতবতা বৃদ্ধি: গ্রুপ ১৬-এ উপরে উঠলে ধাতবতা বৃদ্ধি পায়। ফলে টেলুরিয়াম ও পলোনিয়াম ধাতুর মতো কিছু বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।
- অক্সিজেন প্রতি আকর্ষণ: চ্যালকোজেন মৌলগুলি অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অক্সাইড তৈরি করে। টেলুরিয়াম ও পলোনিয়ামের অক্সাইডগুলি সাধারণত অ্যাসিডিক প্রকৃতির।
- হ্যালোজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া: গ্রুপ ১৬-এর মৌলগুলি হ্যালোজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে হ্যালাইড তৈরি করে। টেলুরিয়াম ও পলোনিয়ামের হ্যালাইডগুলি সাধারণত সহযোজী যৌগ।
- অন্যান্য ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়া: টেলুরিয়াম ও পলোনিয়াম অন্যান্য ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়া করে চ্যালকোজেনাইড তৈরি করে। এগুলি সাধারণত আয়নিক যৌগ।
- আইসোটোপ: টেলুরিয়ামের ৩০টিরও বেশি আইসোটোপ রয়েছে, যার মধ্যে টেলুরিয়াম-১২৮ সবচেয়ে স্থিতিশীল। পলোনিয়ামের ২৫টি আইসোটোপ রয়েছে, যার মধ্যে পলোনিয়াম-২১০ সবচেয়ে স্থিতিশীল।
Leave a Reply