আমরা ছোটবেলা থেকেই জানি যে, আমরা মহাকাশে বাস করি। কিন্তু কখনো কি আমরা ভেবেছি যে, এই মহাকাশটা কি দিয়ে তৈরি, এর গঠন কেমন? আবার কি কখনো ভেবেছি যে, মহাকাশে কাজ করা এতটা কঠিন কেন? মহাকাশচারীরা মহাকাশে গেলে তাদের এতো অসুবিধে কেন হয়? মহাকাশে যাওয়া মানুষ অল্প সময়ের মধ্যে এতটা বদলে যান কেন? এ সব কিছুর জন্য মূল কারণটা হল মহাকাশের কিছু বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের মাটির উপর থাকা অবস্থায় বোঝা যায় না। তাই এই বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানা থাকলে, মহাকাশ সম্পর্কে অনেক কিছুই বোঝা যায়। এই আর্টিকেলের মধ্যে আমি মূলত মহাকাশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিয়েই আলোচনা করবো। আলোচনা করার সময় মহাকাশের গঠন, তার ওজন, এখানে দোলনকালের বিশেষত্ব এবং এই সকল বৈশিষ্ট্যের সাথে মহাকাশের কি কি সম্পর্ক আছে তা নিয়ে বিস্তারিত ভাবে জানানোর চেষ্টা করবো।
মহাকাশের গঠন
গুরুত্বাকর্ষণ বল হল সংরক্ষণশীল বল কারণ এটি একটি মৌলিক বল যা কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে এবং সেই কাজকর্ম সম্পূর্ণ হওয়ার পরে শক্তিটি আবার ফিরে পেতে সক্ষম হয়। যখন কোনো বস্তুকে আকাশে নিক্ষেপ করা হয়, তখন গুরুত্বাকর্ষণ বল সেই বস্তুর উপর কাজ করে এবং এটিকে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে টানে। এই প্রক্রিয়ায়, গুরুত্বাকর্ষণ বল বস্তুর গতিশক্তিকে অপসারণ করে এবং এটিকে বিভব শক্তিতে রূপান্তরিত করে। যখন বস্তুটি তার সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছায়, তখন তার গতিশক্তি শূন্য হয়ে যায় এবং সমগ্র শক্তি বিভব শক্তি হিসাবে সংরক্ষিত হয়। তারপর, বস্তুটি পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে নেমে আসে এবং গুরুত্বাকর্ষণ বল আবার কাজ করে, এবার বিভব শক্তিকে গতিশক্তিতে রূপান্তরিত করে। এই প্রক্রিয়ায়, গুরুত্বাকর্ষণ বল শুরুতে অপসারণ করা শক্তিটি ফিরিয়ে দেয়, যা প্রমাণ করে যে এটি একটি সংরক্ষণশীল বল।
重力 এবং তার প্রভাব
মহাকাশে দোলনকাল কেন অসীম, তা বোঝার জন্য আমাদের পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাব বুঝতে হবে। মাধ্যাকর্ষণ হলো এমন এক প্রাকৃতিক বল যা সবকিছুকে একে অপরের দিকে টানে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বল আমাদের পৃষ্ঠের সাথে আবদ্ধ করে রাখে এবং পৃথিবীর চারপাশে চলাফেরা করতে থাকা স্যাটেলাইটগুলোকে আবদ্ধ করে রাখে। মহাকাশে দোলনকাল অসীম কারণ মহাকাশে কোনো বাহ্যিক মাধ্যাকর্ষণ বল নেই যা বস্তুকে থামাতে বা এর গতিকে পরিবর্তন করতে পারে। তাই, মহাকাশে বস্তুগুলো একটি নির্দিষ্ট বেগ নিয়ে চলতে থাকে, যা তাদেরকে ক্রমাগত গতিশীল করে রাখে এবং তাদের দোলনকাল অসীম হয়ে যায়।
দোলন চলনের সূত্র
মহাকাশে দোলনকাল কেন অসীম, তা বোঝার জন্য আমাদের পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাব বুঝতে হবে। মাধ্যাকর্ষণ হলো এমন এক প্রাকৃতিক বল যা সবকিছুকে একে অপরের দিকে টানে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বল আমাদের পৃষ্ঠের সাথে আবদ্ধ করে রাখে এবং পৃথিবীর চারপাশে চলাফেরা করতে থাকা স্যাটেলাইটগুলোকে আবদ্ধ করে রাখে। মহাকাশে দোলনকাল অসীম কারণ মহাকাশে কোনো বাহ্যিক মাধ্যাকর্ষণ বল নেই যা বস্তুকে থামাতে বা এর গতিকে পরিবর্তন করতে পারে। তাই, মহাকাশে বস্তুগুলো একটি নির্দিষ্ট বেগ নিয়ে চলতে থাকে, যা তাদেরকে ক্রমাগত গতিশীল করে রাখে এবং তাদের দোলনকাল অসীম হয়ে যায়।
মহাকাশে দোলনকালের বিশেষ ক্ষেত্রে
মহাকাশে দোলনকালের অসীমতা সম্পর্কে জানার আগে আমাদের এটি বুঝতে হবে। মহাকাশে দোলনকাল হলো কোনো বস্তুর পৃথিবীর চারদিকে একটি সম্পূর্ণ কক্ষপথ অতিক্রম করতে যে সময় নেয়। আমরা জানি, পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে চাঁদের 27.3 দিন লাগে, আর মঙ্গল গ্রহের 687 দিন। অর্থাৎ, মহাকাশে দোলনকাল বিভিন্ন গ্রহের আকার, ভর এবং পৃথিবী থেকে তাদের দূরত্বের ওপর নির্ভর করে।
এখন প্রশ্ন হলো, মহাকাশে দোলনকাল কেন অসীম? এর উত্তর বুঝতে হলে আমাদের কেপলারের তৃতীয় সূত্র সম্পর্কে জানতে হবে। কেপলারের তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী, কোনো গ্রহের দোলনকালের বর্গ হলো পৃথিবী থেকে তার গড় দূরত্বের ঘনফলের সমানুপাতিক। অর্থাৎ, যত বেশি দূরে কোনো গ্রহ পৃথিবী থেকে অবস্থিত, তার দোলনকাল তত বেশি হবে।
এই সূত্র অনুযায়ী, যদি কোনো বস্তু পৃথিবী থেকে অসীম দূরত্বে অবস্থিত হয়, তাহলে তার দোলনকালও অসীম হবে। কারণ, অসীম দূরত্বের ঘনফলও অসীম হবে। এ কারণেই মহাকাশে দোলনকাল অসীম হয়।
মহাকাশের বৈশিষ্ট্যের সাথে সম্পর্ক
মহাকাশের অবিরাম প্রসারণের কারণে মহাকাশে দোলনকাল অসীম। মহাকাশের প্রসারণের হার এতই দ্রুত যে কোনও বস্তু তার থেকে দূরে যেতে পারার আগেই তা আরও দূরে সরে যায়। এটি এমন একটি দৌড়ের মত যা আপনি জিততে পারবেন না, যত তাড়াতাড়ি আপনি চলবেন, আপনার লক্ষ্য তত দ্রুত আপনার থেকে সরে যাবে।
এই প্রসারণের ফলাফল হল যে মহাকাশের দূরবর্তী বস্তুগুলি আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে লালচে রঙের দেখায়। এই প্রক্রিয়াটিকে রেডশিফ্ট বলা হয় এবং এটি মহাকাশের প্রসারণের প্রমাণ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
মহাকাশের অসীম দোলনকালের আরেকটি প্রভাব হল যে আমরা কেবল মহাবিশ্বের একটি সীমিত অংশই দেখতে পাই। এই সীমাটিকে পারসেকের দিগন্ত বলা হয় এবং এটি প্রায় ৪৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এই সীমাটির বাইরে মহাবিশ্ব আমাদের কাছে দৃশ্যমান নয় কারণ আলো সেই দূরত্ব অতিক্রম করতে যথেষ্ট দ্রুত নয়।
মহাকাশের অসীম দোলনকাল আমাদের মহাবিশ্বের বয়স বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদি মহাকাশ অসীম না হত তবে মহাবিশ্ব অনেক ছোট হত এবং এটির বয়সও অনেক কম হত। মহাকাশের অসীম দোলনকাল আমাদেরকে এটি বুঝতে সাহায্য করে যে মহাবিশ্বটি আমাদের মনে করা হিসাবে অনেক বড় এবং প্রাচীন।
অসীম দোলনকালের বিষয়টি উপসংহার
মহাকাশের দোলনকাল কেন অসীম, তা বুঝতে আমাদের কিছু মৌলিক তত্ত্ব জানতে হবে। দোলনকাল হলো কোনো বস্তু একটি নির্দিষ্ট পথে দোলন সম্পন্ন করতে যে সময় নেয়। এটি সাধারণত সেকেন্ড বা মিনিটে প্রকাশ করা হয়।
পৃথিবীর মতো একটি গ্রহের দোলনকাল তার ভর এবং ঘূর্ণন গতিবেগের উপর নির্ভর করে। পৃথিবীর ভর বেশি এবং ঘূর্ণন গতিবেগ তুলনামূলকভাবে কম। এ কারণে এর দোলনকাল প্রায় 24 ঘণ্টা, যা আমরা এক দিন হিসেবে চিনি।
মহাকাশের ক্ষেত্রে অবস্থা ভিন্ন। মহাকাশ অসীম এবং এতে কোনো নির্দিষ্ট ভর বা ঘূর্ণন গতিবেগ নেই। এর ফলে মহাকাশে কোনো বস্তুর দোলনকালকে নির্ধারণ করার কোনো নির্দিষ্ট মানদণ্ড নেই। এজন্যই মহাকাশে দোলনকালকে অসীম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
Leave a Reply