কাঁচা কিংবা পাকা গোলমরিচে শুধু কি স্বাদ আর রঙেরই পার্থক্য?
গোলমরিচের ঝাল মানেই আমাদের প্রিয় ঝালের সোর্স, তবে অনেকেই হয়তো জানেন না যে এই ঝাল হলো এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ যার নাম ক্যাপসাইসিন। ক্যাপসাইসিনের উপস্থিতির কারণেই কিছু মরিচ খেলে মুখে ঝাল লাগে আর কিছু মরিচ খেলে লাগে না।
কিন্তু কাঁচা ও পাকা মরিচ দুই-ই তো আমরা খাই। তবে দুই ধরনের মরিচেই কি সমান ঝাল থাকে? আসলে কি মরিচের রঙের পার্থক্যই ঝালত্বের পার্থক্যের মূল কারণ? এই রহস্য উদঘাটনই এই লেখার উদ্দেশ্য। আমরা আজকে জানবো মরিচ পাকলে কীভাবে ক্যাপসাইসিনের উৎপাদন ঘটে, কী কী কারণে গোলমরিচে ঝালের মাত্রা কমবেশি হয়, রান্নার সময় কীভাবে ঝালের মাত্রা পরিবর্তন হয় এবং পাকা-কাঁচা মরিচের ঝালত্বের তুলনা।
পাকা ও কাঁচা মরিচের মধ্যে ক্যাপসাইসিনের পার্থক্য
কাঁচা মরিচের তুলনায় পাকা মরিচ বেশি ঝাল হওয়ার প্রধান কারণ হল ক্যাপসাইসিনের পরিমাণের পার্থক্য। ক্যাপসাইসিন একটি যৌগ যা মরিচকে ঝাল করে তোলে। যখন মরিচ পাকে, তখন ক্যাপসাইসিনের মাত্রা বাড়তে থাকে। এ কারণেই পাকা মরিচ কাঁচা মরিচের তুলনায় অনেক বেশি ঝাল হয়। এছাড়াও, যখন মরিচ পাকে, তখন এর শর্করার পরিমাণও বাড়ে। এই শর্করাগুলি ক্যাপসাইসিনের ঝাঁঝকে সাম্য রক্ষা করে, ফলে পাকা মরিচ কাঁচা মরিচের তুলনায় মিষ্টি এবং ঝালযুক্ত হয়। তবে, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে মরিচের জাতের উপরও এর ঝাঁঝ নির্ভর করে। কিছু মরিচের জাত স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের তুলনায় বেশি ঝাল হয়।
পরিপক্বতার সাথে ক্যাপসাইসিনের উৎপাদন
আমরা সবাই জানি যে কাঁচা মরিচের চেয়ে পাকা মরিচ অনেক বেশি ঝাল। কিন্তু এর কারণটি কি আপনি জানেন? এর উত্তরটি ক্যাপসাইসিন নামের একটি যৌগের সাথে সম্পর্কিত। ক্যাপসাইসিন হলো মরিচে পাওয়া একটি অ্যালকালয়েড যা আমাদের জিহ্বার উপর থাকা তাপ সংবেদনশীল রিসেপটরগুলিকে উত্তেজিত করে। যখন আমরা মরিচ খাই, তখন ক্যাপসাইসিন এই রিসেপটরগুলিকে সক্রিয় করে, যার ফলে আমাদের মস্তিষ্ককে মরিচটি ঝাল বলে বোঝায়।
পরিপক্ব মরিচে কাঁচা মরিচের চেয়ে বেশি ক্যাপসাইসিন থাকে। এর কারণ হল যে পরিপক্ব হওয়ার সময় মরিচের গাছটি ক্যাপসাইসিন উৎপাদন করে, যা মরিচকে পোকামাকড় এবং অন্যান্য শিকারীদের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। যত বেশি পরিপক্ব হয়, তত বেশি ক্যাপসাইসিন উৎপাদন করে এবং তত বেশি ঝাল হয়।
আপনি যদি ঝাল খাবারের অনুরাগী হন, তাহলে আপনি পাকা মরিচ ব্যবহার করতে পারেন আপনার খাবারে আরও তাপ যোগ করার জন্য। তবে, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে ক্যাপসাইসিন খুব শক্তিশালী যৌগ হতে পারে, তাই এটিকে অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।
অন্যান্য কারণ যা ঝালকে প্রভাবিত করে
কাঁচা মরিচের তুলনায় পাকা মরিচ বেশি ঝাল হওয়ার পেছনে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। প্রথমত, পাকা মরিচগুলিতে ক্যাপসাইসিনের পরিমাণ বেশি থাকে। ক্যাপসাইসিন মরিচকে ঝালের অনুভূতি দেয়। যত বেশী ক্যাপসাইসিন থাকে, মরিচটি তত বেশি ঝাল হয়। পাকা মরিচগুলি কাঁচা মরিচের তুলনায় বেশি সময় ধরে গাছে ঝুলে থাকে, যা তাদেরকে আরও ক্যাপসাইসিন উৎপাদন করার সুযোগ দেয়।
দ্বিতীয়ত, পাকা মরিচের কোষের দেয়াল পাতলা হয়, যা ক্যাপসাইসিনকে মুখের রিসেপ্টরগুলিতে আরও সহজে পৌঁছাতে দেয়। কাঁচা মরিচের কোষের দেয়ালগুলি আরও পুরু হয়, যা ক্যাপসাইসিনের জন্য একটি বাধা তৈরি করে।
তৃতীয়ত, পাকা মরিচগুলিতে শর্করা এবং অন্যান্য খাদ্যপদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে, যা ঝালের অনুভূতিকে আরও তীব্র করে তোলে। এই খাদ্যপদার্থগুলি ক্যাপসাইসিনকে মুখের মধ্যে আরও দীর্ঘক্ষণ রাখে, যা ঝালের অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়।
এসব কারণগুলি একত্রে কাজ করে পাকা মরিচকে কাঁচা মরিচের তুলনায় আরও ঝাল করে তোলে।
খাবার রান্নার সময় ক্যান্সারের প্রভাব
খাবার রান্নার সময় তাপমাত্রা খুব বেশী হওয়ার কারণে তাতে থাকা পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। আর তাপমাত্রা যত বেশী হয়, তত বেশী পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। তাই খাবার রান্না করার সময় তাপমাত্রা কম রাখা উচিত। আর সেই সঙ্গে অনেক সময় খাবারে নানান রকমের কেমিক্যাল এবং প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয়। এইসব কেমিক্যাল এবং প্রিজারভেটিভও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই খাবার রান্না করার সময় এইসব কেমিক্যাল এবং প্রিজারভেটিভ যত কম ব্যবহার করা যায়, ততই ভালো।
খাবার রান্নার সময় আমাদের কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত যাতে করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। যেমন-
- খাবার রান্না করার সময় তাপমাত্রা কম রাখুন।
- খাবারে নানান রকমের কেমিক্যাল এবং প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করবেন না।
- খাবার রান্না করার আগে ভালো করে ধুয়ে নিন।
- খাবার রান্না করার সময় কখনোই ধূমপান করবেন না।
- খাবার রান্না করার সময় রান্নাঘরের বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন।
বিভিন্ন দৃষ্টান্তের মাধ্যমে পাকা ও কাঁচা মরিচের ঝালত্বের তুলনা
আমরা প্রায় সবাই জানি যে, পাকা মরিচ কাঁচা মরিচের চেয়ে বেশি ঝাল হয়। কিন্তু কী কারণে এমনটা হয়, তা অনেকেই জানেন না। আজ আমরা সেই রহস্যই উন্মোচন করব।
কাঁচা মরিচের মধ্যে একটি রাসায়নিক যৌগ থাকে যার নাম ক্যাপসাইসিন। এই ক্যাপসাইসিন আমাদের জিহ্বায় থাকা টিআরপিভি১ রিসেপ্টরকে উত্তেজিত করে, যার ফলে আমরা ঝাল অনুভব করি। কাঁচা মরিচে এই ক্যাপসাইসিনের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম থাকে, তাই এটি কম ঝাল হয়।
পাকার সময় মরিচের মধ্যে ক্লোরোফিল ভেঙে যায় এবং ক্যারোটিনয়েডের পরিমাণ বাড়ে। এই ক্যারোটিনয়েড মরিচকে লাল, হলুদ বা কমলা রঙের করে তোলে। কিন্তু ক্যাপসাইসিনের পরিমাণও ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এর ফলে মরিচ আরও বেশি ঝাল হয়ে ওঠে।
এছাড়াও, পাকার সময় মরিচের কোষের দেয়াল পাতলা হয়ে যায়, যা ক্যাপসাইসিনের জন্য জিহ্বার সাথে আরও সহজে যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি করে। তাই পাকা মরিচ কাঁচা মরিচের চেয়ে অনেক বেশি ঝাল হয়।
Leave a Reply