কুকুরের জন্য স্বাস্থ্যকর আহার নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও কুকুরের বাণিজ্যিক খাদ্য উপলব্ধ, তবে কিছু ঘরোয়া খাবার রয়েছে যা আপনি আপনার পোষ্যকে নিরাপদে খাওয়াতে পারেন। এই নিবন্ধে, আমি সেইসব ঘরোয়া খাবারের একটি তালিকা উপস্থাপন করব যেগুলো আপনি আপনার কুকুরকে খাওয়াতে পারেন, সেইসাথে এমন কিছু খাবার এড়িয়ে চলবেন যা ক্ষতিকারক হতে পারে। এই তথ্য আপনাকে আপনার কুকুরের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর এবং ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্য নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
যে ঘরোয়া খাবারগুলো কুকুরকে খাওয়াতে পারেন।
গৃহপালিত কুকুরদের কী কী ঘরোয়া খাবার খাওয়ানো নিরাপদ, তা নিয়ে অনেক মতামত প্রচলিত আছে। কিছু খাবার তাদের জন্য স্বাস্থ্যকর হলেও অন্য কিছু খাবার তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই কুকুরকে ঘরোয়া খাবার খাওয়ানোর আগে জানতে হবে কোন কোন খাবার তাদের জন্য নিরাপদ।
সমস্ত ফল ও শাকসবজি কুকুরের জন্য নিরাপদ নয়। অ্যাপেল, কলা, ব্লুবেরি, গাজর, সেলারি এবং সবুজ মটরশুটির মতো কিছু ফল ও শাকসবজি কুকুরের জন্য স্বাস্থ্যকর। তবে আঙ্গুর, কিশমিশ, পেঁয়াজ, রসুন এবং মশরুমের মতো কিছু ফল এবং শাকসবজি কুকুরের জন্য ক্ষতিকar।
বেশিরভাগ মাংস কুকুরের জন্য নিরাপদ, তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। রান্না করা বা অপরিশোধিত মাংস খাওয়া উচিত নয় কারণ এটি ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী বহন করতে পারে। এছাড়াও, চর্বিযুক্ত মাংস এড়ানো উচিত কারণ এটি অগ্ন্যাশয় প্রদাহের কারণ হতে পারে।
বেশিরভাগ দুগ্ধজাত দ্রব্য কুকুরের জন্য নিরাপদ, তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। দুধ সাধারণত কুকুরের জন্য নিরাপদ হলেও কিছু কুকুর ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু হতে পারে। এছাড়াও, পনির এবং দই মাঝে মাঝে খাওয়ানো যায়, তবে সতর্কতার সঙ্গে খাওয়ানো উচিত কারণ এটি উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত এবং চর্বিযুক্ত হতে পারে।
বেশিরভাগ শস্য কুকুরের জন্য নিরাপদ, তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। সাদা চাল, বাদামী চাল এবং ওটমিলের মতো রান্না করা শস্য সাধারণত কুকুরের জন্য নিরাপদ হলেও কিছু কুকুর শস্য অসহিষ্ণু হতে পারে। এছাড়াও, আটা এবং পাস্তা মাঝে মাঝে খাওয়ানো যায়, তবে এটি উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত এবং শর্করাযুক্ত হতে পারে।
সবুজ শাকসবজি যেমন: কচু শাক, পালং শাক, কপি, শালগম, লালকপি।
এই সবজিগুলি পুষ্টিতে ভরপুর এবং আপনার কুকুরের জন্য খাওয়ার জন্য নিরাপদ। তবে, সেগুলি অবশ্যই সিদ্ধ বা ভাপে রান্না করে খাওয়াতে হবে। কাঁচা শাকসবজি হজম হতে পারে না এবং আপনার কুকুরের পেটের সমস্যা হতে পারে। আপনি আপনার কুকুরকে শাকসবজি দিয়ে সহজেই তার খাবারে ভিন্নতা আনতে পারবেন এবং তাকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করতে পারবেন।
ফল যেমন: আপেল, কলা, তরমুজ, স্ট্রবেরি, ম্যাঙ্গো
এই ফলগুলো কুকুরের জন্য ভালো এবং সুস্বাদু। আপেল ভিটামিন এ এবং সি’র একটি ভালো উৎস এবং এতে প্রচুর ফাইবার রয়েছে। কলা পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের একটি ভালো উৎস এবং এতে প্রচুর ভিটামিন বি6 রয়েছে। তরমুজ মূলত জল, তবে এটি ভিটামিন এ এবং সি এবং লাইকোপিনেরও একটি ভালো উৎস। স্ট্রবেরি ভিটামিন সি এবং ম্যাঙ্গানিজের একটি ভালো উৎস এবং এতে প্রচুর ফাইবার রয়েছে। ম্যাঙ্গো ভিটামিন এ এবং সি’র একটি ভালো উৎস এবং এতে প্রচুর বেটা-ক্যারোটিন রয়েছে।
তবে মনে রাখা দরকার যে সব ফল কুকুরের জন্যই নিরাপদ নয়। উদাহরণস্বরূপ, আঙ্গুর এবং কিশমিশ কুকুরের জন্য বিষাক্ত হতে পারে। আপনি নিশ্চিত না হলে কোনও নির্দিষ্ট ফল আপনার কুকুরের জন্য নিরাপদ কিনা তা অবশ্যই আপনার পশুচিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
মাংস যেমন: মুরগীর মাংস, মাছ যেমন: সামুদ্রিক মাছ, ডিম
গৃহপালিত খাবার হিসাবে কুকুরকে খাওয়ানোর জন্য নিরাপদ খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে:
- মাংস: মুরগীর মাংস, গরুর মাংস, শুকরের মাংস (যেগুলিতে ত্বক বা হাড় নেই)
- মাছ: সামুদ্রিক মাছ (যেমন স্যামন, হ্যালিবাট), সাদা মাছ (যেমন কড, ফ্লাউন্ডার)
- ডিম: সিদ্ধ বা অমলেট
- দুগ্ধজাত খাবার: দুধ, দই, পনির
- সবজি: গাজর, সেলারি, শসা, সবুজ মটরশুটি
- ফল: আপেল, কলা, ব্লুবেরি, তরমুজ
- পুরো শস্য: ওটমিল, বাদামী চাল, কুইনোয়া
এই খাবারগুলি প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ যা কুকুরের সুস্থতার জন্য জরুরি। তবে, কিছু গৃহপালিত খাবার রয়েছে যা কুকুরের জন্য বিষাক্ত বা ক্ষতিকারক হতে পারে, যেমন:
- অ্যালকোহল
- অ্যাভোকাডো
- চকলেট
- লসুন
- পেঁয়াজ
- মশলাদার খাবার
- জাদুকরি মশরুম
- *অনাব
- ওয়ালনাটস
- ক্যাফিন
- চিনি
- ফ্যাটি খাবার
- লবণাক্ত খাবার
দুধ, দই এবং চিজ
আপনি কি জানেন যে হল স্বাস্থ্যকর প্রোটিন এবং ক্যালসিয়ামের উত্স? এই খাবারগুলো শুধু মানুষের জন্যই উপকারী নয়, এটি আপনার কুকুরের জন্যও উপকারী হতে পারে। তবে, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে সমস্ত দুগ্ধজাত খাবার কুকুরের জন্য নিরাপদ নয়। কিছু দুগ্ধজাত খাবারে ল্যাকটোজ থাকে, যা কুকুরের পেট খারাপ করতে পারে। তাই, আপনি যদি আপনার কুকুরকে দুধ, দই বা চিজ দিতে চান, তাহলে অবশ্যই ল্যাকটোজ-মুক্ত সংস্করণটি নিশ্চিত করুন।
একবার আপনি ল্যাকটোজ-মুক্ত দুগ্ধজাত খাবার পেয়ে গেলে, আপনি মাঝে মাঝে আপনার কুকুরকে এটি খাওয়াতে পারেন। দুধ একটি ভাল প্রোটিন এবং ক্যালসিয়ামের উত্স, এবং এটি আপনার কুকুরের পশুর পেটকে শান্ত করতেও সাহায্য করতে পারে। দই প্রোটিন এবং ক্যালসিয়ামের আরেকটি ভাল উত্স, এবং এটি আপনার কুকুরের অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে উন্নত করতেও সাহায্য করতে পারে। চিজ প্রোটিন এবং ক্যালসিয়ামের একটি ঘন উত্স, এবং এটি একটি দুর্দান্ত প্রশিক্ষণের আচরণ হতে পারে।
যাইহোক, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে দুগ্ধজাত খাবার মাঝে মাঝে আপনার কুকুরকে দেওয়া উচিত। এগুলোতে প্রচুর ক্যালোরি থাকে, তাই আপনার অবশ্যই এগুলোকে মডারেশনে খাওয়ানো উচিত। এছাড়াও, আপনার কুকুরকে দুগ্ধজাত খাবার দেওয়ার আগে আপনার সবসময় আপনার ভেটের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
চকোলেট, কিশমিশ, আঙ্গুর, পেয়াজ, রসুন, আভোকাডো
হল কিছু খাবার যা কুকুরের জন্য নিরাপদ নয়। চকোলেটে থিওব্রোমিন নামক একটি উপাদান রয়েছে যা কুকুরদের জন্য বিষাক্ত। কিশমিশ এবং আঙ্গুরে একটি অজানা উপাদান রয়েছে যা কুকুরদের কিডনি ব্যর্থতার কারণ হতে পারে। পেয়াজ এবং রসুনে থাকা ডাইসালফাইডস কুকুরের রক্তের লাল রক্তকণিকাকে ধ্বংস করে অ্যানিমিয়ার কারণ হয়। আভোকাডোতে পারসিন নামক একটি উপাদান থাকে যা কুকুরদের হৃদয় এবং ফুসফুসে ক্ষতি করতে পারে।
তবে, অনেক ঘরোয়া খাবার রয়েছে যা কুকুরদের জন্য নিরাপদ এবং এমনকি তাদের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। উদাহরণস্বরূপ, সিদ্ধ করা মুরগি, মাছ, আলু এবং শাকসবজি কুকুরদের জন্য নিরাপদ। তবে, কুকুরকে খাওয়ানোর আগে সবসময় নিশ্চিত হয়ে নিন যে খাবারটি সিদ্ধ করা হয়েছে এবং কোনও মশলা বা তেল দেওয়া হয়নি।
আপনি যদি নিশ্চিত না হন যে আপনার কুকুর কোনও নির্দিষ্ট খাবার খেতে পারবে কিনা তবে আপনি সর্বদা আপনার পশুচিকিত্সকের সাথে পরামর্শ নিতে পারেন।
Leave a Reply