আমি একজন প্রযুক্তি নিয়ে লেখালেখি করি। আজকে আমি তোমাদের সাথে কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে এসেছি, যা আমাদের দেশ বাংলাদেশের ইন্টারনেটের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর বিষয়ে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে সংযুক্ত করার জন্য আমাদের দেশের আধুনিক ইন্টারনেট সংযোগের জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় ও প্রাণকেন্দ্রীয় যেই বিষয়টি, সেটি হচ্ছে সাবমেরিন কেবল সংযোগ। তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছ এই যে আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিশ্বের যেকোন প্রান্তের সাথে তাৎক্ষণিক ভাবে যুক্ত হয়ে যাচ্ছি, এবং অবিরাম তথ্য আদান-প্রদান করছি, সেই তথ্য আসলে কি ভাবে আমাদের কাছে আসে? অথবা কি ভাবে আমাদের দেশের তথ্য বিশ্বের কাছে পৌঁছায়? এর পেছনের প্রযুক্তিটাই হচ্ছে সাবমেরিন কেবল সংযোগ। আজ আমি তোমাদের সাথে বাংলাদেশের সাবমেরিন কেবল সংযোগের ইতিহাস, গুরুত্ব, সুবিধা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলব। তাহলে চল শুরু করা যাক।
বাংলাদেশের সাবমেরিন কেবল সংযোগের ইতিহাস এবং গুরুত্ব
১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সাবমেরিন কেবল সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত হয়। এটি ছিল বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা দেশকে বাকি বিশ্বের সাথে উচ্চ-গতির ইন্টারনেট সংযোগ সরবরাহ করে। প্রথম সাবমেরিন কেবলটি SEA-ME-WE 3 ছিল, যা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারত এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছিল। এটি 10 গিগাবাইট প্রতি সেকেন্ডের (Gbps) ক্ষমতা সহ একটি অপটিক্যাল ফাইবার কেবল ছিল।
তখন থেকে, বাংলাদেশ আরও বেশ কয়েকটি সাবমেরিন কেবল সিস্টেমে যোগ দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে SEA-ME-WE 4, SEA-ME-WE 5 এবং BPL। এই কেবলগুলি বাংলাদেশকে বিশ্বের বাকি অংশের সাথে আরও উচ্চ-ক্ষমতার সংযোগ সরবরাহ করেছে, যা দেশের অর্থনীতির বৃদ্ধি এবং উন্নতিতে অবদান রেখেছে। বর্তমানে, বাংলাদেশের প্রায় 40 টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সাবমেরিন কেবল সংযোগ রয়েছে, যা দেশকে বিশ্বের সবচেয়ে সংযুক্ত দেশগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে।
SEA-ME-WE 3 কেবলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং 2006 সালে সংযোগ স্থাপনের প্রভাব
এসইএ-এমই-উই 3 কেবল হল একটি সাবমেরিন কমিউনিকেশন কেবল সিস্টেম যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্য প্রাচ্য এবং পশ্চিম ইউরোপকে সংযুক্ত করে। এটি 39,000 কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এটি ২০১২ সালে পরিষেবা শুরু করে। এসইএ-এমই-উই 3 কেবলের মাধ্যমে আমাদের দেশ বাংলাদেশ ২০০৬ সালে সাবমেরিন কেবলের সাথে সংযুক্ত হয়।
এসইএ-এমই-উই 3 কেবলের সংযোগ স্থাপন করা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল। এটি দেশটির আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে, যা আন্তর্জাতিক যোগাযোগ এবং বাণিজ্যের গতি ও দক্ষতা উন্নত করতে সহায়তা করেছে। এছাড়াও, এসইএ-এমই-উই 3 কেবল বাংলাদেশকে বিশ্বের বাকি অংশের সাথে সংযুক্ত করেছে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে দেশের অংশগ্রহণ বাড়াতে সহায়তা করেছে।
এসইএ-এমই-উই 3 কেবলের সাথে সংযোগ স্থাপন করা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সাফল্য ছিল। এটি দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করেছে এবং বিশ্বের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে।
SEA-ME-WE 4 এবং SEA-ME-WE 5 কেবলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং সংযোগের সাল
সমুদ্রের নিচ দিয়ে লম্বা দূরত্বের তথ্য-যোগাযোগ প্রেরণের জন্য সাবমেরিন কেবল ব্যবহার করা হয়। এই কেবলগুলো বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলকে সংযুক্ত করে এবং টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট এবং ডেটা স্থানান্তরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ২০১৭ সালে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়। SEA-ME-WE 4 এবং SEA-ME-WE 5 নামে দুটি সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় যুক্ত হয়।
SEA-ME-WE 4 সাবমেরিন কেবলটি ২০১৬ সালে সক্রিয় করা হয়। এই কেবলটি সিঙ্গাপুর থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এটি ১৮,৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই কেবলটি বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূলের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে। SEA-ME-WE 5 সাবমেরিন কেবলটি ২০১৭ সালে সক্রিয় করা হয়। এই কেবলটি সিঙ্গাপুর থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এটি ২০,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই কেবলটি বাংলাদেশের পটুয়াখালী উপকূলের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে।
এই দুটি সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। এই কেবলগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট পরিষেবা পাচ্ছে। এ ছাড়া, এই কেবলগুলো বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
সমস্ত সক্রিয় সাবমেরিন কেবলের তালিকা এবং তাদের সামর্থ্য
সমুদ্রের নিচ দিয়ে লম্বা দূরত্বের তথ্য-যোগাযোগ প্রেরণের জন্য সাবমেরিন কেবল ব্যবহার করা হয়। এই কেবলগুলো বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলকে সংযুক্ত করে এবং টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট এবং ডেটা স্থানান্তরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ২০১৭ সালে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়। SEA-ME-WE 4 এবং SEA-ME-WE 5 নামে দুটি সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় যুক্ত হয়।
SEA-ME-WE 4 সাবমেরিন কেবলটি ২০১৬ সালে সক্রিয় করা হয়। এই কেবলটি সিঙ্গাপুর থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এটি ১৮,৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই কেবলটি বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূলের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে। SEA-ME-WE 5 সাবমেরিন কেবলটি ২০১৭ সালে সক্রিয় করা হয়। এই কেবলটি সিঙ্গাপুর থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এটি ২০,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই কেবলটি বাংলাদেশের পটুয়াখালী উপকূলের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে।
এই দুটি সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। এই কেবলগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট পরিষেবা পাচ্ছে। এ ছাড়া, এই কেবলগুলো বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
আন্তর্জাতিক সংযোগ, উন্নত ব্যান্ডউইথ এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির উপকারিতা
বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য আন্তর্জাতিক সংযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি দেশ যখন সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংযোগ স্থাপন করে, তখন এটি বিশ্বব্যাপী তথ্য নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়। এই সংযোগের ফলে ব্যান্ডউইথের উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটে, যা দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তোলে।
উচ্চ ব্যান্ডউইথ দেশের ইন্টারনেট গতি বাড়ায়, যা ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা সহ বিভিন্ন খাতে উন্নতি ঘটায়। এটি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করে, কারণ তারা দেশে একটি দক্ষ এবং নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো দেখতে পায়। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক সংযোগ শিক্ষা এবং গবেষণার সুযোগ বাড়ায়, কারণ এটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে।
শুধুমাত্র তাই নয়, আন্তর্জাতিক সংযোগ একটি দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিও ত্বরান্বিত করে। উন্নত ব্যান্ডউইথ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে উন্নীত করতে সহায়তা করে, যা কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে এবং রপ্তানি আয় বাড়ায়। এটি ই-কমার্স, অনলাইন ব্যাংকিং এবং অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক পরিষেবার বিকাশের সুযোগ তৈরি করে। সুতরাং, আন্তর্জাতিক সংযোগ, উন্নত ব্যান্ডউইথ এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির মধ্যে একটি শক্তিশালী পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে, যা একটি দেশের উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
বাংলাদেশের সাবমেরিন কেবল সংযোগের গুরুত্ব এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা সংক্ষিপ্ত করা
বাংলাদেশ ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংযোগ স্থাপন করে। প্রথম সাবমেরিন কেবলটি ছিল SEA-ME-WE 4 (South East Asia-Middle East-Western Europe 4)। এই কেবলটি চট্টগ্রামের সমুদ্র সৈকতে অবস্থিত কক্সবাজার সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করে। এরপর, বাংলাদেশ ক্রমাগতভাবে আরও সাবমেরিন কেবল যুক্ত করছে, যেমন SEA-ME-WE 5 (2009), i2i (2010), BBG (2016), SMW5 (2017), এবং APG (2018)। এই কেবলগুলি বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যান্য অংশগুলির সাথে উচ্চ-গতির, নির্ভরযোগ্য এবং কম-ব্যয়ের ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে। সাবমেরিন কেবলের এই সংযোগগুলি বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করছে, যা সারা দেশে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস, ব্যবসা এবং বিনোদনের সুযোগগুলি উন্নত করছে।
Leave a Reply