বাংলাদেশে মানুষ চেয়ারকে ‘কেদারা’ বলে না কেন?

বাংলাদেশে মানুষ চেয়ারকে ‘কেদারা’ বলে না কেন?

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়টি বেশ অদ্ভুত। আমরা যেটি প্রতিদিন ব্যবহার করি, তার যে নামকরণটি করার কথা, সেই নামটিই করি না। হ্যাঁ, আমি কথা বলছি চেয়ারের কথা। আমাদের মাঝে খুব কম লোকই জানেন চেয়ারকে বাংলায় কী বলা হয়। আর যারা জানেন, তারাও হয়তো সেটি ব্যবহার করেন না।

বাংলায় চেয়ারকে সাধারণত আমরা ‘চেয়ার’ বলেই ডাকি। ‘কেদারা’ শব্দটি এখন আর তেমন ব্যবহার হয় না। কিন্তু আসল কথা হলো, বাংলা ভাষায় চেয়ারের প্রকৃত নামই হচ্ছে ‘কেদারা’। তাহলে কেন আমরা এখন আর ‘কেদারা’ শব্দটি ব্যবহার করি না? আজকের এই প্রবন্ধে আমরা জানবো কেদারা শব্দের উৎপত্তি, বাংলা ভাষায় ‘কেদারা’ শব্দের ব্যবহার, বাংলাদেশে ‘চেয়ার’ শব্দের প্রচলন, সমাজে ‘চেয়ার’ শব্দের আধিপত্য, কেদারা শব্দের বিস্তারের অভাব এবং উপসংহারের কথা। তাই আমার প্রিয় পাঠক, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন চেয়ারকে কেন আমরা বাংলায় কেদারা বলি না।

বাংলাদেশে মানুষ চেয়ারকে বাংলায় ‘কেদারা’ বলে না কেন?

আমাদের দেশে ‘চেয়ার’ শব্দটিকে বাংলায় ‘কেদারা’ বলে না। এর জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ। প্রথমত, ‘চেয়ার’ একটি ইংরেজি শব্দ। আর আমরা বাংলা ভাষায় ইংরেজি শব্দগুলোকে যেরকম উচ্চারণ করি, সেই নিয়ম অনুসরণ করেই ‘চেয়ার’ শব্দটা আমরা ‘চেয়ার’ উচ্চারণ করি। দ্বিতীয়ত, ‘কেদারা’ শব্দটা বাংলা ভাষায় পুরনো একটি শব্দ। প্রাচীন বাংলায় ‘কেদারা’ দ্বারা বোঝানো হতো ‘পিঁড়ি’। আর আমরা যেই আসনে বসি, সেটাকে ‘পিঁড়ি’ বলি না। তৃতীয়ত, ‘চেয়ার’ এবং ‘কেদারা’ দুটো শব্দেরই অর্থ আলাদা। ‘চেয়ার’ দ্বারা বোঝানো হয় একটি আসন যার সাধারণত চারটি পা এবং একটি পিঠ রয়েছে। অন্যদিকে, ‘কেদারা’ দ্বারা বোঝানো হয় একটি নিচু আসন যার কোনো পিঠ বা পা নেই।

কেদারা শব্দের উৎপত্তি

বাংলাদেশে আমরা সবাই চেয়ারকে কেদারা বলে ডাকি। কিন্তু আপনি কি জানেন এ শব্দটির উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে? এটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ “কটাহ” থেকে। “কটাহ” শব্দের অর্থ “একটি কাঠের ফ্রেম যা উপরে বসার জন্য ব্যবহৃত হয়”। পরবর্তীকালে, এই শব্দটি “কেটারা” এবং অবশেষে “কেদারা” হিসাবে পরিবর্তিত হয়েছে।

See also  যে কারণে বাংলাদেশের নদী সাগরের দিকেই প্রবাহিত হয়

কিন্তু এখানে একটি আকর্ষণীয় বিষয় রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের অন্য কোনো অংশেই চেয়ারকে কেদারা বলা হয় না। তাহলে কেন শুধুমাত্র বাংলাদেশে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়?

এর পেছনে একটি আকর্ষণীয় গল্প রয়েছে। বলা হয়, একবার বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা তার দরবারে একটি চেয়ারে বসেছিলেন। সেই সময় একজন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করে এবং নবাবকে সালাম করার জন্য বসার জন্য একটি কেদারা চেয়েছিলেন। নবাব তাকে একটি চেয়ার দেখিয়ে বলেছিলেন, “এই যে কেদারা।” তখন থেকেই বাংলাদেশে চেয়ারকে কেদারা বলা হয়।

বাংলা ভাষায় কেদারা শব্দের ব্যবহার

বাংলাদেশে মানুষ চেয়ারকে বাংলায় ‘কেদারা’ বলে না কেন? এটি একটি খুবই সাধারণ এবং জ্ঞানী প্রশ্ন যা অনেক বাঙালিদের মনে আসে। এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য, আমাদের অবশ্যই ‘কেদারা’ শব্দের উৎপত্তি এবং ব্যবহারের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে।

‘কেদারা’ শব্দটি সংস্কৃত শব্দ ‘খাট’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘পালা’ বা ‘বিছানা’। প্রাচীনকালে, ভারত উপমহাদেশে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়, মানুষ বিছানা হিসাবে খাট বা কেদারা ব্যবহার করত। এটি সাধারণত কাঠের তৈরি একটি ফ্রেম ছিল যার উপরে একটি তুলা বা নারিকেলের আঁশের তৈরি গদি বসানো হত।

সময়ের সাথে সাথে, ‘কেদারা’ শব্দটি বিছানা থেকে বসার জায়গার জন্য ব্যবহৃত হতে শুরু করে, যেমন চেয়ার বা স্টুল। বাংলাদেশে, তবে, এই অর্থে ‘কেদারা’ শব্দটি খুব একটা জনপ্রিয় হয়নি। এর পরিবর্তে, ‘চেয়ার’ শব্দটি, যা ইংরেজি থেকে এসেছে, বসার জায়গা বোঝাতে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছিল।

এর কারণ সম্ভবত ব্রিটিশ শাসনামলের প্রভাব। ব্রিটিশরা ভারত উপমহাদেশে চেয়ারের মতো আধুনিক আসবাবপত্র প্রবর্তন করেছিল এবং এই আসবাবপত্র ধীরে ধীরে বাংলাদেশিসমাজে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফলস্বরূপ, ‘চেয়ার’ শব্দটি বসার জায়গার জন্য প্রধান শব্দ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ‘কেদারা’ শব্দটি ক্রমশ ব্যবহারের বাইরে চলে গেছে।

অতএব, বাংলাদেশে মানুষ চেয়ারকে বাংলায় ‘কেদারা’ বলে না কারণ এই অর্থে ‘কেদারা’ শব্দটি দেশে খুব একটা জনপ্রিয় হয়নি। ব্রিটিশ শাসনামলের প্রভাবের ফলে, ‘চেয়ার’ শব্দটি বসার জায়গা বোঝাতে দেশে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে।

See also  ত্’-এর জায়গায় ‘ৎ’- ব্যবহারের কী কারণ, জেনে নিন আজই!

বাংলাদেশে চেয়ারের জন্য ‘চেয়ার’ শব্দের প্রচলন

বাংলাদেশে আমরা সাধারণভাবে চেয়ারকে ‘চেয়ার’ বলে ডাকলেও অনেকের মনেই এই প্রশ্ন জাগে যে আমরা কেন একে ‘কেদারা’ বলি না। কেদারা শব্দটি প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে এবং অন্যান্য ভাষায় চেয়ারের জন্য ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশে তা প্রচলন হারিয়ে গেছে।

এর পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, ব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজি শব্দগুলি বাংলা ভাষায় প্রবেশ করতে শুরু করে। ‘চেয়ার’ শব্দটিও এর মধ্যে একটি। দ্বিতীয়ত, শহুরে আধুনিক জীবনধারার প্রভাব বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে, বাংলাদেশের মানুষ আধুনিক আসবাবপত্র ব্যবহার করতে শুরু করেছে, যেমন চেয়ার। তৃতীয়ত, শিক্ষা ও যোগাযোগের প্রসারের ফলে মানুষের ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে তারা ‘চেয়ার’ শব্দটি আরও সহজে গ্রহণ করতে পেরেছে।

এছাড়াও, ‘কেদারা’ শব্দটির ব্যবহার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পল্লী অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ। শহুরে এলাকায় এটির প্রচলন খুবই কম। ফলে, ‘চেয়ার’ শব্দটিই বাংলাদেশের মানুষের কাছে চেয়ারের জন্য প্রচলিত ও সর্বজনীনভাবে গৃহীত শব্দ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সমাজে চেয়ারের আধিপত্য

সমাজে চেয়ারের আধিপত্য এখন একটা অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অফিস থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ, এমনকি বাড়িঘরেও চেয়ারের ব্যবহার এখন অত্যন্ত সাধারণ। কিন্তু বাংলাদেশে মানুষ চেয়ারকে ‘কেদারা’ বলে না কেন? এর পেছনে রয়েছে কিছু কারণ।

প্রথমত, ‘কেদারা’ শব্দটি সংস্কৃত ভাষার। যেহেতু বাংলা ভাষা একটি ইন্দো-আর্য ভাষা, তাই অনেক সংস্কৃত শব্দ বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে। কিন্তু ‘কেদারা’ শব্দটি তাদের মধ্যে পড়ে না। এর পরিবর্তে, ‘চেয়ার’ শব্দটি ইংরেজি ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় এসেছে। এটি একটি ঋণশব্দ, যা বাংলা ভাষায় এখন পুরোপুরি গৃহীত হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, ‘কেদারা’ শব্দটি বাংলা ভাষায় অন্য একটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি গাছের নাম। এই গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Canarium strictum। বাংলাদেশে এই গাছটি খুবই সাধারণ, এবং এর কাঠ নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই, ‘কেদারা’ শব্দটির দ্বৈত অর্থের কারণে এটি চেয়ারের জন্য ব্যবহৃত হয় না।

কেদারা শব্দের বিস্তারের অভাব

আমার মাতৃভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও আমি কখনোই ‘কেদারা’ শব্দটি শুনিনি। তাই আমি জানতে চাইলাম কেন বাংলাদেশের মানুষ চেয়ারকে এই শব্দে বলে না। কিছু গবেষণা করার পরে, আমি আবিষ্কার করেছি যে বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত তাদের ভাষায় ‘কেদারা’ শব্দটি ব্যবহার করে না কারণ এটি আঞ্চলিকতা বা অপভ্রংশের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়।

See also  বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মূল বিভাজনকারী নদীটি কোনটি?

‘কেদারা’ শব্দটি মূলত সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে, যেখানে এটি একটি বিশেষ ধরনের সিংহাসন বা উঁচু আসনকে বোঝায়। এই শব্দটি পরে মধ্যযুগে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করে এবং অভিজাত ও বিত্তশালী শ্রেণীর লোকদের দ্বারা ব্যবহৃত আসনকে বোঝাতে ব্যবহৃত হত। তবে, সময়ের সাথে সাথে, এই শব্দটির ব্যবহার হ্রাস পেতে থাকে এবং এটি পল্লী অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

বর্তমানে, বাংলাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে চেয়ারকে সাধারণত ‘চেয়ার’ বা ‘আসন’ বলা হয়। ‘কেদারা’ শব্দটির ব্যবহার বরং আঞ্চলিক বা অপভ্রংশের কথার অংশ হিসাবে বিবেচিত হয়। তাই, যদিও এটি বাংলা ভাষার অংশ, তবুও এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় না এবং বেশিরভাগ বাংলাদেশী এটির সাথে পরিচিত নয়।

উপসংহার

আমার মাতৃভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও আমি কখনোই ‘কেদারা’ শব্দটি শুনিনি। তাই আমি জানতে চাইলাম কেন বাংলাদেশের মানুষ চেয়ারকে এই শব্দে বলে না। কিছু গবেষণা করার পরে, আমি আবিষ্কার করেছি যে বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত তাদের ভাষায় ‘কেদারা’ শব্দটি ব্যবহার করে না কারণ এটি আঞ্চলিকতা বা অপভ্রংশের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়।

‘কেদারা’ শব্দটি মূলত সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে, যেখানে এটি একটি বিশেষ ধরনের সিংহাসন বা উঁচু আসনকে বোঝায়। এই শব্দটি পরে মধ্যযুগে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করে এবং অভিজাত ও বিত্তশালী শ্রেণীর লোকদের দ্বারা ব্যবহৃত আসনকে বোঝাতে ব্যবহৃত হত। তবে, সময়ের সাথে সাথে, এই শব্দটির ব্যবহার হ্রাস পেতে থাকে এবং এটি পল্লী অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

বর্তমানে, বাংলাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে চেয়ারকে সাধারণত ‘চেয়ার’ বা ‘আসন’ বলা হয়। ‘কেদারা’ শব্দটির ব্যবহার বরং আঞ্চলিক বা অপভ্রংশের কথার অংশ হিসাবে বিবেচিত হয়। তাই, যদিও এটি বাংলা ভাষার অংশ, তবুও এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় না এবং বেশিরভাগ বাংলাদেশী এটির সাথে পরিচিত নয়।

Pritom Avatar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *