বাংলা, ইংরেজি, আরবি সাল বের করার সহজ উপায় ও সূত্র

বাংলা, ইংরেজি, আরবি সাল বের করার সহজ উপায় ও সূত্র

আপনি কি বাংলা থেকে আরবি আবার ইংরেজি থেকে আরবি সাল বের করতে পারেন? কাজটি করা যায় খুব সহজেই। জেনে নিন সন নির্ণয়ের সূত্র আর ব্যবহার করুন।

আমরা সবাই জানি যে, বিশ্বে অনেক ধরনের ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমরা বাঙালিরা প্রধানত তিন ধরনের ক্যালেন্ডার ব্যবহার করি। সেগুলো হলো বাংলা সন, ইংরেজি সন এবং আরবি সন। এই তিন ধরনের সনের মধ্যে বাংলা সন হচ্ছে আমাদের নিজস্ব সন। আর ইংরেজি সন এবং আরবি সন আমাদের কাছে দুটি বিদেশী সন। এই তিনটি সনের মধ্যে সমন্বয় ঘটানো আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমাদের দেশে অনেক কাজকর্মই এই তিন ধরনের সনের উপর ভিত্তি করে করা হয়। তাই এই তিনটি সনের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে না পারলে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।

এই আর্টিকেলে আমি আপনাদেরকে বাংলা সন, ইংরেজি সন এবং আরবি সনের মধ্যে সমন্বয় ঘটানোর সূত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করব। এছাড়াও এই সূত্রগুলোর কিছু উদাহরণও দেবো। আশা করি, এই আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনারা বাংলা সন, ইংরেজি সন এবং আরবি সনের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে পারবেন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

বাংলা সনের পরিচয়

বাংলা সন হলো বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে ব্যবহৃত একটি সালের গণনা পদ্ধতি। এটি সৌরভিত্তিক সালপঞ্জী, যার অর্থ এটি পৃথিবীর সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে যাওয়ার সময়কে ভিত্তি করে গণনা করা হয়। বাংলা সন ইংরেজি সনের থেকে ৫৯৩ বছর পিছিয়ে। অর্থাৎ, যখন ইংরেজি সালে ২০২৩, তখন বাংলা সালে ১৪৩০।

প্রতিটি বছরে ১২টি মাস থাকে। মাসগুলোর নাম হলো বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন এবং চৈত্র। প্রতিটি মাসে সাধারণত ৩০টি দিন থাকে, তবে কিছু মাসে ২৯টি দিন থাকে। বাংলা সনের বছরটি ১৪ এপ্রিল শুরু হয় এবং ১৩ এপ্রিল শেষ হয়।

See also  বাঙালী কেন সংকর জাতি: ইতিহাস ও বৈজ্ঞানিক তথ্য

বাংলা সন বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে সরকারি এবং সামাজিক উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। এটি উৎসব, ছুটি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলি নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়।

ইংরেজি সনের পরিচয়

আমরা যে সন ব্যবহার করি তা ইংরেজি সন বা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে পরিচিত। এই সনটি পোপ গ্রেগরি ত্রয়োদশ কর্তৃক প্রবর্তিত হয় ১৫৮২ সালে। এটি একটি সৌর ক্যালেন্ডার, অর্থাৎ এটি সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর প্রদক্ষিণের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। একটি সাধারণ বছরে ৩৬৫ দিন থাকে, এবং প্রতি চার বছরে একটি অধিবর্ষ থাকে যাতে অতিরিক্ত একটি দিন (২৯ ফেব্রুয়ারি) যুক্ত করা হয়।

ইংরেজি সন বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সন। এটি বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আরবি সনের পরিচয়

আরবি সন হল একটি চান্দ্র সন, যা চাঁদের কলা ভিত্তিক। এটি ইসলামি ধর্মের অনুসারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ধর্মীয় উৎসব এবং উপবাসের সময় নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়। আরবি সন ইংরেজি সনের চেয়ে প্রায় ১১ দিন ছোট, যার ফলে প্রতি বছর আরবি সনের তারিখ ইংরেজি সনের তারিখ থেকে সরে যায়।

বাংলা সন এবং ইংরেজি সাল থেকে আরবি সাল বের করার নিয়ম হল:

  • বাংলা সন থেকে আরবি সাল বের করা: বাংলা সনের সালকে ৫৮৩ দ্বারা ভাগ করলেই আরবি সাল পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, বাংলা সন ১৪২৯ – ৫৮৩ দ্বারা ভাগ করলে আরবি সাল ১৪৪৫ পাওয়া যায়।
  • ইংরেজি সাল থেকে আরবি সাল বের করা: ইংরেজি সালকে ৩৩ দ্বারা ভাগ করলেই আরবি সাল পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, ইংরেজি সাল ২০২৩ – ৩৩ দ্বারা ভাগ করলে আরবি সাল ১৪৪৫ পাওয়া যায়।

আরবি সনের এই নিয়মগুলি বুঝলে তুমি সহজেই বাংলা সন বা ইংরেজি সাল থেকে আরবি সাল নির্ধারণ করতে পারবে।

See also  বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের ম্যাজিক সল্যুশন

বাংলা সন থেকে আরবি সন নির্ণয়ের সূত্র

বাংলা সনের যেকোনো দিনের আরবি সন নির্ণয়ের সূত্র খুবই সহজ। প্রথমে বাংলা সনের সঙ্গে ৫৯৪ যোগ করতে হবে। এরপর যোগফল থেকে ১৩১৬ বাদ দিতে হবে। এরপর ফলাফলকে ১০৬৩ দ্বারা ভাগ করতে হবে। ভাগফলই হল আরবি সন। ধরুন, বাংলা ১৪২৯ সালের ১ বৈশাখের আরবি সন জানতে হলে প্রথমে ১৪২৯ এর সঙ্গে ৫৯৪ যোগ করতে হবে। ফলাফল হল ২০২৩। এরপর ২০২৩ থেকে ১৩১৬ বাদ দিতে হবে। ফলাফল হল ৭০৭। এবার ৭০৭ কে ১০৬৩ দ্বারা ভাগ করতে হবে। ভাগফল হল ৬৬৫। অর্থাৎ, বাংলা ১৪২৯ সালের ১ বৈশাখের আরবি সন হল ৬৬৫।

ইংরেজি সন থেকে আরবি সন নির্ণয়ের সূত্র

ইংরেজি ও বাংলা সন থেকে আরবি সন নির্ণয়ের সূত্র জানা একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা, বিশেষ করে ঐতিহাসিক গ্রন্থ বা নথিপত্র বোঝার জন্য। এই সূত্রটি ব্যবহার করে তুমি যেকোনো ইংরেজি বা বাংলা সনকে আরবি সনে রূপান্তর করতে পারবে।

হল:

আরবি সন = ইংরেজি সন + ৫৮৪

এই সূত্রটি ব্যবহার করার সময়, মনে রাখবে যে ইংরেজি সনটি অবশ্যই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ সালকে আরবি সনে রূপান্তর করতে হলে, আমরা সূত্রটি ব্যবহার করে পাবো:

আরবি সন = ২০১৬ + ৫৮৪
= ১৪৪০

অন্যদিকে, বাংলা সন থেকে আরবি সন নির্ণয়ের সূত্র হল:

আরবি সন = বাংলা সন + ৫৯৪

এই সূত্রটি ব্যবহার করার সময়, মনে রাখবে যে বাংলা সনটি অবশ্যই বাংলা বর্ষপঞ্জী অনুসারে হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ১৪২০ বাংলা সনকে আরবি সনে রূপান্তর করতে হলে, আমরা সূত্রটি ব্যবহার করে পাবো:

আরবি সন = ১৪২০ + ৫৯৪
= ১৪৪২

এই সূত্রগুলি ব্যবহার করে, তুমি যেকোনো ইংরেজি বা বাংলা সনকে সহজেই আরবি সনে রূপান্তর করতে পারবে।

উদাহরণ সহ সহজ ব্যাখ্যা

ইংরেজি ও বাংলা সন থেকে আরবি সন নির্ণয়ের সূত্র জানা একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা, বিশেষ করে ঐতিহাসিক গ্রন্থ বা নথিপত্র বোঝার জন্য। এই সূত্রটি ব্যবহার করে তুমি যেকোনো ইংরেজি বা বাংলা সনকে আরবি সনে রূপান্তর করতে পারবে।

See also  বাংলার নবজাগরণের জনক হিসেবে পরিচিত ব্যক্তি

হল:

আরবি সন = ইংরেজি সন + ৫৮৪

এই সূত্রটি ব্যবহার করার সময়, মনে রাখবে যে ইংরেজি সনটি অবশ্যই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ সালকে আরবি সনে রূপান্তর করতে হলে, আমরা সূত্রটি ব্যবহার করে পাবো:

আরবি সন = ২০১৬ + ৫৮৪
= ১৪৪০

অন্যদিকে, বাংলা সন থেকে আরবি সন নির্ণয়ের সূত্র হল:

আরবি সন = বাংলা সন + ৫৯৪

এই সূত্রটি ব্যবহার করার সময়, মনে রাখবে যে বাংলা সনটি অবশ্যই বাংলা বর্ষপঞ্জী অনুসারে হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ১৪২০ বাংলা সনকে আরবি সনে রূপান্তর করতে হলে, আমরা সূত্রটি ব্যবহার করে পাবো:

আরবি সন = ১৪২০ + ৫৯৪
= ১৪৪২

এই সূত্রগুলি ব্যবহার করে, তুমি যেকোনো ইংরেজি বা বাংলা সনকে সহজেই আরবি সনে রূপান্তর করতে পারবে।

Ishti Avatar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *