সংস্কৃত: বাংলা ভাষার জননী কেন?

সংস্কৃত: বাংলা ভাষার জননী কেন?

আমার আজকের লেখাটি হচ্ছে বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃত ভাষার সম্পর্ক নিয়ে। আজ আমরা দেখব যে, সংস্কৃত ভাষার উৎপত্তি কী এবং বাংলা ভাষার সঙ্গে তার সম্পর্কটি কেমন। এরপর, আমরা দেখব যে, বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারে সংস্কৃত ভাষার কতখানি প্রভাব রয়েছে। এর সঙ্গেই আমরা আলোচনা করব বাংলা ব্যাকরণ এবং ধ্বনিতত্ত্বে সংস্কৃত ভাষার প্রভাব। শেষে আমরা দেখব যে, সংস্কৃত সাহিত্যের বাংলা সাহিত্যের উপর কী প্রভাব রয়েছে। আমি আশা করছি, আজকের লেখাটি আপনাদের কাছে যথেষ্ট তথ্যবহুল হবে এবং বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃত ভাষার সম্পর্ক সম্পর্কে আপনাদের আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।

সংস্কৃতের উৎপত্তি এবং বাংলা ভাষার সঙ্গে সম্পর্ক

সংস্কৃত ভাষার উৎপত্তির সূত্রপাত হয়েছে প্রাচীন ভারতবর্ষের বৈদিক যুগে, প্রায় 1500 থেকে 500 খ্রিস্টপূর্বাব্দে। সংস্কৃত শব্দের অর্থ ‘শুদ্ধ’ বা ‘পরিশোধিত’। এর মূল শব্দটি হচ্ছে সঙ্কর, যার অর্থ ‘সমন্বয়’ বা ‘মিশ্রণ’। এটি একটি প্রাচীন ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা, যা ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, গ্রিক, ল্যাটিন এবং অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষার সাথে সম্পর্কিত।

আমি একজন বাঙালি হিসেবে গর্বিত যে, আমাদের ভাষা বাংলা, সংস্কৃত ভাষা থেকে উদ্ভূত। সংস্কৃত আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, শিল্প এবং দর্শনের ভিত্তি স্থাপন করেছে। বাংলা ভাষার প্রায় 60% শব্দই সংস্কৃত থেকে এসেছে। এই শব্দগুলো আমাদের ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে এবং আমাদেরকে বিভিন্ন ধারণা এবং চিন্তাধারা প্রকাশ করতে সাহায্য করেছে।

তাই, সংস্কৃতকে ‘বাংলা ভাষার জননী’ বলা হয় কারণ এটি বাংলা ভাষার উৎপত্তির মূল ভিত্তি এবং এটি এখনও আমাদের ভাষা এবং সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারে সংস্কৃতের প্রভাব

সংস্কৃতকে ‘বাংলা ভাষার জননী’ বলা হয় কারণ বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারের প্রায় ৬০% শব্দ সংস্কৃত থেকে এসেছে। এই সংস্কৃত শব্দগুলি বাংলা ভাষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেমন ধর্ম, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। বাংলা ভাষায় যেসকল শব্দ সংস্কৃত থেকে এসেছে, সেগুলিই মূলত বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারের মূল ভিত্তি। এই শব্দগুলিই বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে এবং এটিকে একটি সুন্দর ও শক্তিশালী ভাষা হিসেবে গড়ে তুলেছে।

See also  বাংলাদেশের দশজন শ্রেষ্ঠ নারী কবি কারা? জানুন বিস্তারিত

বাংলা ব্যাকরণে সংস্কৃতের প্রভাব

সংস্কৃতকে ‘বাংলা ভাষার জননী’ বলা হয় কারণ বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারের প্রায় ৬০% শব্দ সংস্কৃত থেকে এসেছে। এই সংস্কৃত শব্দগুলি বাংলা ভাষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেমন ধর্ম, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। বাংলা ভাষায় যেসকল শব্দ সংস্কৃত থেকে এসেছে, সেগুলিই মূলত বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারের মূল ভিত্তি। এই শব্দগুলিই বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে এবং এটিকে একটি সুন্দর ও শক্তিশালী ভাষা হিসেবে গড়ে তুলেছে।

ধ্বনিতত্ত্বে সংস্কৃতের প্রভাব

সংস্কৃত ভাষা বাংলা ভাষার উৎস, তাই এর ধ্বনিতত্ত্ব বাংলা ভাষাকেও প্রভাবিত করেছে।

বাংলা ভাষার মূলধ্বনির সংখ্যা ৩৬টি, যার মধ্যে ব্যঞ্জনধ্বনি ২৫টি এবং স্বরধ্বনি ১১টি। এই মূলধ্বনিগুলির মধ্যে অনেকগুলোই সংস্কৃত থেকে গৃহীত। উদাহরণস্বরূপ, বাংলা বর্ণমালার প্রথম বর্ণ ‘ক’ সংস্কৃতের ‘ক’ অক্ষর থেকেই এসেছে। এছাড়াও, ‘খ’、’গ’、’ঘ’、’ঙ’、’চ’、’ছ’、’জ’、’ঝ’、’ঞ’、’ট’ ইত্যাদি বর্ণগুলিও সংস্কৃত থেকে এসেছে।

সংস্কৃতের প্রভাবে বাংলা ভাষায় কিছু নতুন ধ্বনিও যুক্ত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ‘হ’ ধ্বনিটি আদি বাংলায় ছিল না, তবে সংস্কৃতের প্রভাবে এটি বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে। এছাড়াও, ‘ক্ষ’、’ত্র’、’জ্ঞ’、’শ্র’ ইত্যাদি কিছু ধ্বনিসমষ্টিও সংস্কৃত থেকে বাংলায় এসেছে।

তবে, সংস্কৃতের প্রভাবে বাংলা ধ্বনিতত্ত্বে কিছু পরিবর্তনও ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, আদি বাংলায় প্রাণী এবং নিপ্রাণ শব্দের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য ছিল, তবে সংস্কৃতের প্রভাবে এই পার্থক্যটি কমে গেছে। এছাড়াও, আদি বাংলায় কিছু অতিরিক্ত ধ্বনি ছিল, যা সংস্কৃতের প্রভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

সংস্কৃত সাহিত্যের বাংলা সাহিত্যের উপর প্রভাব

সংস্কৃতকে বাংলা ভাষার জননী বলা হয় কারণ সংস্কৃত ভাষা বাংলা ভাষার উৎস হিসেবে কাজ করেছে। প্রাচীন কালে, সংস্কৃত ভাষা উত্তর ভারতের প্রধান ভাষা ছিল এবং এটি প্রশাসন, সাহিত্য এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হত। বাংলা ভাষাও উত্তর ভারতের একটি প্রাকৃত ভাষা হিসেবে উদ্ভূত হয়েছিল যা সংস্কৃত থেকে প্রভাবিত ছিল। কালক্রমে, বাংলা ভাষাটি একটি স্বতন্ত্র ভাষায় পরিণত হয় তবে এটি এখনও সংস্কৃত থেকে প্রচুর শব্দ, ব্যাকরণ এবং সাহিত্যক রূপ ধারণ করেছে।

See also  কবি রবীন্দ্রনাথকে কেন ‘বিশ্বকবি’ বলা হয়? জেনে নিন তার অবদান

আমাদের বাংলা ভাষার প্রায় ৫০% শব্দই সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। এমনকি বাংলা ভাষার ব্যাকরণও সংস্কৃত ভাষা দ্বারা প্রভাবিত । তাই সংস্কৃত ভাষাকে আমাদের বাংলা ভাষার জননী বলা হয়।

উপসংহার

সংস্কৃতকে বাংলা ভাষার জননী বলা হয় কারণ সংস্কৃত ভাষা বাংলা ভাষার উৎস হিসেবে কাজ করেছে। প্রাচীন কালে, সংস্কৃত ভাষা উত্তর ভারতের প্রধান ভাষা ছিল এবং এটি প্রশাসন, সাহিত্য এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হত। বাংলা ভাষাও উত্তর ভারতের একটি প্রাকৃত ভাষা হিসেবে উদ্ভূত হয়েছিল যা সংস্কৃত থেকে প্রভাবিত ছিল। কালক্রমে, বাংলা ভাষাটি একটি স্বতন্ত্র ভাষায় পরিণত হয় তবে এটি এখনও সংস্কৃত থেকে প্রচুর শব্দ, ব্যাকরণ এবং সাহিত্যক রূপ ধারণ করেছে।

আমাদের বাংলা ভাষার প্রায় ৫০% শব্দই সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে।এমনকি বাংলা ভাষার ব্যাকরণও সংস্কৃত ভাষা দ্বারা প্রভাবিত । তাই সংস্কৃত ভাষাকে আমাদের বাংলা ভাষার জননী বলা হয়।

Susmita Avatar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *