ইংরেজি সালের জন্মদাতা কে? ইতিহাসের পাতায় অমর হওয়া নামটি জানুন

ইংরেজি সালের জন্মদাতা কে? ইতিহাসের পাতায় অমর হওয়া নামটি জানুন

ইংরেজি সাল কখন এবং কীভাবে প্রবর্তিত হলো, এ প্রশ্নটি অনেকের মনেই ঘুরপাক খায়। তাই আজ আমি তোমাদের জানাবো ইংরেজি সালের প্রবর্তক কে এবং কীভাবে এটি প্রবর্তিত হয়েছিলো। আমি তোমাদের ইংরেজি সালের ইতিহাস, পোপ গ্রেগরি ১৩ এর ভূমিকা এবং গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রবর্তন সম্পর্কেও বিস্তারিতভাবে জানাবো। এছাড়াও, ইংরেজি সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রয়োগ, ইংরেজি সালের বর্তমান রূপ এবং এর কার্যকারিতা সম্পর্কেও জানতে পারবে। সবশেষে, ইংরেজি সালের প্রবর্তক হিসেবে পোপ গ্রেগরি ১৩ এর গুরুত্ব সম্পর্কেও আলোচনা করবো।

ইংরেজি সালের প্রবর্তক কে?

ইতিহাস জুড়ে অনেক রাজা-বাদশাহ আর সম্রাটের সিংহাসনে বসার কথা পড়েছি, তাদের জীবনীও পড়েছি। কিন্তু তাদের মধ্যে যখন এমন একজনের কথা আসে যে সালপঞ্জির জন্ম দিয়েছেন, তখন মনে কিছুটা অবাক লাগে। হ্যাঁ, ইংরেজি সালের প্রবর্তক জুলিয়াস সিজার। তিনি প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যের একজন বিখ্যাত রাজা ছিলেন।

একদিন জুলিয়াস সিজার তার সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কৃষকদের কথা শুনছিলেন। কৃষকরা জানালেন যে বছরের দৈর্ঘ্য প্রায় 355 দিন। কিন্তু তাদের হাতে থাকা রোমান সালপঞ্জী অনুযায়ী বছরের দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র 304 দিন। এই অতিরিক্ত 51 দিনের জন্য কৃষকদের প্রায়শই ঋতু পরিবর্তনের সাথে সংগ্রাম করতে হত।

কৃষকদের সমস্যা শোনার পর, জুলিয়াস সিজার সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি একটি নতুন সালপঞ্জী তৈরি করবেন যা আরও নির্ভুল হবে। এটি খ্রিস্টপূর্ব 46 সালে তাঁর হাত ধরেই তৈরি হয় জুলিয়ান সালপঞ্জী। এই সালপঞ্জীটি সূর্যের চলাফেরার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। এই সালপঞ্জীতে বছরের দৈর্ঘ্য ঠিক করা হয় 365 দিন। এবং প্রতি চার বছরে একবার লিপইয়ার বছর যোগ করা হয় যাতে অতিরিক্ত দিনটির সমন্বয় হয়।

আজ আমরা যে গ্রেগরিয়ান সালপঞ্জী ব্যবহার করি, তা মূলত জুলিয়াস সিজার প্রবর্তিত জুলিয়ান সালপঞ্জীর উপরই ভিত্তি করে তৈরি। তাই আজ আমরা যে সালপঞ্জী ব্যবহার করছি, তার প্রবর্তক কে জানা গেল তো? তিনি হলেন জুলিয়াস সিজার।

See also  গোল আলু আসলে মূল নয়! জানুন এর আসল পরিচয়

ইংরেজি সালের ইতিহাস এবং এর প্রবর্তন

ইংরেজি সালের প্রবর্তক কে?

ইংরেজি সাল হলো খ্রিষ্টান ধর্মের প্রবক্তা যিশু খ্রিস্টের জন্মের কাল গণনার একটি পদ্ধতি। এই কাল গণনা পদ্ধতিটির প্রবর্তন করেছিলেন রোমান ভিক্ষু ডিওনিসিয়াস এক্সিগুয়াস। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে তিনি এই পদ্ধতিটি প্রবর্তন করেছিলেন। তিনি যিশু খ্রিস্টের জন্মের বছরকে খ্রিস্টপূর্ব ১ বছর হিসেবে গণ্য করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে গবেষণায় দেখা গেছে, যিশু খ্রিস্টের জন্ম খ্রিস্টপূর্ব ৪ থেকে ৭ বছরের মধ্যে হয়েছিল। তাই বর্তমানে ইংরেজি সালের গণনা পদ্ধতিটি খ্রিস্টপূর্ব ১ বছর থেকে শুরু হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

এই কাল গণনা পদ্ধতিটি প্রথমে ইউরোপে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু পরবর্তীতে এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। আজকে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই ইংরেজি সালের কাল গণনা পদ্ধতিটি ব্যবহৃত হয়।

পোপ গ্রেগরি ১৩ এর ভূমিকা এবং গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রবর্তন

খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার একটি সৌরভিত্তিক ক্যালেন্ডার চালু করেন, যা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। এই ক্যালেন্ডারে প্রতি চার বছরে একটি অতিরিক্ত দিন যুক্ত করা হত যাকে অধিবর্ষ বলা হত। তবে এই অধিবর্ষের হিসাব ছিল খানিকটা ভুল ও অনিয়মিত। ফলে সময়ের সাথে সাথে ক্যালেন্ডারের তারিখসমূহ সৌরবর্ষের সঙ্গে মেলাতে শুরু করল অনিয়মিতভাবে।

১৫৮২ সালে, পোপ গ্রেগরি ১৩ এই সমস্যাটি সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি কয়েকজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গণিতবিদকে একটি কমিটি গঠন করেন এবং তাদেরকে একটি নতুন ক্যালেন্ডার তৈরি করার দায়িত্ব দেন। এই কমিটি একটি নতুন সৌরভিত্তিক ক্যালেন্ডার প্রস্তাব করে যা কেবলমাত্র প্রতি চার বছরেই নয়, বরং প্রতি ১০০ বছরেও অধিবর্ষের জন্য একটি ব্যতিক্রম তৈরি করে। এই ব্যতিক্রম ছিল এই যে, শতাব্দীর শেষের বছরগুলি (যেমন, ১৯০০, ১৮০০, ইত্যাদি) কেবলমাত্র তখনই অধিবর্ষ হিসাবে বিবেচিত হবে যদি সেগুলি ৪০০ দ্বারা বিভাজ্য হয়।

পোপ গ্রেগরি এই নতুন ক্যালেন্ডারটি গ্রহণ করেন এবং একে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার নামকরণ করেন। তিনি ১৫৮২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি একটি আদেশ জারি করে ঘোষণা করেন যে ১৫ অক্টোবরের পরের দিনটি ১৫ অক্টোবর নয় বরং ২৫ অক্টোবর হিসাবে বিবেচিত হবে। এটি ক্যালেন্ডারে ১০ দিনের একটি সংশোধন ছিল। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অধিকাংশ ক্যাথলিক দেশে দ্রুত গৃহীত হয়, তবে প্রোটেস্ট্যান্ট এবং অর্থোডক্স খ্রিস্টান দেশগুলি এটিকে গ্রহণ করতে আরও সময় নেয়।

See also  পুষ্পা সিনেমাটি এত জনপ্রিয় কেন? জেনে নিন এর কারণগুলো

গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার আজও সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত সৌরভিত্তিক ক্যালেন্ডার। এটি একটি নির্ভুল এবং সুবিধাজন ক্যালেন্ডার যা বেশিরভাগ দেশে ব্যবহৃত হয়।

ইংরেজি সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রয়োগ

ইংরেজি সালের প্রবর্তন হলো পোপ ১৩তম গ্রেগরির করা একটি ক্যালেন্ডার সংস্কার। পুরাতন জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ১১ মিনিটের বেশি প্রতি বছর যুক্ত করেছিল, যা অবশেষে বসন্ত বিষুবের তারিখ পরিবর্তন করছিল। গ্রেগরি এই ত্রুটি সংশোধন করতে একটি নতুন ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করেছিলেন। এই নতুন ক্যালেন্ডারে 400 বছরে 97 লিপ বছর রয়েছে, যেখানে পুরানো ক্যালেন্ডারে 100 বছরে 100 লিপ বছর ছিল। এই সংশোধনটি বসন্ত বিষুবের তারিখকে তার মূল অবস্থানে রেখেছে।

ইংরেজি সালের বর্তমান রূপ এবং এর কার্যকারিতা

ইংরেজি সালের প্রবর্তক ছিলেন জুলিয়াস সিজার। খ্রিস্টপূর্ব 45 সালে তিনি বছরের দৈর্ঘ্যকে 365 দিন এবং 6 ঘণ্টা নির্ধারণ করেছিলেন। তবে এটি একটি অসম্পূর্ণ সংখ্যা ছিল, যার কারণে প্রতি চার বছরেই একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এই অতিরিক্ত দিনটি ছিল 29শে ফেব্রুয়ারি, যা লিপবর্ষ নামে পরিচিত।

সিজারের প্রবর্তিত এই সালটি জুলিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত ছিল। তবে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের বছরের দৈর্ঘ্য ছিল আসল সৌর বছরের থেকে 11 মিনিট বেশি। ফলে, প্রতি 128 বছরেই একটি দিনের ত্রুটি দেখা দিত। এটি ঠিক করার জন্য, পোপ গ্রেগরি XIII 1582 সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে সিজারের জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের তুলনায় কিছু সংশোধন আনা হয়েছিল। যেমন, প্রতি 400 বছরে 3টি লিপবর্ষ বাদ দেওয়া হয়েছিল। এটি বছরের দৈর্ঘ্যকে সৌর বছরের সাথে আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছে।

বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে। এটি একটি সৌর ক্যালেন্ডার, যার অর্থ এটি পৃথিবীর সূর্যের চারপাশে ঘূর্ণনের উপর ভিত্তি করে তৈরি। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে 12টি মাস রয়েছে, যা 365 বা 366 দিনের সমন্বয়ে গঠিত।

See also  কেউ তোমাকে অবহেলা করলে কী করবে? যখন তা তোমার কাছের মানুষ…

উপসংহার: ইংরেজি সালের প্রবর্তক হিসেবে পোপ গ্রেগরি ১৩ এর গুরুত্ব

গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার, যা আমরা আজ ইংরেজি সাল হিসেবে জানি, তার জন্মদাতা পোপ গ্রেগরি ১৩। মূলত, জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের ত্রুটি সংশোধন করার জন্যই ১৫৮২ সালে এই ক্যালেন্ডারটি প্রবর্তন করা হয়। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে প্রতিটি বছরকে ৩৬৫.২৫ দিন হিসেবে ধরা হতো, যা প্রকৃত সৌরবছরের তুলনায় প্রায় ১১ মিনিট বেশি। এই অতিরিক্ত সময়ের কারণে প্রতি ১২৮ বছরেই একটি অতিরিক্ত দিন যুক্ত হতো ক্যালেন্ডারে।

পোপ গ্রেগরি ১৩ এই সমস্যার সমাধান খুঁজে পান একটি নতুন ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে। তার প্রবর্তিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে, প্রতিটি বছর ৩৬৫ দিনের হিসেবে ধরা হয়, তবে প্রতি চার বছরে একবার একটি অতিরিক্ত দিন যুক্ত করা হয়। যদিও, প্রতি শত বছরে তিনটি অতিরিক্ত দিন বাদ দেওয়া হয় এবং প্রতি চার শত বছরে একটি অতিরিক্ত দিন যুক্ত করা হয়। এই সংশোধনগুলির ফলে, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের তুলনায় অনেক বেশি সঠিক হয়।

পোপ গ্রেগরি ১৩-এর গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার আজও বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ক্যালেন্ডার। এটি আমাদের সময় পরিমাপ করতে এবং বিভিন্ন ঘটনার তারিখ নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। পৃথিবী জুড়ে মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য এই ক্যালেন্ডার অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে। তাই, পোপ গ্রেগরি ১৩-কে ইংরেজি সালের প্রবর্তক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে, যার সংস্কারের ফলে আমরা আজ একটি সঠিক এবং সুসংগত ক্যালেন্ডার পেয়েছি।

Tipu Avatar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *