কুয়েতের অর্থনীতির অগাধ সম্পদ নিয়ে বিশ্ব বাজারে সর্বদাই আলোচনা হয়ে আসছে। আরব উপদ্বীপের এ শান্তিপ্রিয় দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি অনেক দেশকে হিংসা করিয়েছে। তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদে ভরপুর এই দেশটি কীভাবে বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশের মর্যাদা পেলো? এ নিয়ে আজকে আলোচনা করবো আমরা।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা কুয়েতের অর্থনীতির পেছনের গল্পগুলো তুলে ধরবো। কী কারণে কুয়েতের অর্থনীতি এতোটা উন্নত ও স্থিতিশীল, সে বিষয়ে বিশ্লেষণ করবো। তেল ও গ্যাস সম্পদের পাশাপাশি আরও কোন কোন কারণ রয়েছে কুয়েতের এই সাফল্যের পেছনে, সেগুলোও তুলে ধরা হবে। সব মিলিয়ে আজকের আর্টিকেলটি কুয়েতের অর্থনৈতিক সাফল্যের একটি সম্পূর্ণ গাইড হিসেবে কাজ করবে বলে আমার বিশ্বাস।
কুয়েতের অর্থনীতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ
কুয়েতের অর্থনীতি মূলত তেল শিল্পের উপর নির্ভরশীল। কুয়েত বিশ্বের দশম বৃহত্তম তেল রফতানিকারক দেশ এবং এর প্রমাণিত তেল ভंडার বিশ্বের ষষ্ঠ। তেল রফতানিই সরকারের প্রধান আয়ের উৎস, যা দেশের GDP-এ প্রায় 95% এবং রাজস্বের প্রায় 80% অবদান রাখে। তেল রফতানির পাশাপাশি, কুয়েত সরকার অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যকরণের এবং বেসরকারি খাতের ανάπτυতির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এই উদ্যোগগুলির মধ্যে রয়েছে পর্যটন, আর্থিক পরিষেবা এবং উৎপাদন শিল্পের বিকাশ।
কুয়েতের তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদ
কুয়েত বিদ্যুৎ ও পানির মন্ত্রণালয়ের ডেটা অনুসারে, কুয়েতে প্রমাণিত ক্রুড তেলের মজুত প্রায় ১০১.৫ বিলিয়ন ব্যারেল, যা বিশ্বের তেল মজুদের প্রায় ৬.২%। কুয়েতের প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুতও উল্লেখযোগ্য, যার পরিমাণ প্রায় ১.৮৪ ট্রিলিয়ন কিউবিক মিটার। এই সম্পদই কুয়েতকে বিশ্বের ধনী দেশগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে।
এই তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের রপ্তানি থেকে আসা রাজস্ব কুয়েতের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। ২০১৯ সালে, তেল রপ্তানি থেকে কুয়েতের আয় ছিল প্রায় ৫২.৮ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের মোট রাজস্বের প্রায় ৯০%। প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি থেকে দেশটির আয় প্রায় ৩.৪ বিলিয়ন ডলার।
এই সম্পদগুলি কুয়েতকে নাগরিকদের জন্য উচ্চ মানের জীবনযাপন নিশ্চিত করতেও সক্ষম করেছে। কুয়েতের মাথাপিছু জিডিপি বিশ্বের সর্বোচ্চগুলির মধ্যে একটি এবং দেশটিতে একটি উদার সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে যা স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং অন্যান্য সুবিধাগুলি প্রদান করে।
মার্কিন ডলারের সাথে কুয়েতী দিনারের সংযুক্তি
কুয়েতের মুদ্রা দিনার বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান মুদ্রা৷ অনেক দেশের চেয়ে কুয়েতি দিনারের দাম অনেক বেশী৷ এমনকি, মার্কিন ডলারের থেকেও কুয়েতি দিনারের দাম বেশী৷ কিন্তু কেন কুয়েতি দিনারের দাম এত বেশী সেটা জানো? আজকে আমি তোমাদের জানাবো এর কারনগুলো৷
ব্যাংক অফ কুয়েতের তথ্যমতে, কুয়েতি দিনারের দাম অনেক বেশী হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে৷ এর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে কুয়েতের তেল সম্পদ৷ কুয়েত বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি৷ আর তেলের উপর বিশ্বের নির্ভরশীলতা, কুয়েতি দিনারের দামে সরাসরি একটি প্রভাব রেখেছে৷ কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম বেড়ে যায়, তখন কুয়েতি দিনারের বিপরীতে অন্য মুদ্রার দাম কমে যায়৷
এছাড়া, কুয়েতি সরকার তাদের দেশের অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য অনেক কিছু করেছে৷ এর ফলে, কুয়েতের অর্থনীতি শুধু তেলের উপর নির্ভরশীল নয়৷ এমনকি, তেলের দাম কমে গেলেও কুয়েতি দিনারের মূল্যমান খুব একটা কমে না৷ কারণ, তেল ছাড়াও ব্যাংকিং, ট্যুরিজম এবং রিয়েল এস্টেট খাতেও কুয়েতের ভালো বিনিয়োগ আছে৷
তাই এইসব কারণে কুয়েতি দিনারের দাম অনেক বেশী৷ তবে, এটি একটি স্থিতিশীল মুদ্রা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এর বেশ ভালোই সুনাম আছে৷
কুয়েতের স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ
কুয়েতের রাজনৈতিক পরিবেশ বেশ স্থিতিশীল, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রেখেছে। কুয়েত অনেকদিন ধরেই ক্ষমতাসীন আল-সাবাহ পরিবার দ্বারা শাসিত হয়ে আসছে, যা স্থিতিশীলতা এবং ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করেছে। সরকার বেসরকারি খাতকে উৎসাহ দেওয়া এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। কুয়েত আঞ্চলিক বিরোধেও জড়িত থাকেনি, যা স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করেছে।
কুয়েতের ক্ষুদ্র জনসংখ্যা
কুয়েতের জনসংখ্যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ছোট। ২০১৯ সালের হিসাবে, কুয়েতের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৪৩ লাখ, যা বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। জনসংখ্যা কম হওয়ার কারণে কুয়েতের জনঘনত্বও অনেক কম, মাত্র প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৭৮ জন। এত কম জনসংখ্যার কারণে কুয়েতে প্রচুর পরিমাণে খোলা জায়গা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। ফলে কুয়েতের মাথাপিছু আয়ও বিশ্বের অন্যতম উচ্চ।
আন্তর্জাতিক বাজারে কুয়েতী দিনারের চাহিদা
আন্তর্জাতিক বাজারে কুয়েতী দিনারের চাহিদা বেশি থাকার কারণ খুঁজছো? কুয়েতের টাকার দাম ডলারের থেকে বেশি হওয়ার কারণটা তোমাকে জানাই। কুয়েতের টাকার নাম কুয়েতী দিনার। সবথেকে মূল্যবান মুদ্রাগুলোর তালিকায় অন্যতম হলো কুয়েতী দিনার। আসলে এক মার্কিন ডলারের মূল্য প্রায় 0.30 কুয়েতী দিনারের সমান। অর্থাৎ এক কুয়েতী দিনার প্রায় 3.30 ডলারের সমান। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে কুয়েতী দিনারের চাহিদা অনেক বেশি।
Leave a Reply