নবাব সিরাজউদ্দৌলা পোর্ট উইলিয়াম দূর্গ কেন আক্রমন করেন? | ইতিহাসের গল্প

নবাব সিরাজউদ্দৌলা পোর্ট উইলিয়াম দূর্গ কেন আক্রমন করেন? | ইতিহাসের গল্প

পলাশীর যুদ্ধ ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল যা ভারতের ভাগ্যকে চিরকালের জন্য পরিবর্তন করে দিয়েছিল। এই যুদ্ধে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিজয় ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনা করেছিল, যা দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়েছিল।

এই ব্লগ পোস্টে, আমি পলাশীর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, এর কারণ এবং এর পরিণতিগুলি অনুসন্ধান করব। আমি পোর্ট উইলিয়াম দুর্গের গুরুত্ব এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলার দ্বারা এটি আক্রমণের কারণগুলিও পরীক্ষা করব। অবশেষে, আমি পলাশীর যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলি এবং এটি কীভাবে ভারতের ইতিহাসের গতিপথকে আকৃতি দিয়েছিল তা আলোচনা করব।

প্লাসি যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

আমি যখন অনুসন্ধানে ছিলাম, তখন আমার মনোযোগ একটি মূল প্রশ্নে পড়ে গিয়েছিল। সেটি হলো, নবাব সিরাজউদ্দৌলা কেন পোর্ট উইলিয়াম দুর্গ আক্রমণ করেন?

ইতিহাসে ফিরে গেলে দেখা যায়, ১৭৫৬ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলকাতার দক্ষিণে পোর্ট উইলিয়াম দুর্গ স্থাপন করে। এই দুর্গটি কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যক্রম রক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এটি নবাবের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে মনে করা হয়েছিল।

নবাব সিরাজউদ্দৌলা দুর্গটির নির্মাণের বিরোধিতা করেছিলেন এবং ব্রিটিশদের এটি ভেঙে ফেলার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোম্পানি তাতে রাজি হয়নি। এর ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।

১৭৫৬ সালের জুন মাসে, নবাব একটি বৃহৎ বাহিনী নিয়ে পোর্ট উইলিয়াম দুর্গ আক্রমণ করেন। দুর্গটি শক্তভাবে সুরক্ষিত ছিল এবং নবাবের বাহিনী এটি দখল করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু এই ঘটনা ব্রিটিশ এবং নবাবের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়।

পোর্ট উইলিয়াম দুর্গ আক্রমণ প্লাসি যুদ্ধের প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি ছিল। এই যুদ্ধে ব্রিটিশরা নবাবকে পরাজিত করে এবং বাংলায় তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করে।

পোর্ট উইলিয়াম দুর্গের অবস্থান এবং গুরুত্ব

পোর্ট উইলিয়াম দুর্গ ছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দ্বারা নির্মিত একটি দুর্গ, যা বর্তমানে কলকাতার একটি অংশ। এটি হুগলি নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত ছিল এবং কোম্পানির বাণিজ্য এবং সামরিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। দুর্গটি 1696 সালে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি কোম্পানির প্রথম স্থায়ী বসতি ছিল।

See also  মেরি কুরি কেন বিখ্যাত? – তেজস্ক্রিয়তা ও নোবেল পুরস্কারে তাঁর অসাধারণ অবদান

দুর্গটি কলকাতার প্রতিরক্ষার জন্য এবং হুগলি নদীর নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি একটি বড় এবং শক্তিশালী দুর্গ ছিল, যা 200টিরও বেশি কামান দিয়ে সজ্জিত ছিল। দুর্গটিতে বেশ কয়েকটি সৈন্যদলও মোতায়েন করা হয়েছিল, যা শহরকে আক্রমণকারী বাহিনী থেকে রক্ষা করতে সক্ষম ছিল।

দুর্গটি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শক্তির প্রতীক ছিল এবং এটি ভারতে কোম্পানির প্রভাব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এটি পরবর্তীতে ব্রিটিশ রাজের যুগে ভারতের রাজধানী হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

নবাব সিরাজউদ্দৌলার পোর্ট উইলিয়াম দুর্গ আক্রমণের কারণ

নবাব সিরাজউদ্দৌলার পোর্ট উইলিয়াম দুর্গ আক্রমণের পেছনে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কারণ। প্রথমত, ব্রিটিশদের করত অস্বীকার: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করার জন্য কর পরিশোধে অস্বীকার করেছিল। এটি নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে রুষ্ট করে এবং তিনি তাদের ব্যবসা কার্যকলাপ বন্ধ করার নির্দেশ দেন।

দ্বিতীয়ত, ফোর্ট উইলিয়ামের দুর্গায়ন: ব্রিটিশরা পোর্ট উইলিয়ামে একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিল, যা নবাবের সন্দেহের কারণ হয়েছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন যে দুর্গটি তাদের সামরিক শক্তি বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হবে এবং এটি তার শাসনকে হুমকি হিসাবে দেখেছিলেন।

তৃতীয়ত, মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা: মীরজাফর, নবাবের সেনাপতি, ব্রিটিশদের সাথে মিলে গিয়েছিলেন। তিনি নবাবকে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন এবং তাঁর সেনাবাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে ব্রিটিশদের তথ্য দিয়েছিলেন। এই বিশ্বাসঘাতকতার ফলে নবাবের পক্ষে যুদ্ধে জয়ী হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

অবশেষে, ব্রিটিশদের শক্তি: ব্রিটিশদের নৌসেনা এবং অস্ত্র ছিল নবাবের সেনাবাহিনীর চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। তাদের কামান এবং জাহাজ নবাবের বাহিনীর চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর ছিল, যা তাদের পোর্ট উইলিয়াম দুর্গ দখল করতে সাহায্য করেছিল।

আক্রমণের পরিণতি

মেজাজি নওয়াব সিরাজউদ্দৌলা বিদেশিদের ব্যবসায়িক কার্যকলাপ এবং ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক প্রভাবের দ্বারা ক্রমশই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন। তিনি বিশেষভাবে পোর্ট উইলিয়াম দুর্গ দ্বারা হুমকি অনুভব করেছিলেন, যা ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলকাতায় নির্মাণ করেছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন যে দুর্গটি একটি সামরিক হুমকি তৈরি করেছে এবং তার প্রদেশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে রয়েছে।

See also  বাঙালি জাতির উৎপত্তি কোন জনপদে? ইতিহাসের রহস্য উন্মোচন

নবাব সিরাজউদ্দৌলার উদ্বেগগুলি অমূলক ছিল না। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্রমবর্ধমান একটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ছিল এবং তারা ভারতের বাণিজ্য এবং রাজনীতিতে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে আগ্রহী ছিল। পোর্ট উইলিয়াম দুর্গটি তাদের প্রভাব প্রসারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি হিসাবে কাজ করতে পারে।

এইসব কারণে, নবাব সিরাজউদ্দৌলা ১৭৫৬ সালে পোর্ট উইলিয়াম দুর্গ আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে দুর্গ দখল করা তার স্বাধীনতা এবং তার প্রদেশকে বিদেশী আগ্রাসন থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয়।

প্লাসি যুদ্ধের প্রভাব

পলাশির যুদ্ধের ফলস্বরূপ বাংলায় ঘটে যায় ব্যাপক পরিবর্তন। ব্রিটিশরা এই যুদ্ধে জয়লাভের পর নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে ক্ষমতাচ্যুত করে তাঁর জামাতা মীর জাফরকে নবাব পদে বসায়। এই ঘটনার ফলে বাংলায় ব্রিটিশদের প্রভাব ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।

ব্রিটিশরা বাংলায় তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য পোর্ট উইলিয়াম নামে একটি দুর্গ নির্মাণ করে। এই দুর্গ নির্মাণের ফলে বাংলার অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। ব্রিটিশরা এই দুর্গের মাধ্যমে বাংলার সমুদ্রবন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং বাংলার বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর নিজেদের একচেটিয়া প্রতিষ্ঠা করে।

পোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মাণের ফলে বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বদলে যায়। এই দুর্গ নির্মাণের ফলে ব্রিটিশদের বাংলায় সামরিক উপস্থিতি আরো দৃঢ় হয়। এই দুর্গের মাধ্যমে ব্রিটিশরা বাংলার রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ করা শুরু করে এবং বাংলার শাসনব্যবস্থায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে।

Tonmoy Avatar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *