আমি আজকে আপনাদের সঙ্গে একটি খুব আকর্ষণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। আলোচনা করবো বাংলা ভাষায় ইংরেজি শব্দটিকে কেন ‘ইংরেজি’ বলা হয়। আমরা প্রায়শই শুনে থাকি বাংলা ভাষার ওপর ফার্সি ভাষার প্রভাব রয়েছে। কিন্তু কীভাবে এবং কেন এই প্রভাব পড়লো, সে সম্পর্কে আজকে আমরা জানবো। আমি আপনাদের বলবো ফার্সি ভাষার প্রভাবে আমাদের বাংলা ভাষায় কীভাবে ‘ইংরেজি’ শব্দটি এসেছে। জানবো ‘ইংরেজি’ শব্দের আদতে উৎপত্তি কী। জানবো বাংলা সাহিত্যে কীভাবে এই শব্দটির ব্যবহার হয়েছে। এ ছাড়া, অন্যান্য ভাষায় ইংরেজি শব্দটি কীভাবে বলা হয়, সে সম্পর্কেও জানবো। সবশেষে, এই আলোচনার একটি উপসংহার টানবো। আশা করি আজকের আলোচনা আপনাদের ভালো লাগবে।
বাংলা ভাষায় ইংরেজিকে ‘ইংরেজি’ বলা হওয়ার কারণ
যখনই আমরা ইংরেজি বলতে যাই, প্রথমে আমাদের মুখে উচ্চারিত হয় ‘ইংরেজি’। কিন্তু আসলে কেন এই ভাষাকে আমরা ‘ইংরেজি’ বলি, কখনও ভেবে দেখেছেন? আজকে আমি আপনাদের সেই রহস্যই জানাব। বর্তমানে ইংরেজি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কথ্য এবং লিখিত ভাষাগুলোর একটি। বিশ্বের প্রায় ১৪০ টি দেশের সরকারি ভাষা ইংরেজি। তবে সব জায়গাতেই এর উচ্চারণ এক রকম নয়। আমরা বাংলা ভাষায় এই ভাষাকে ‘ইংরেজি’ বলি কারণ, ইংরেজ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ‘ইংল্যান্ড’-এর নাম থেকে। ইংল্যান্ড অঞ্চল থেকে আসা লোকজনদেরই ইংরেজ বলা হয়। আর ইংরেজদের ভাষাই ইংরেজি। বাংলা ভাষায় ‘জি’ শব্দটি যোগ করে কোনো বিশেষ্য বা বিশেষণ থেকে বিশেষ্য তৈরি করা হয়। যেমন- দেশ থেকে দেশী, গ্রাম থেকে গ্রামী, শহর থেকে শহরী ইত্যাদি। তেমনিভাবে ‘ইংরেজ’ শব্দ থেকেও ‘ইংরেজি’ শব্দটি এসেছে।
ফার্সি ভাষার প্রভাব
ফার্সি ভাষা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। মুসলিম শাসনামলে ফার্সি ছিল আদালতের, প্রশাসনের এবং শিক্ষার ভাষা। এই সময়কালে, অনেক ফার্সি শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবেশ করে। এ러한 শব্দগুলি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেমন সরকার, সাহিত্য, সংগীত এবং দৈনন্দিন জীবন।
বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। অনুমান করা হয় যে বাংলা ভাষার প্রায় ১৫% শব্দ ফার্সি উৎসের। এই শব্দগুলি প্রায়শই সরকারি, প্রশাসনিক এবং আইনি বিষয়গুলির সাথে সম্পর্কিত। উদাহরণস্বরূপ, “সরকার,” “আদালত,” এবং “আইন” শব্দগুলি সবই ফার্সি উৎসের।
বাংলা সাহিত্যেও দেখা যায়। মধ্যযুগে, অনেক বাংলা কবি এবং লেখক তাদের রচনায় ফার্সি শব্দ এবং কবিতার ছন্দ ব্যবহার করতেন। উদাহরণস্বরূপ, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম মহান কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় প্রায়শই ফার্সি শব্দ এবং রূপক ব্যবহার করতেন।
বাংলা সংগীতেও লক্ষ্য করা যায়। মুসলিম শাসনামলে, ফার্সি সঙ্গীত বাংলা সঙ্গীতের উপর একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। এই সময়কালে, বাংলা সঙ্গীতে অনেক ফার্সি রাগ এবং সুর প্রবেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলা সঙ্গীতের অন্যতম জনপ্রিয় রাগ, “ভৈরব,” ফার্সি উৎসের।
বাংলা দৈনন্দিন জীবনেও দেখা যায়। অনেক বাংলা শব্দ, যেমন “পাঞ্জা,” “রোজ,” এবং “সাবান,” ফার্সি উৎসের। এছাড়াও, বাংলা রান্নায় অনেক ফার্সি খাবার রয়েছে, যেমন “পোলাও,” “বরিয়ানি,” এবং “কাবাব।”
ইংরেজ শব্দের উৎপত্তি
ইংরেজি শব্দের উৎপত্তি জানার আগে আমাদের অবশ্যই জানতে হবে যে ইংল্যান্ডের লোকেদের আগে ‘এ্যাংলো সেক্সন’ নামে ডাকা হতো। ‘এ্যাংলো’ শব্দটি আসে একটি জার্মানিক গোত্র ‘এ্যাংলি’ থেকে, যারা ৫ম শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে এসেছিল। এই গোত্রের নাম সম্ভবত এসেছে ‘এ্যাঙ্গেল’ নামক একটি অঞ্চল থেকে, যা বর্তমানে জার্মানির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। যখন এই এ্যাংলো সেক্সনরা ইংল্যান্ডে এসেছিল, তখন তারা সেখানে বসবাসকারী কেল্টিক লোকেদের সাথে মিশে গিয়েছিল এবং তাদের ভাষাও একটি মিশ্র ভাষায় পরিণত হয়েছিল। এই মিশ্র ভাষাই পরবর্তীতে ‘ইংলিশ’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। তাই আমরা দেখতে পাই যে ‘ইংরেজি’ শব্দটি মূলত এসেছে ‘এ্যাংলো’ শব্দ থেকে, যা আবার এসেছে একটি জার্মানিক গোত্র ‘এ্যাংলি’ থেকে।
বাংলা সাহিত্যে ইংরেজি শব্দের ব্যবহার
আমাদের ভাষায় এমন অনেক শব্দ রয়েছে যেগুলো বিদেশি ভাষা থেকে এসেছে। এর মধ্যে ইংরেজি শব্দগুলো অন্যতম। কিছু কিছু ইংরেজি শব্দ বাংলা ভাষায় এতটাই গভীরভাবে ঢুকে গেছে যে আমরা প্রায়ই ভুলেই যাই এগুলো আসলে ইংরেজি। যেমন, ‘টেবিল’, ‘চেয়ার’, ‘স্কুল’, ‘কলেজ’ ইত্যাদি।
আমাদের ভাষায় এতগুলো ইংরেজি শব্দ কেন ব্যবহৃত হয়, তার কারণগুলো অনেক। এর একটি কারণ হলো ঔপনিবেশিক আমল। ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলা ভাষায় ইংরেজি ভাষার প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়ে। সেই সময় অনেক ইংরেজি শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবেশ করে।
আরেকটি কারণ হলো আধুনিকীকরণ। বাংলা ভাষায় আধুনিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়ের শব্দভাণ্ডার তৈরি করতে অনেক ইংরেজি শব্দ ধার করা হয়েছে। যেমন, ‘কম্পিউটার’, ‘ইন্টারনেট’, ‘মোবাইল’, ‘হাসপাতাল’ ইত্যাদি।
অন্যদিকে, কিছু ইংরেজি শব্দ আমাদের ভাষায় সরাসরি অনুবাদ করার জন্য উপযুক্ত শব্দ নেই। তাই সেগুলোকে অপরিবর্তিতই ব্যবহার করা হয়। যেমন, ‘স্পোর্টস’, ‘ক্রিকেট’, ‘ফুটবল’ ইত্যাদি।
এভাবে আমাদের ভাষায় ইংরেজি শব্দের প্রবেশ এবং ব্যবহার একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া। এটি আমাদের ভাষাকে সমৃদ্ধ এবং আধুনিক করে তুলছে। তবে আমাদের মনে রাখা উচিত যে, বাংলা ভাষার মূল চরিত্র এবং পরিচয় বজায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যান্য ভাষায় ইংরেজিকে বলা হয় কি
ইংরেজি ভাষাটি বিশ্বের সর্বাধিক কথিত ভাষাগুলোর মধ্যে একটি। এটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তারের সাথে সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলা ভাষায়, আমরা ইংরেজি ভাষাকে “ইংরেজি” বলি। কিন্তু অন্যান্য ভাষায় ইংরেজি ভাষাটিকে কী বলা হয়, তা কি তুমি জানো? চলো জেনে নেওয়া যাক:
স্প্যানিশ: ইংরেজকে স্প্যানিশ ভাষায় “ইঙ্গলেস” বলা হয়।
ফরাসি: ফরাসি ভাষায় ইংরেজিকে “আংলে” বলা হয়।
জার্মান: জার্মান ভাষায় ইংরেজিকে “ইংলিশ” বলা হয়।
চীনা: চীনা ভাষায় ইংরেজিকে “ইংয়ু” বলা হয়।
জাপানি: জাপানি ভাষায় ইংরেজিকে “ইঙ্গুরিশু” বলা হয়।
আরবি: আরবি ভাষায় ইংরেজিকে “ইংলিজি” বলা হয়।
রুশ: রুশ ভাষায় ইংরেজিকে “অ্যাংলিস্কি” বলা হয়।
হিন্দি: হিন্দি ভাষায় ইংরেজিকে “অ্যাংরেজি” বলা হয়।
এভাবেই বিভিন্ন ভাষায় ইংরেজি ভাষাটিকে বিভিন্ন রকম ভাবে বলা হয়। তবে সবগুলোর মধ্যে ইংরেজি শব্দটির মূল উৎস হলো জার্মান শব্দ “ইংলিশ”।
উপসংহার
ইংরেজি ভাষাটি বিশ্বের সর্বাধিক কথিত ভাষাগুলোর মধ্যে একটি। এটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তারের সাথে সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলা ভাষায়, আমরা ইংরেজি ভাষাকে “ইংরেজি” বলি। কিন্তু অন্যান্য ভাষায় ইংরেজি ভাষাটিকে কী বলা হয়, তা কি তুমি জানো? চলো জেনে নেওয়া যাক:
স্প্যানিশ: ইংরেজকে স্প্যানিশ ভাষায় “ইঙ্গলেস” বলা হয়।
ফরাসি: ফরাসি ভাষায় ইংরেজিকে “আংলে” বলা হয়।
জার্মান: জার্মান ভাষায় ইংরেজিকে “ইংলিশ” বলা হয়।
চীনা: চীনা ভাষায় ইংরেজিকে “ইংয়ু” বলা হয়।
জাপানি: জাপানি ভাষায় ইংরেজিকে “ইঙ্গুরিশু” বলা হয়।
আরবি: আরবি ভাষায় ইংরেজিকে “ইংলিজি” বলা হয়।
রুশ: রুশ ভাষায় ইংরেজিকে “অ্যাংলিস্কি” বলা হয়।
হিন্দি: হিন্দি ভাষায় ইংরেজিকে “অ্যাংরেজি” বলা হয়।
এভাবেই বিভিন্ন ভাষায় ইংরেজি ভাষাটিকে বিভিন্ন রকম ভাবে বলা হয়। তবে সবগুলোর মধ্যে ইংরেজি শব্দটির মূল উৎস হলো জার্মান শব্দ “ইংলিশ”।
Leave a Reply