জলকে কেন সার্বজনীন দ্রাবক বলা হয়?

জলকে কেন সার্বজনীন দ্রাবক বলা হয়?

দ্রাবক একটি পদার্থ যা অন্য পদার্থকে দ্রবীভূত করতে পারে। জলকে সর্বজনীন দ্রাবক হিসাবে অভিহিত করা হয়, যার অর্থ এটি পৃথিবীতে পাওয়া সর্বাধিক পদার্থকে দ্রবীভূত করতে পারে। এই নিবন্ধে, আমি আলোচনা করব যে কেন জলকে সর্বজনীন দ্রাবক বলা হয়, জলের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি যা তাকে এত কার্যকর দ্রাবক হিসাবে গড়ে তোলে এবং এর কার্যকারিতা কীভাবে বিভিন্ন দ্রাবকের সাথে তুলনা করে। আমি রসায়নিক বন্ধন এবং আন্তঃআণবিক শক্তির ভূমিকাও পরীক্ষা করব যা দ্রাবকতার পিছনে রয়েছে, সর্বজনীন দ্রাবকের গুরুত্ব এবং এর প্রয়োগ এবং সর্বজনীন দ্রাবকের সীমাবদ্ধতা এবং বিকল্পগুলিও পরীক্ষা করব। এই নিবন্ধটি আপনাকে জলের দ্রাবক হিসাবে রসায়নের একটি গভীর বোঝার প্রদান করবে এবং সর্বজনীন দ্রাবক এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে আপনার উপলব্ধি বাড়াবে।

সার্বজনীন দ্রাবক কী এবং কেন একে বলা হয়?

সার্বজনীন দ্রাবক হলো এমন একটি দ্রাবক যা অন্য সকল পদার্থকে দ্রবীভূত করতে সক্ষম। সার্বজনীন দ্রাবক হিসেবে জলকেই স্বীকৃত। কারণ, জল প্রায় সব পদার্থকেই দ্রবীভূত করতে পারে। অন্যান্য কোনো দ্রাবক এত বেশি পদার্থকে দ্রবীভূত করতে পারে না। জলের অণুতে আছে ধনাত্মক চার্জিত হাইড্রোজেন আয়ন (H+) ও ঋণাত্মক চার্জিত হাইড্রক্সিল আয়ন (OH-)। এদের চার্জের কারণে জলের অণু পোলার হয়। অর্থাৎ, জলের একটি অংশ হাইড্রোজেন আয়নের কারণে ধনাত্মক চার্জিত হয় এবং অপর অংশ হাইড্রক্সিল আয়নের কারণে ঋণাত্মক চার্জিত হয়। ফলে জল আয়নযুক্ত পদার্থ ও পোলার পদার্থকে তাদের অণুকে আচ্ছাদিত করে ঘিরে রেখে দ্রবীভূত করে। তাছাড়া, জলের স্ফুটনাংক উঁচু হওয়ার ফলে তা বেশিরভাগ পদার্থকে তরল অবস্থায় রাখতে পারে। তাই জলকে সার্বজনীন দ্রাবক বলা হয়ে থাকে।

জলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য যা তাকে সার্বজনীন দ্রাবক করে তোলে

সার্বজনীন দ্রাবক হলো এমন একটি দ্রাবক যা অন্য সকল পদার্থকে দ্রবীভূত করতে সক্ষম। সার্বজনীন দ্রাবক হিসেবে জলকেই স্বীকৃত। কারণ, জল প্রায় সব পদার্থকেই দ্রবীভূত করতে পারে। অন্যান্য কোনো দ্রাবক এত বেশি পদার্থকে দ্রবীভূত করতে পারে না। জলের অণুতে আছে ধনাত্মক চার্জিত হাইড্রোজেন আয়ন (H+) ও ঋণাত্মক চার্জিত হাইড্রক্সিল আয়ন (OH-)। এদের চার্জের কারণে জলের অণু পোলার হয়। অর্থাৎ, জলের একটি অংশ হাইড্রোজেন আয়নের কারণে ধনাত্মক চার্জিত হয় এবং অপর অংশ হাইড্রক্সিল আয়নের কারণে ঋণাত্মক চার্জিত হয়। ফলে জল আয়নযুক্ত পদার্থ ও পোলার পদার্থকে তাদের অণুকে আচ্ছাদিত করে ঘিরে রেখে দ্রবীভূত করে। তাছাড়া, জলের স্ফুটনাংক উঁচু হওয়ার ফলে তা বেশিরভাগ পদার্থকে তরল অবস্থায় রাখতে পারে। তাই জলকে সার্বজনীন দ্রাবক বলা হয়ে থাকে।

See also  অ্যালকেনকে প্যারাফিন বলা হয় কেন? কারণগুলো জানুন

রসায়নিক বন্ধন এবং আন্তঃআণবিক বল যা দ্রাবকতা নির্ধারণ করে

রসায়নিক বন্ধন এবং আন্তঃআণবিক বল দ্রাবকতার গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক। একটি দ্রাবকের কতটা দ্রাব্য হবে তা নির্ভর করে দ্রাব্য পদার্থের রাসায়নিক বন্ধন এবং দ্রাবকের সাথে আন্তঃআণবিক মিথস্ক্রিয়ার ধরণের উপর। সাধারণত, সমমূহীয় পদার্থগুলি সমমূহীয় দ্রাবকগুলিতে দ্রবীভূত হয় এবং আয়নিক পদার্থগুলি আয়নিক দ্রাবকগুলিতে দ্রবীভূত হয়।

যখন কোনো পদার্থকে তার নিজস্ব ধরণের দ্রাবকে দ্রবীভূত করা হয়, তখন দ্রাব্য পদার্থের রাসায়নিক বন্ধনগুলি দুর্বল হয়ে যায় এবং আন্তঃআণবিক বল দ্রাবক এবং দ্রাব্য পদার্থের মধ্যে নতুন মিথস্ক্রিয়া তৈরি করে। এই নতুন মিথস্ক্রিয়াগুলি দ্রাব্য পদার্থকে দ্রাবকে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে, ফলে দ্রাবণ তৈরি হয়।

যাইহোক, কিছু ক্ষেত্রে, দ্রাব্য পদার্থ এবং দ্রাবকের মধ্যে আন্তঃআণবিক বল খুব দুর্বল হতে পারে। এই ক্ষেত্রে, দ্রাব্য পদার্থ দ্রাবকে দ্রবীভূত হবে না এবং একটি সাসপেনশন বা বিচ্ছুরণ তৈরি করবে। উদাহরণস্বরূপ, তেল পানিতে দ্রবীভূত হবে না কারণ তেল এবং পানির মধ্যে আন্তঃআণবিক বল খুব দুর্বল।

বিভিন্ন দ্রাবকের দ্রাবকতা ক্ষমতার একটি তুলনা

বিভিন্ন দ্রাবকের দ্রাবকতা ক্ষমতা নিয়ে যখন আলোচনা করা হয়, তখন একটা প্রাথমিক প্রশ্ন উঠে আসে সার্বজনীন দ্রাবক কোনটি? দ্রাবকতা ক্ষমতার দিক থেকে সার্বজনীন দ্রাবক হিসেবে জলের জুড়ি নেই। জলের দ্রাবকতা ক্ষমতার পেছনে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। প্রথমত, জল একটি মেরু দ্রাবক। এতে অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেন পরমাণুর মধ্যে একটি আংশিক ঋণাত্মক এবং ধনাত্মক চার্জ রয়েছে। এই চার্জগুলি আয়নিক এবং মেরু যৌগগুলির সাথে পারস্পরিক ক্রিয়া করতে পারে, যা তাদের জলে দ্রবীভূত হতে সাহায্য করে।

দ্বিতীয়ত, জল ছোট, মেরু এবং হাইড্রোজেন বন্ধনে জড়িত হওয়ার ক্ষমতা রাখে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি জলকে বিভিন্ন ধরণের পদার্থ, যেমন লবণ, শর্করা এবং প্রোটিনকে দ্রবীভূত করতে সক্ষম করে। এই হাইড্রোজেন বন্ধনগুলি জলের অণুগুলিকে দ্রবীভূত পদার্থের অণুগুলির সাথে পারস্পরিক ক্রিয়া করতে এবং তাদের দ্রবীভূত করতে সহায়তা করে।

See also  কোষের রান্নাঘর কী এবং এর কাজ কী? জেনে নিন

তৃতীয়ত, জলের উচ্চ তলীয় τάড়ন রয়েছে। এটি এমন একটি পরিমাপ যা কোন তরল কতটা সংকুচিত হতে পারে তা নির্দেশ করে। জলের উচ্চ তলীয় τάড়ন এটিকে বিভিন্ন পদার্থকে দ্রবীভূত করতে সক্ষম করে, কারণ এটি তাদের অণুগুলির মধ্যে প্রবেশ করতে এবং তাদের আলাদা করতে পারে।

এইসব কারণের সমন্বয় জলকে বিশ্বের অন্য যেকোনও দ্রাবকের তুলনায় বেশি দ্রাবকতা ক্ষমতা সম্পন্ন করে। यही কാരণ যে জলকে প্রায়ই “সার্বজনীন দ্রাবক” হিসাবে উল্লেখ করা হয়। তবে, দ্রাবকতা কেবল দ্রাবক এবং দ্রবীভূত পদার্থের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়ার উপর নির্ভর করে না, তা তাপমাত্রা, চাপ এবং অন্যান্য কারণের উপরও নির্ভর করে।

একটি সার্বজনীন দ্রাবকের গুরুত্ব এবং এর প্রয়োগ

সার্বজনীন দ্রাবক একটি পদার্থ যা অন্য যে কোনো পদার্থকে দ্রবীভূত করতে পারে৷ জলকে সার্বজনীন দ্রাবক বলা হয় কারণ এটি প্রায় সব ধরনের পদার্থ দ্রবীভূত করতে পারে, যেমন লবণ, চিনি, অ্যাসিড ও ক্ষার। পানির এই অনন্য ক্ষমতা এর ধ্রুবীয় প্রকৃতির কারণে। অর্থাৎ পানির অণুতে ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক চার্জ থাকে, যা এটিকে অন্যান্য পদার্থের সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে এবং তাদের ভাঙতে সক্ষম করে।

এই সার্বজনীন দ্রাবক হিসাবে জলের গুরুত্ব অপরিসীম। জীবন এতে নির্ভরশীল, কারণ এটি আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও খনিজ দ্রবীভূত করে। এটি শিল্পের জন্যও জরুরি, কারণ এটি বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় দ্রাবক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, জল পরিবেশের জন্য অপরিহার্য, কারণ এটি পুকুর, নদী এবং মহাসাগরের বাস্তুতন্ত্রকে সমর্থন করে।

সার্বজনীন দ্রাবক হিসাবে জলের বৈশিষ্ট্যগুলিই আমাদের জীবন এবং গ্রহের জন্য এটিকে এত গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। এটি জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় পদার্থ, শিল্প কার্যক্রমের জন্য একটি মূল উপাদান এবং আমাদের পরিবেশের ভিত্তি।

সার্বজনীন দ্রাবকের সীমাবদ্ধতা এবং বিকল্প

সার্বজনীন দ্রাবক হল এমন একটি দ্রাবক যা প্রায় সব ধরনের পদার্থকে দ্রবীভূত করতে পারে। তরল অ্যামোনিয়াকে সার্বজনীন দ্রাবক বলা হয় কারণ এটি অজৈব ও জৈব উভয় ধরনের পদার্থকেই দ্রবীভূত করতে পারে। তবে সার্বজনীন দ্রাবকেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন, এটি কয়েকটি অজৈব যৌগকে দ্রবীভূত করতে পারে না, যেমন সিলিকা এবং অ্যালুমিনা। এছাড়াও, এটি উচ্চ তাপমাত্রায় অস্থির হয়ে যায় এবং এর বাষ্প বিষাক্ত হতে পারে।

See also  তড়িৎ ঋণাত্মকতা: কেন একে পর্যায়বৃত্ত ধর্ম বলা হয়?

এই সীমাবদ্ধতার কারণে, অন্যান্য দ্রাবকগুলি সার্বজনীন দ্রাবকের বিকল্প হিসাবে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ডিমেথিল সালফক্সাইড (ডিএমএসও) একটি অ্যাপ্রোটিক দ্রাবক যা অজৈব এবং জৈব উভয় ধরনের পদার্থকেই দ্রবীভূত করতে পারে। এটি তরল অ্যামোনিয়ার চেয়ে কম বিষাক্ত এবং উচ্চ তাপমাত্রায় স্থিতিশীল। অন্য একটি বিকল্প হল ডাইম্যাথিলফর্মামাইড (ডিএমএফ), যা জৈব পদার্থকে দ্রবীভূত করতে বিশেষভাবে উপযোগী।

এই বিকল্প দ্রাবকগুলি সার্বজনীন দ্রাবকের কিছু সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারে, তবে প্রতিটি দ্রাবকের নিজস্ব অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত দ্রাবক নির্বাচন করার জন্য এই বৈশিষ্ট্যগুলি বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।

Payel Avatar

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *